উত্তরবঙ্গ সংবাদ ডিজিটাল ডেস্কঃ আবহাওয়া অনুকুল হতেই উত্তর সিকিমের বিপর্যস্ত এলাকায় উদ্ধারকাজ শুরু করল ভারতীয় বায়ুসেনা। বিপর্যয়ের পর থেকে প্রবল বৃষ্টিতে উদ্ধারকাজ থমকে থাকার পরে রবিবার বিকেল থেকেই বিপর্যস্ত এলাকায় অভিযান শুরু করে বায়ুসেনা। এই উদ্ধারকাজে ব্যবহার করা হচ্ছে ভারতীয় বায়ুসেনার এমআই ১৭ হেলিকপ্টার ও জেডপি ৫২০৭ হেলিকপ্টার। উত্তর সিকিমের মঙ্গনের রিংহিম হেলিপ্যাডে আটকে পড়া ৩২ জনকে উদ্ধার করে গ্যাংটকে পৌঁছল। সোমবার সকাল থেকে দফায় দফায় উদ্ধারকাজ চালিয়ে যাচ্ছে বায়ুসেনা।
ধীরে ধীরে ছন্দে ফিরছে পাহাড়ি রাজ্য সিকিম। গত ৩ অক্টোবর গভীর রাতে মেঘভাঙা বৃষ্টিতে প্রবল জলোচ্ছ্বাসে ভেঙে যায় উত্তর সিকিমের লোনাক হ্রদ। সেই বিপুল জলরাশি নেমে এসে মিশে যায় তিস্তায়। নিমেষে তিস্তার জলস্তর বেড়ে যায় ৩০-৩৫ ফুট। হড়পা বানে ধ্বংসলীলা চালায় তিস্তা। তিস্তা গর্ভে চলে যায় ১০ নম্বর জাতীয় সড়কের একাংশ। তিস্তার গর্ভে চলে যায় শ’য়ে শ’য়ে বাড়ি। ঘরবাড়ি, সহায় সম্বল হারিয়ে হাজারে হাজারে মানুষ আজও অসহায় ভাবে দিন কাটাচ্ছেন খোলা আকাশের নীচে। এত দিন আবহাওয়ার কারণেই উদ্ধারকাজ ব্যাহত হচ্ছিল। সোমবার সিকিমের আবহাওয়া অনুকুল হতেই এদিন সকাল থেকে জোরকদমে শুরু হয়েছে উদ্ধারকাজ। সকাল থেকে দফায় দফায় সিকিমের লাচুং, লাচেন, চুংথাং থেকে পর্যটকদের উদ্ধার করে হেলিকপ্টারে নিয়ে আসা হয় সিকিমের বিমানবন্দর পাকিয়ং-এ। সিকিমের বিপর্যস্ত এলাকায় সকাল থেকেই একের পর এক হেলিকপ্টার পাঠায় বায়ুসেনা। পর্যটকদের উদ্ধার করে নামিয়ে আনা হচ্ছে। বেশ কয়েকটি এলাকা যেখানে উদ্ধারকারী দল পৌঁছতে পারেনি, সেখানে ড্রোন উড়িয়ে বায়ুসেনা খোঁজ চালাচ্ছে কোনও পর্যটক বা স্থানীয় মানুষ আটকে আছে কিনা।
শুধু পর্যটকদের উদ্ধারকাজই নয়, বিপর্যস্ত এলাকায় ত্রাণ পাঠানোর কাজও সমানতালে চালিয়ে যাচ্ছে বায়ুসেনা, ভারতীয় সেনা, জাতীয় ও রাজ্য বিপর্যয় মোকাবিলা দলের কর্মীরা। রবিবার রাতে ফের বৃষ্টি হওয়ায় চার মাইলের গিজিং থেকে লেগশিপ যাওয়ার রাস্তাটি অবরুদ্ধ হয়ে গিয়েছে। এদিকে সিকিমের সামগ্রিক পরিস্থিতি নিয়ে সোমবার উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক ডেকেছেন সিকিমের মুখ্যমন্ত্রী প্রেম সিং তামাং। বৈঠকে উপস্থিত থাকবেন সিকিমের মুখ্যসচিব ভি বি পাঠক সহ সেনাকর্তারা।
সিকিম সরকার সূত্রে জানা গিয়েছে, সিকিমের বন্যার ঘটনায় এখনও পর্যন্ত ৩৫ জনের দেহ উদ্ধার হয়েছে। বিপর্যয়ে মোট ৮৫ হাজার ৮৭০ জন মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। সম্পূর্ণ ধ্বংসে গিয়েছে অন্তত ১,৭১৬টি বাড়ি। ২,৫৬৩ জন মানুষকে উদ্ধার করা হয়েছে। নিরাপদ আশ্রয়ে পাঠানো হয়েছে মোট ২,৭৬৪ জনকে। এখনও নিখোঁজের সংখ্যা ১০৫ জন। সিকিমে মোট ২৬টি ত্রাণশিবির খোলা রয়েছে। ওই ত্রাণশিবিরে আশ্রয় নিয়েছেন অন্তত ৬,৫০৫ জন মানুষ। রাজ্যের মোট ১৪টি সেতু দুর্যোগের কারণে ভেঙে পড়েছে বলে জানিয়েছে সরকার। রবিবার উদ্ধার হওয়া ওই পর্যটকদের মধ্যে মধ্যে ৫ জন কলকাতার, ৩ জন দিল্লি এবং দু’জন কন্যাকুমারীর। কলকাতার ওই পর্যটক দলটি আটকে পড়েছিল জংগুতে। বাকিরা চুংথাংয়ের। এর বাইরে চুংথাংয়ের একাংশে আটকে থাকা থাইল্যান্ডের ৫ এবং হরিয়ানার ৮ জন পর্যটককেও উদ্ধার করা হয়েছে।
সোমবার সকাল থেকে বায়ুসেনার কপ্টার লাচুং থেকে উদ্ধার করে ৪৫ জনকে এবং লাচেন থেকে উদ্ধার করে হেলিকপ্টারে উদ্ধার করে নিয়ে আসে ১৮৭ জনকে। এদের মধ্যে পর্যটক ছড়াও রয়েছেন বহু স্থানীয় বাসিন্দা। উদ্ধারকাজ চলছে।