মণীন্দ্রনারায়ণ সিংহ, আলিপুরদুয়ার: পাহাড়ের বুক চিড়ে আসা অধিকাংশ নদী ও ঝোরা শুকিয়ে গিয়েছে। ফলে আলিপুরদুয়ারে (Alipurduar) বক্সা পাহাড়ের (Buxa Hill) কোলে থাকা তিনটি গ্রামে জলের তীব্র সংকট (Water Crisis) তৈরি হয়েছে। মানুষের পাশাপাশি গৃহপালিত গবাদিপশুদের জন্য পানীয় জল সংগ্রহ করতে নাকাল হচ্ছেন বাসিন্দারা। চড়া দরে জলের জার কিনে বাসিন্দাদের একাংশ পানীয় জলের প্রয়োজন মেটাচ্ছেন। তবে যেভাবে রোদ ও গরমের দাপট দিন-দিন বাড়ছে, তাতে পরিস্থিতির আরও অবনতি হওয়ার আশঙ্কা করছেন বাসিন্দারা। এহেন পরিস্থিতিতে বাসিন্দাদের জলের চাহিদা মেটাতে স্থানীয় গ্রাম পঞ্চায়েত থেকে জেলা প্রশাসনের সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে। রাজাভাতখাওয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান পার্থপ্রতিম দত্ত বলেন, ‘সান্তালাবাড়ি, ২৮ মাইল ও ২৯ মাইল গ্রামে জলের সংকট গত তিনদিন ধরে দেখা দিয়েছে। বৃষ্টি হলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে পারে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে একটি গাড়িতে করে জলের দুটি ট্যাংক দিয়ে বুধবার বিকেলে বাসিন্দাদের পানীয় জল সরবরাহ করা হয়।’
তিনটি গ্রামের অধিকাংশ বাসিন্দাদের জীবিকা গবাদিপশু পালন। পাহাড়ের কোলে থাকা তিনটি গ্রামে প্রায় ৩০০০ লোকের বসবাস। বক্সা পাহাড়ের কোলে থাকা গ্রামগুলি আলিপুরদুয়ার শহর থেকে প্রায় ৩৫ কিলোমিটার দূরে রয়েছে। রাজাভাতখাওয়া থেকে জঙ্গলের পথ পাড়ি দিয়ে তিনটি গ্রামে যেতে হয়। বাসিন্দাদের জলসংকট নিয়ে ২৮ মাইল এলাকার বাসিন্দা কাজিমন থাপা বলেন, ‘এবারে জলের সংকট যেন অন্যান্য বছরের তুলনায় অনেকটাই বেশি। আমরা গ্রামে জনস্বাস্থ্য কারিগরি দপ্তরের ভূগর্ভস্থ জলপ্রকল্পের দাবিতে বারবার সরব হয়েছি। কিন্তু জলপ্রকল্প হয়নি। বর্ষাকালে ঝোরার ঘোলাজল পান করতেও বাধ্য হই। গ্রামে কেউ কেউ ২০ লিটার জলের জার ৪০ টাকায় কিনে পান করেন। তবে সেই সংখ্যাটা সীমিত। অধিকাংশ সীমিত আয়ের মানুষ, তাঁদের জল কিনে পান করার ক্ষমতা নেই।’
চলতি বছরে এখনও পর্যন্ত আলিপুরদুয়ার জেলায় বৃষ্টির ঘাটতি অনেকটাই রয়েছে। গত প্রায় ৬ মাসে ভারী বৃষ্টি হয়নি। বক্সা পাহাড়ের পাদদেশে বইতে থাকা নদী, ঝোরাগুলি কার্যত শুকিয়ে গিয়েছে। বক্সার উঁচু পাহাড়ের একটি ঝোরার জল পাইপের সাহায্যে তিনটি গ্রামে সরবরাহ করা হত। গত তিনদিন সেই জলও সুতোর মতো পড়ছিল। ফলে জলের অভাবে নিত্যপ্রয়োজনীয় কাজ করতেও বিপাকে পড়ছিলেন বাসিন্দারা। অনেকে জলের অভাবে ক’দিন স্নানও করতে পারেননি। গবাদিপশুদের নিয়ে সমস্যা আরও তীব্র হচ্ছিল। ২৯ মাইল এলাকার বাসিন্দা ভিকি লামা বলেন, ‘যা পরিস্থিতি তাতে প্রায় ১০ কিলোমিটার দূরের নদী এমনকি ঝোরা থেকে জল বইয়ে এনে প্রয়োজন মেটাতে হবে। এবছর বৃষ্টি না হওয়ায় এমন পরিস্থিতি হয়েছে। বুধবার বিকেলে সামান্য পরিমাণ জল গ্রামে পৌঁছে দেওয়া হলেও তাতে সমস্যা মেটেনি। এহেন পরিস্থিতিতে বাসিন্দারা চাইছেন যতদিন বৃষ্টি না হচ্ছে, ট্যাংকারের সাহায্যে বেশি পরিমাণে জল সরবরাহ করে বাসিন্দাদের প্রয়োজন মেটানো হোক।’