নয়াদিল্লি: ‘কিসের প্রস্তুতি? কিসের ভয়?’ প্রশ্ন শুনেই সুর চড়ালেন বহরমপুর সাংসদ অধীর রঞ্জন চৌধুরী। তারপরেই পালটা তোপ, ‘আমি কোনও মিথ্যে কথা বলেছি নাকি, যে ভয় পাব? যা বলেছি তা বিন্দুমাত্র অসংসদীয় নয়। কোনও অমর্যাদাকর বা অসম্মানজনক মন্তব্য করা আমি পছন্দ করি না। সেদিনও করিনি। তবু আমায় বহিষ্কার করা হল। বুধবার এ নিয়ে যা বলার কমিটিতে বলব।‘ অধীরের বলেন, ‘যে কোনও চ্যালেঞ্জ নিতে আমি সবসময়ই প্রস্তুত। বুধবারের কমিটি বৈঠক নিয়ে কোনও বাড়তি প্রস্তুতি নেই। যা বলেছি রেকর্ডে সবই আছে। তাঁরাই বিচার করুন।‘ বুধবার ৩০ অগাস্ট, প্রিভিলেজ কমিটির বহুচর্চিত বৈঠক। সেখানে সশরীরে হাজির হয়ে আত্মপক্ষ সমর্থন করার ডাক পেয়েছেন বর্ষীয়ান কংগ্রেস সাংসদ, লোকসভা দলনেতা অধীর চৌধুরী। তার আগে এই মর্মেই নিজের অভিব্যক্তি প্রকাশ করলেন পশ্চিমবঙ্গের প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি।
বিগত বাদল অধিবেশনের শেষলগ্নে মণিপুরের ইস্যুতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে ‘অন্ধ রাজা’ এবং ‘নীরব মোদি’ বলে লোকসভায় বেনজির কটাক্ষ করেছিলেন অধীর। এরপর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে আক্রমণ এবং মন্ত্রীদের বিরক্ত করার অভিযোগে লোকসভায় কংগ্রেসের নেতা অধীর রঞ্জন চৌধুরীকে সংসদ থেকে সাসপেন্ড করা হয়। এই প্রথম লোকসভায় কোনও বিরোধী দলনেতাকে সাসপেন্ড করা হল। অধীর চৌধুরীর বিরুদ্ধে স্বাধিকার ভঙ্গের অভিযোগও আনা হয়। সেই সূত্রে গত ১৮ আগস্ট প্রবীন বিজেপি সাংসদ সুশীল কুমার সিং-এর নেতৃত্বাধীন লোকসভার প্রিভিলেজ কমিটির বৈঠকে উত্থাপিত হয় অধীর চৌধুরীর সাসপেনশন ইস্যু। বহরমপুর সাংসদ অধীর রঞ্জন চৌধুরীকে এভাবে লোকসভা থেকে বহিষ্কার করায় তীব্র প্রতিবাদে সরব হয়েছিলেন ‘ইন্ডিয়া’ জোটের প্রতিনিধিরা। এই সূত্রে আগামী ৩০ অগাস্ট সাসপেনশন নিয়ে নিজের বক্তব্য রাখার জন্য প্রিভিলেজ কমিটিতে তলব করা হয়েছে অধীরকে, জানা গিয়েছে সংসদ সূত্রে।
এই প্রসঙ্গে অধীর অবশ্য আগেই জানিয়েছেন, কমিটি ডেকে পাঠালে সংসদীয় রীতিনীতি মেনে অবশ্যই সাড়া দেবেন তিনি। কিন্তু লোকসভায় যা বলেছেন, সে অবস্থান থেকে বিন্দুমাত্র সরবেন না। অধীর চৌধুরী জানিয়েছেন, ‘গোটা বিষয়টি নিয়ে আমি মর্মাহত। আমি প্রধানমন্ত্রীর কাছে শুধুই জানতে চেয়েছিলাম, মণিপুর নিয়ে কেন তিনি নীরব! উলটে তাঁর দলের লোক আমাকে মারতে ছুটে এসেছে। অথচ বহিষ্কার করা হল আমাকেই।‘ অধীর এও জানিয়েছেন, ‘প্রিভিলেজ কমিটির প্রথম বৈঠক সম্পর্কে জানতে পেরেছি। অনেকেই আমার সমর্থনে সরব হয়েছেন, ফোন করে পাশে থাকার বার্তা দিয়েছেন। আমি তাঁদের প্রতি কৃতজ্ঞ।‘ উল্লেখ্য, ১৮ আগস্ট অনুষ্ঠিত কমিটির বৈঠকে প্রাকৃতিক ন্যায় বিচারের নীতি অনুসারে অধীর রঞ্জন চৌধুরীকে তাঁর মামলা উপস্থাপনের সুযোগ দিতে হবে বলে ঐকমত্য তৈরি হয়। তৃণমূল কংগ্রেসের লোকসভা চিফ হুইপ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় এমন অভিমতও ব্যক্ত করেন যে, অধীরকে ইতিমধ্যেই বাদল অধিবেশনের বাকি সময়ের জন্য সাময়িক বরখাস্ত করে শাস্তি দেওয়া হয়েছে এবং তাকে আবার শাস্তি দেওয়ার কোনও যৌক্তিকতা নেই। এক্ষেত্রে শাসক দলীয় প্রতিনিধিদের তরফে সংসদীয় নীতি অনুসরণ করে অধীরকে তলব করার প্রস্তাব রাখা হয়, যাতে সম্মতি দেন কমিটি চেয়ারপার্সন সুশীল কুমার সিং। লোকসভা সচিবালয়ের বিশেষাধিকার ও নীতিশাখার তথ্য অনুসারে, প্রিভিলেজ কমিটির এজেন্ডায় বলা হয়েছে, ‘সাংসদ অধীর রঞ্জন চৌধুরীর মৌখিক প্রমাণ নেওয়া হবে ২০২৩ সালের ৩০ অগাস্ট।‘ এও জানা গিয়েছে, ৩০ অগাস্ট অধীরের বক্তব্য শোনার পরেই অধ্যক্ষ ওম বিড়লার কাছে এই সাসপেনশন প্রত্যাহারের দাবি জানাবে কমিটি।