নয়াদিল্লি: অসংসদীয় শব্দ প্রয়োগের জন্য লোকসভা থেকে বহিষ্কৃত হয়েছেন তিনি। আনা হয়েছে স্বাধিকার ভঙ্গের অভিযোগও। স্বাধীন ভারতের রাজনীতির ইতিহাসে অধীররঞ্জন চৌধুরীই একমাত্র বিরোধী দলনেতা যার বিরুদ্ধে নেওয়া হল দৃষ্টান্তমূলক শাস্তিদানের সিদ্ধান্ত। শনিবার নয়াদিল্লিতে দলীয় সদর কার্যালয়ে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে কংগ্রেসের লোকসভা দলনেতা অধীর চৌধুরীর দাবি, ‘লোকসভা অধ্যক্ষের হাতে পূর্ণ ক্ষমতা দেওয়া আছে, কোনও শব্দকে অসংসদীয় বা আক্রমণাত্মক বলে মনে হলে সেই শব্দগুলিকে সংসদের কার্যবিবরণী থেকে বাদ দেওয়ার। কিন্তু এক্ষেত্রে তা করা হয়নি। আমার ব্যাখ্যাও শোনা হয়নি।’ অধীরের অভিযোগ, ‘বিষয়টি এমন যেন প্রথমেই আমাকে ফাঁসি দেওয়া হয়েছে, পরে সব বিচার করা হবে। কী অদ্ভূত পরিস্থিতি! সভার চেয়ারের প্রতি সম্মান জানিয়েই বলতে চাই, যে ধরণের ঘটনা ঘটছে তা আমাদের দেশের সংসদীয় গণতন্ত্রের পক্ষে অত্যন্ত লজ্জার।’
তবে এরই পাশাপাশি অধীর স্পষ্ট বার্তা জারি করেছেন যে কোনও পর্যায়েই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির উদ্দেশ্যে বলা নিজের মন্তব্যের জন্য তিনি ক্ষমা চাইবেন না, কারণ তিনি কোনও সংসদ সদস্যকে অপমান করেননি। এর পাশাপাশি নিজের উপর নেমে আসা অনির্দিষ্টকালীন সাসপেনশনকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে আদালতের দ্বারস্থও হতে পারেন তিনি, শনিবার নিজের মুখেই তা জানিয়ে দিয়েছেন অধীর৷ কার্যত বিচার না করেই তাকে ফাঁসিতে ঝুলিয়েছে মোদি সরকার, লোকসভায় নিজের সাসপেনশনকে ব্যাখ্যা করতে গিয়ে শনিবার নয়াদিল্লিতে কংগ্রেস সদর দপ্তরে আয়োজিত সাংবাদিক সম্মেলনে এমনই অভিযোগ করলেন বহরমপুর সাংসদ, লোকসভায় কংগ্রসের দলনেতা অধীর চৌধুরী। এই মর্মেই অধীর সাফ জানিয়েছেন, লোকসভার প্রিভিলেজ কমিটিতে মোদি সরকারের তরফে জমা দেওয়া অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তাঁকে তলব করা হলে তিনি অবশ্যই কমিটির সামনে উপস্থিত হবেন।
উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার লোকসভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে মণিপুর ইস্যুকে হাতিয়ার করে সরাসরি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে নিশানা করেছিলেন কংগ্রেসের লোকসভার দলনেতা অধীর চৌধুরী। প্রধানমন্ত্রীর নীরবতাকে কাঠগড়ায় তুলে ব্যাংক প্রতারণায় অভিযুক্ত পলাতক নীরব মোদির প্রসঙ্গও তুলে ধরেন অধীর। একই সঙ্গে তিনি টেনে আনেন মহাভারতের অন্ধ রাজা ধৃতরাষ্ট্রের রাজত্বে হওয়া দ্রৌপদীর বস্ত্রহরণের প্রসঙ্গও। মণিপুরের মহিলাদের উপরে হওয়া নৃশংস অত্যাচারের প্রসঙ্গকে ব্যাখ্যা করতে গিয়ে অধীর বলেন, ‘রাজারা অন্ধ থাকলে দ্রৌপদীদের বস্ত্রহরণ হবেই।‘ এরপরে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের সময়ে বিরোধীরা ওয়াক আউট করে। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের পরেই বিরোধী শূন্য লোকসভায় অধীরের বিরুদ্ধে অসংসদীয় আচরণের অভিযোগে স্বাধিকার ভঙ্গের প্রস্তাব নিয়ে আসে সরকারপক্ষ। সঙ্গে সঙ্গেই অধীরের সাসপেনশনের কথা জানান লোকসভার অধ্যক্ষ। একইসঙ্গে জানানো হয়, লোকসভার প্রিভিলেজ কমিটি অধীরের বিরুদ্ধে নিয়ে আসা অভিযোগ বিবেচনা করবে। ততদিন পর্যন্ত তিনি সাসপেন্ডই থাকবেন।
তাত্পর্যপূর্ণ হল, বিরোধী শিবিরের একের পর এক প্রতিবাদী সাংসদকে এইভাবে সাসপেন্ড করার পিছনে শাসক শিবিরের বড় চক্রান্তও দেখতে পাচ্ছেন ইন্ডিয়া জোটের প্রতিনিধিদের একটা বড় অংশ৷ রাজ্যসভায় আপ সাংসদ সঞ্জয় সিং এবং রাঘব চাড্ডাকে সাসপেন্ড করা হয়েছে৷ দুজনে ফের কবে সভায় যোগ দিতে পারবেন তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ আছে বিরোধী শিবিরে৷ এর পাশাপাশি ডেরেক ও ব্রায়েন এবং জয়রাম রমেশের বিরুদ্ধেও প্রিভিলেজ কমিটির কাছে অভিযোগ জানানো হয়েছে ট্রেজারি বেঞ্চের তরফে। এরপরে এসেছে অধীর চৌধুরীর সাসপেনশন। সঞ্জয় সিং, রাঘব চাড্ডা এবং অধীর চৌধুরী তিনজনেই অত্যন্ত সক্রিয় সাংসদ, সরকারের বিরুদ্ধে সদা সোচ্চার৷ সংসদের শীতকালীন অধিবেশন শুরু হবে নভেম্বরের শেষে৷ তার আগে বিরোধী শিবিরের সাসপেন্ডেড এই তিন সাংসদ আদৌ সংসদে ফিরতে পারবেন কি না, প্রশ্ন রাজনৈতিক মহলে। এর উপরে ডেরেক ও জয়রাম রমেশও যদি সাসপেন্ড হন, তাহলে রীতিমত চাপে পড়বে বিরোধী শিবির, এমনটাই মনে করছে রাজনৈতিক মহলের একটা বড় অংশ। এই প্রসঙ্গে শনিবার মোদি সরকারকে নিশানা করে অধীর চৌধুরীর দাবি, ‘আমার মনে হয় শাসক দলের মুখ্য উদ্দেশ্য হল বিরোধী শিবিরের প্রতিবাদী কন্ঠগুলিকে যেভাবেই হোক রোধ করা। এই কারণেই বিভিন্ন অসংসদীয় পন্থার আশ্রয় নেওয়া হচ্ছে৷ এর দ্বারা প্রমাণিত হচ্ছে ইন্ডিয়া জোটকে ভয় পেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।’