মণীন্দ্রনারায়ণ সিংহ, আলিপুরদুয়ার: ঠিক যেন সিংঘম। অন্যদিনের মতো সোমবারও আলিপুরদুয়ার (Alipurduar) শহরের কালজানি নদীর (Kaljani River) চর প্রমোদনগর এলাকায় বেশ কিছু তরুণ গোল হয়ে বসে নেশার আসর জমিয়েছিল। দুপুরে নিজের দেহরক্ষীকে সঙ্গে নিয়ে সেখানে উপস্থিত হয়ে মহকুমা শাসক (Alipurduar SDO) বিপ্লব সরকার লাঠি উঁচিয়ে তাদের তাড়া করেন। তার আগে হাটখোলায় মদ, গাঁজার কারবারিরা মহকুমা শাসককে দেখামাত্র দে ছুট। পলাশবাড়ি চরে মহকুমা শাসক নিজে একটি বাড়িতে ঢুকে গাঁজা গাছ উপড়ে তল্লাশি চালালেন। মহকুমা শাসকের এদিনের এহেন উদ্যোগকে সবাই প্রশংসায় ভরিয়ে দিয়েছেন।
মহকুমা শাসক বলেন, ‘পলাশবাড়ি, প্রমোদনগর চরে নেশার কারবারিদের দৌরাত্ম্য নিয়ে বাসিন্দারা আমার কাছে অভিযোগ করেছিলেন। বিষয়টি খতিয়ে দেখতে গিয়ে সত্যতাও খুঁজে পেয়েছি। মাদক বাজেয়াপ্ত করা না গেলেও কারবারিদের পরিবারকে সতর্ক করা হয়েছে। কিছুতেই এই কারবার চালাতে দেওয়া হবে না।’ ১১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলার পার্থ সরকার বলেন, ‘মহকুমা শাসকের এই উদ্যোগ সত্যিই প্রশংসনীয়।’
আলিপুরদুয়ারে মদ, গাঁজা, ব্রাউন সুগার থেকে নানা নেশার কারবার চলে। পুলিশ বহুবার অভিযান চালালেও কারবারিদের দৌরাত্ম্য চলছে। গাঁজা বিক্রি করে অনেকে নদীর চরে সুন্দর বাড়িও বানিয়েছে। নেশার কারবারিদের দৌরাত্ম্যে বাসিন্দারা উদ্বিগ্ন। স্থানীয়দের অভিযোগ, দিনেরবেলা বহিরাগতদের নেশার ঠেকে আনাগোনা, সন্ধ্যা নামলেই এলাকা সমাজবিরোধীদের মুক্তাঞ্চলে পরিণত হওয়ায় মহিলারা সন্ধ্যার পর বাড়ি থেকে বের হওয়ার সাহস পান না। হাটখোলায় অভিযান চালিয়ে মহকুমা শাসকের গাড়ি এদিন প্রমোদনগর এলাকায় চরে ধুলো উড়িয়ে নদীর দিকে ছুটে চলে। এদিন দুপুরে নদীর ওই চরে একাধিক জায়গায় মদ, গাঁজা, ছাড়াও বিভিন্ন নেশার ঠেক প্রকাশ্যে চলছিল। মহকুমা শাসকের গাড়ি দেখে নেশাখোররা প্রথমে গুরুত্ব দেয়নি। পরে গাড়ি থেকে নেমে মহকুমা শাসক একটি লাঠি হাতে ওই নেশাখোরদের দিকে ছুটে যান। তাঁর দেহরক্ষীর হাতেও লাঠি ছিল। তাঁদের দেখে নেশাখোররা এদিক–ওদিক ছুটতে শুরু করে।
মহকুমা শাসক পরে পলাশবাড়ি চরে এক গাঁজা কারবারির বাড়িতে যান। সেই কারবারি সেই সময় বাড়িতে ছিল না। বাড়ির ঘরগুলিতে তল্লাশি চালানো হয়। বাড়ির উঠোনে একটি গাঁজা গাছ থাকায় সেটিকে উপড়ে ফেলা হয়। পাশাপাশি, পরিবারের সদস্যদের সতর্ক করা হয়। এক মদ কারবারির বাড়িতে গিয়ে তালা ভেঙে একটি ঘরে তল্লাশি চালানো হয়। প্রতিবেশীরা অনেকেই সেখানে মহকুমা শাসককে দেখে এগিয়ে এসে জানান, এই বাড়িতে মদ বিক্রি হয়। সন্ধ্যার পর এখানে সুস্থ পরিবেশ থাকে না বলে তাঁরা মহকুমা শাসককে অভিযোগ জানান। মহকুমা শাসক সবাইকে আশ্বস্ত করেন।
সবার স্বার্থে মহকুমা শাসক সম্প্রতি বেশ উদ্যোগী হয়েছেন। হোটেলের খাবারের গুণমান দেখে সংশ্লিষ্টদের সতর্ক করা, নিম্নমানের খাবার বিক্রির অভিযোগ পেয়ে নিজে খতিয়ে দেখার পাশাপাশি সম্প্রতি ছাত্রীনিবাসে দুষ্কৃতী হানার অভিযোগ ওঠায় প্যারেড গ্রাউন্ড মাঠে তিনি নেশাখোরদের তাড়া করেছিলেন। এবার শহরের নদীর চর থেকে বাজার এলাকাতেও নেশাখোর ও নেশার কারবারিদের বিরুদ্ধে নিজে লাঠি হাতে তাদের তাড়া করায় বাসিন্দারা খুশি। সমাজবিরোধীদের বিরুদ্ধে প্রশাসন উদ্যোগী হয়ে মাঠে নামায় অনেকেই বুকে বল পাচ্ছেন। প্রশাসনের এই ভূমিকায় খুশি বলে তাঁরা জানিয়েছেন।