কলকাতা: ‘চোটকে মঞ্চস্থ করে জনগণের আবেগকে নিজের কাজে লাগাচ্ছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।’ পঞ্চায়েত ভোটের প্রচারে গিয়ে উত্তরবঙ্গ সফরের শেষদিনে কপ্টার দুর্যোগের মুখে পড়ায় পা এবং কোমরে চোট পান মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর চোট পাওয়া প্রসঙ্গে এমনই মন্তব্য করলেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর রঞ্জন চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করে সুনাম অর্জন করেছেন। এর আগেও, নির্বাচনি প্রচারের সময় তিনি আহত হন। সেই সময় আমি সংবাদমাধ্যমকে বলেছিলাম, নির্বাচন শেষ হলেই তিনি পায়ে হাঁটতে সক্ষম হবেন।’
প্রসঙ্গত, উত্তরবঙ্গ সফরের শেষদিনে কপ্টার দুর্যোগের মুখে পড়ায় পা এবং কোমরে চোট পান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মঙ্গলবার জলপাইগুড়ির ক্রান্তিতে পঞ্চায়েতের প্রচারসভা ছিল মুখ্যমন্ত্রীর। সেখান থেকে সভা শেষ করে কপ্টারে করে বাগডোগরা বিমানবন্দরের উদ্দেশ্যে রওনা হন তিনি। বৈকুণ্ঠপুর জঙ্গলের ওপর দিয়ে ওড়ার সময় আচমকাই দুর্যোগের মুখে পড়ে মুখ্যমন্ত্রীর কপ্টার। আবহাওয়া খারাপ থাকায় কাঁপতে থাকে কপ্টারটি। প্রবল ঝাঁকুনিতে পথ বদলে সেবক এয়ারবেসে কপ্টারটির জরুরি অবতরণ করান পাইলট। সেখানেই কপ্টার থেকে নামতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর চোট লাগে বলে জানা যায়। সেবক এয়ারবেসেই তাঁর প্রাথমিক চিকিৎসা হয়। তারপর সড়কপথে বাগডোগরা বিমানবন্দরে যান মুখ্যমন্ত্রী। সেখান থেকে কলকাতা উড়ে যান। বিকেলে কলকাতা বিমানবন্দরে নামার পর তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় এসএসকেএম হাসপাতালে। মুখ্যমন্ত্রীর জন্য উডবার্ন ওয়ার্ডের কেবিন তৈরি রাখা হয়। সেখানেই পরীক্ষা-নিরীক্ষার যাবতীয় ব্যবস্থা করা হয়। এসএসকেএমে পৌঁছান রাজ্যের স্বাস্থ্যসচিব নারায়ণস্বরূপ নিগম, স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় সহ আরও অনেকে। কপ্টার জরুরি অবতরণ করার পর ফোন করে মুখ্যমন্ত্রীর খবর নেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস।
মমতার শারীরিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর এসএসকেএমের ডিরেক্টর মণিময় বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছিলেন, মুখ্যমন্ত্রীর বাঁ হাঁটুর লিগামেন্টে চোট লেগেছে। চোট রয়েছে তাঁর বাঁ দিকের হিপ জয়েন্টের লিগামেন্টেও। তবে চোট থাকা সত্ত্বেও এসএসকেএমে ভর্তি থাকতে চাইছিলেন না মুখ্যমন্ত্রী। অবশেষে চিকিৎসকদের পরামর্শ নেওয়ার পর গাড়িতে করে বেরিয়ে যান মুখ্যমন্ত্রী। পরদিন অর্থাৎ বুধবার কালীঘাটে মমতার বাড়িতে পৌঁছান এসএসকেএম হাসপাতালের অধিকর্তা। ছিলেন ফিজিক্যাল মেডিসিন বিভাগীয় প্রধান এবং একজন ফিজিও থেরাপিস্টও। প্রায় দু’ঘণ্টা ধরে ফিজিওথেরাপি চলে মুখ্যমন্ত্রীর। হাসপাতাল সূত্রে জানানো হয়, ব্যথা কিছুটা কমলেও যন্ত্রণা যথেষ্টই রয়েছে তাঁর। এক্ষেত্রে তাঁকে বিশ্রামের পরামর্শ দেন চিকিৎসকরা।
প্রসঙ্গত, গত বিধানসভা নির্বাচনের আগেও পায়ে চোট পান মুখ্যমন্ত্রী। সেই চোট নিয়েই গোটা প্রচার পর্ব সারেন তিনি। যদিও তাঁর চোট নিয়ে সেই সময় কটাক্ষ করতে ছাড়েননি বিরোধীরা। ঘটনাচক্রে এবারও পঞ্চায়েত নির্বাচনের প্রচার সেরে ফেরার পথে চোট পান তিনি।