সুভাষ বর্মন, শালকুমারহাট: কুড়ি বছরের কৌশিক বর্মন পেশায় দিনমজুর। আর বছর আটত্রিশের কিরণ রায় পেশায় কৃষক। পেশা আলাদা হলেও তাঁদের প্যাশনের জায়গা এক। দুজনই ব্যস্ত ‘বিশ্যাল’ নিয়ে।
কী এই ‘বিশ্যাল’? চৈত্র সংক্রান্তির দিন থেকে আলিপুরদুয়ারের (Alipurduar) শালকুমারহাটের নানা গ্রামে চড়কের মেলা শুরু হয়েছে। সেই মেলার মূল আকর্ষণ বিশ্যাল। আঞ্চলিক ভাষায় দেড়-দু’ঘণ্টার নাটক মঞ্চস্থ করা হয়। এই নাটকগুলিই স্থানীয় এলাকায় বিশ্যাল নামে পরিচিত। নাটকের বিষয় হয় সামাজিক সচেতনতা প্রচার কিংবা কোনও গল্প। কৌশিক, কিরণরা কি নাটক পরিচালনা করেন? জানা গেল, না। এইসব নাটকে নারীদের অভিনয় করতে দেখা যায় না। তার বদলে নারী সেজে মঞ্চে ওঠেন কৌশিক, কিরণরা। শালকুমারহাটের বিশ্যালের এটাই ‘ট্র্যাডিশন’। আর পুরুষদের নারী চরিত্রে অভিনয় দেখে সবথেকে খুশি হন নারীরাই।
স্থানীয় যশোদা রায়ের কথায়, ‘ছোট থেকে দেখছি চৈত্র এবং বৈশাখ মাসে গ্রামে বিশ্যালের আয়োজন করা হয়। পুরুষরাই নারী সেজে অভিনয় করেন৷ দেখতে বেশ ভালো লাগে। আবার হাস্যকৌতুক করলে হাসিও পায়।’ নারী সেজে ওই অভিনেতারা শেফালি রায়, পুনি ওরাওঁ, সুশীলা অধিকারীর মতো বাকিদেরও মন জয় করেছেন।
চৈত্র সংক্রান্তির দিন কলাবাড়িয়ার পান দোকান, কালীবাড়ি ও মুন্সিপাড়ায় চড়কমেলা হয়েছে। তারপর থেকে রোজ কোথাও না কোথাও মেলা হচ্ছে। সম্প্রতি নতুনপাড়া, মুন্সিপাড়ায় এই বিশ্যালের আয়োজন করা হয়েছিল। কখনও খোলা মাঠে, কোথাও আবার চড়কের পূজারির বাড়িতে বিশ্যাল দেখতে ভিড় উপচে পড়ে। সেখানে থাকেন এলাকার আট থেকে আশি সকলেই।
কুড়ি বছর ধরে এই অভিনয়ের সঙ্গে যুক্ত কিরণ রায়। তাঁর কথায়, ‘সারাবছর তো কাজ করেই খাই। বিশ্যাল হল এলাকার ঐতিহ্য। গত দুই দশক ধরে নারী সেজে অভিনয় করছি। অল্প সময়ের জন্য আমার মনও যেন নারীদের মতো হয়ে যায়৷ যতটা পারি, মানুষকে আনন্দ দেওয়ার চেষ্টা করি।’ তাঁকে দেখে কৌশিক বর্মন, মৃত্যুঞ্জয় রায়দের মতো তরুণরা এখন দলে নাম লিখিয়েছেন। মৃত্যুঞ্জয় বললেন, ‘নারী সেজে অভিনয় করে আনন্দ পাই। যখন দর্শকদের থেকে হাসি এবং হাততালি পাই, তখন নিজেদের অভিনয়কে সার্থক বলে মনে হয়।’
এইসব নাটক পরিচালনার দায়িত্ব রয়েছে পুণ্যদেব রায়ের কাঁধে। তিনি প্রধানপাড়া চড়কমেলা কমিটিরও কর্ণধার। তাঁর বক্তব্য, ‘আমাদের এখানকার এই রীতি অনেক পুরোনো। শুরু থেকেই পুরুষরা নারী সেজে অভিনয় করেন। তাই এখনও বিশ্যালে নারীরা অংশগ্রহণ করেন না। এতে দর্শকরাও মজা পান।’