আলিপুরদুয়ার: বস্তার ভেতর গোল গোল কালচে বীজ। সেই বীজ ঠিক কী কাজে লাগে, সে বিষয়টা কিন্তু পুলিশ বা কাস্টমসের কাছেও স্পষ্ট নয়। আধিকারিকরা শুধু বলতে পারছেন, এই বীজের নাম ইনটাডা রাহেদি। যা মূলত পাওয়া যায় আফ্রিকায়। এক ধরনের গাছের বীজ। মঙ্গলবার নিউ আলিপুরদুয়ার স্টেশন থেকে ২১টি বস্তায় ৪৭ কেজি করে প্রায় ৯৮৭ কেজি সেই বীজ বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে।
আলিপুরদুয়ার (Alipurduar) শহরের স্টেশনগুলি থেকে এর আগে কখনও আফিমের বীজ, কখনও আবার বার্মার সুপারি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। কিন্তু এই ইনটাডা রাহেদি বাজেয়াপ্ত করার ঘটনা এই প্রথম। বলছেন আধিকারিকরাই।
ওই বীজের প্রতি কেজির দাম তিন হাজার থেকে পাঁচ হাজার টাকা। সেই হিসেবে প্রায় ত্রিশ থেকে চল্লিশ লক্ষ টাকা দাম হওয়ার কথা বাজেয়াপ্ত করা বীজের। এই বীজ নেশাজাতীয় সামগ্রী তৈরির কাজে লাগে কি না, অথবা কোনও ওষুধ তৈরির কাজে ব্যবহৃত হয় কি না, তা জানতে ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হবে বলে কাস্টমসের কর্তারা জানিয়েছেন।
আলিপুরদুয়ার আরপিএফ ইনস্পেকটর ওজি ব্রহ্ম বলেন, ‘গোপন সূত্রে খবর পেয়ে সেই বীজ বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। মঙ্গলবার সেগুলি কাস্টমসের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে।’
সূত্রের খবর, এর পিছনে আন্তর্জাতিক পাচারচক্রের যোগাযোগ রয়েছে। মায়ানমার থেকে নাগাল্যান্ড ও ডিমাপুর হয়ে বিহারের পাটনা এলাকায় যাওয়ার কথা ছিল সেই বীজবোঝাই বস্তাগুলির। তার আগেই গোপন সূত্রে খবর পেয়ে আরপিএফ এবং সিআইবি (ক্রাইম ইন্টেলিজেন্স ব্রাঞ্চ) যৌথভাবে অভিযান চালায়। আর তারপরেই সোমবার রাতে নিউ আলিপুরদুয়ার স্টেশনে ডিব্রুগড়-রাজেন্দ্রনগর এক্সপ্রেস থেকে সেই বীজের বস্তা বাজেয়াপ্ত করা হয়।
তদন্তকারীদের কাছ থেকে জানা গিয়েছে, মায়ানমার সীমান্ত অতিক্রম করে বীজগুলি ভারতে আনা হলেও ডিমাপুর থেকে ট্রেনে বুক হওয়ার সময় বিষয়টি নজরে আসে। ভুয়ো নামে বুক হওয়ার খবর জানতে পারার পর কড়া নজরদারি শুরু হয়। রাত প্রায় পৌনে ১২টা নাগাদ নিউ আলিপুরদুয়ার স্টেশনে ডিব্রুগড় রাজেন্দ্রনগর এক্সপ্রেসের স্টপ ছিল। তবে তার আগেই সিআইবি এবং আরপিএফের বিশেষ টিম তৈরি ছিল। নির্দিষ্ট কামরায় হানা দিয়ে মেলে সাফল্য।
সূত্রের খবর, এই বীজ দিয়ে জন্ডিস, দাঁতের ব্যথা বা আলসারের ওষুধ তৈরি করা হয়। তবে মাদকের উপকরণ হিসেবে এর ব্যবহারের বিষয়টি ল্যাব-রিপোর্ট হাতে পাওয়ার পরই স্পষ্ট হবে, বলছেন আধিকারিকরা।