মোস্তাক মোরশেদ হোসেন, রাঙ্গালিবাজনা: দুটো হাতই লিকলিকে সরু! এতটাই সরু যে জামার হাতাটাও নিজে সরাতে পারেন না। অথচ ওই হাতেই তাঁর ‘ভাগ্য’র রাশ। হাঁটুর নীচ থেকে দুটো পা-ও সরু এবং অকেজো। হাঁটা তো দূরের কথা, দাঁড়াতেও পারেননি কোনওদিন। কিন্তু সেই পায়ের ওপর ভর দিয়েই লড়াই করে যাচ্ছেন শিবু দে। বছর বত্রিশের শিবুর ঠিকানা আলিপুরদুয়ারের (Alipurduar) ফালাকাটার (Falakata) দেওগাঁওয়ের (Deogaon) বটতলা।
হতদরিদ্র পরিবার থেকে উঠে শিবু দেখিয়েছেন, মনে সাহস থাকলে শারীরিক সমস্যা কোনও বাধাই নয়। বছর দশেক আগে যে তরুণ রুজির সংস্থানে ব্যবসা শুরু করেছিলেন হাজারখানেক টাকা দিয়ে, আজ তাঁর ব্যবসার পুঁজি কত জানেন? সব মিলিয়ে কমবেশি ১০ লক্ষ টাকা।
শিবু বলেন, ‘বাবা-মা মারা গিয়েছেন। দাদা-বৌদির সংসারে খাই। লড়াই করা ছাড়া আর কোনও উপায় নেই।’ শুরু কীভাবে হল? তিনি জানান, বছর দশেক আগে প্রথমে সবজির ব্যবসা শুরু করেছিলেন। লোকসান হয়েছিল। টাকা ধার করে মাদারিহাটে সবজি বিক্রি করতেন। তারপর দোকানে দোকানে পাইকারি দামে জিনিসপত্র বিক্রির কথা মাথায় আসে। অল্প কিছু পুঁজি নিয়ে একটা ভ্যানরিকশা ভাড়া করে দোকানে দোকানে মালপত্র বেচতে শুরু করেন। তিনি বলেন, ‘ভ্যানরিকশায় সারাদিন বসে থাকতাম। ভ্যানচালকই মাল ওঠানো-নামানোর কাজ করতেন। আমি শুধু খাতায়-কলমে হিসেব রাখতাম। এখনও তাই করি।’
আজও একইভাবে দোকানে দোকানে পাইকারি দামে চকোলেট, বিস্কুট, চিপসের মতো নানা সামগ্রীর জোগান দিয়ে চলেছেন শিবু। তবে ব্যবসার বৃত্তটা বেড়েছে। বেড়েছে মূলধনও। এখন আর ভ্যানরিকশা নয়, টোটো ব্যবহার করেন তিনি। রাঙ্গালিবাজনা, খয়েরবাড়ি থেকে গ্যারগান্ডা, হান্টাপাড়া, মাদারিহাট সহ বিভিন্ন এলাকায় সকাল থেকে দোকানে দোকানে মালপত্র জোগান দিতে শুরু করেন তিনি।
খয়েরবাড়ির মাদ্রাসা মোড়ে দাঁড়িয়ে শিবুর টোটোচালক মোবারক হোসেন বলছিলেন, ‘জানেন, হান্টাপাড়া, গ্যারগান্ডা চা বাগানগুলির লোকজন শিবুকে স্যালুট করেন। মনের জোর দেখে শিবুকে আপন করে নিয়েছেন চা বাগানের ব্যবসায়ীরা। এলাকার ছোট ছোট দোকানের মালিকরা শিবুর কাছেই জিনিস কেনেন। শিবুর লড়াইয়ের শরিক হতে পেরে আমি খুশি।’
অথচ স্কুলে কোনওদিনই যাননি শিবু। বাড়িতে নুন আনতে পান্তা ফুরোত। বাবা-মা লড়াই করে পেটের ভাতটুকু জুটিয়েছেন।