প্রণব সূত্রধর, আলিপুরদুয়ার: হাইকোর্টের নির্দেশে সদ্য চাকরিহারা শিক্ষক-শিক্ষিকাদের ব্যাংক ঋণ পরিশোধ প্রক্রিয়া এখন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। যদিও এখনই তাঁদের বেতন বন্ধের কোনও সরকারি নির্দেশিকা জারি হয়নি। তবে, আজ না হয় কাল তাঁদের বেতন বন্ধের সরকারি নির্দেশিকা চলে এলেই ব্যাংক ঋণ পরিশোধ করতে হিমসিম খেতে হবে ওই সমস্ত শিক্ষক-শিক্ষিকাদের অনেককেই। তাই খুব তাড়াতাড়ি তাঁরা এব্যাপারে সুরাহার আশায় পথ চেয়ে রয়েছেন।
শহরের এক শিক্ষিকা ইতিমধ্যে স্বামীর সঙ্গে যৌথভাবে ঋণ নেওয়ার প্রস্তুতি নিয়েছিলেন। বড় অঙ্কের ঋণ নিয়ে তাঁরা বাড়ি তৈরির পরিকল্পনা করেছিলেন। ইতিমধ্যে ব্যাংকের সঙ্গে কথাবার্তা বলে সেই কাজ অনেকটা এগিয়েও গিয়েছিল। তবে তার আগেই সোমবারের কলকাতা হাইকোর্টের এসএসসি সংক্রান্ত রায় প্রকাশের পর আর ঋণ নেওয়ার সাহস পাচ্ছেন না তাঁরা। চাকরি না থাকলে স্বামীর উপর আর্থিক বোঝা চাপবে বলে মনে করেন ওই শিক্ষিকা। তাঁর কথায়, ‘যোগ্য প্রার্থীদের চাকরি চলে গেলে সমাজের উপর বিরূপ প্রভাব পড়বে। আশা করছি, দ্রুত সমস্যা মিটবে। তার উপর বাচ্চাদের দেখভাল, লেখাপড়া রয়েছে। ফলে, সবকিছু ছেড়ে চাকরি বাঁচাতে আদালতে ছুটোছুটি করা সম্ভব নয়।’
কয়েকজন শিক্ষক ইতিমধ্যে জমি কেনা সহ অন্যান্য কাজেও ব্যাংক ঋণ নিয়েছেন। গত কয়েক বছরে তাঁরা টাকা পরিশোধও করেছেন। তবে ঋণ সম্পূর্ণ পরিশোধ করতে আরও কয়েক বছর সময় লাগবে। চাকরির বেতনে সংসার চলে। চাকরি চলে গেলে তাঁরা কী করবেন ভেবে কূলকিনারা পাচ্ছেন না। আরেক শিক্ষিকাও ইতিমধ্যে ব্যাংক ঋণ নিয়ে বাড়ি তৈরি করেছেন। বেতন থেকেই চলছিল অল্প অল্প করে ঋণ পরিশোধ। এখন বেতন বন্ধ হলে কীভাবে ঋণ শোধ করবেন তা নিয়ে চিন্তায় পড়েছেন। এমন তালিকার বহর ক্রমেই বাড়ছে। এছাড়া, জেলায় কতিপয় শিক্ষক-শিক্ষিকা দুরারোগ্য রোগে আক্রান্ত। তাঁদের চিকিৎসায় বেতনের একটি বড় অংশ ব্যয় হয়। এখন বেতন বন্ধ হলে চিকিৎসা খরচ কীভাবে মিটবে তা বুঝতে পারছেন না তাঁরা।
জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক অফিস সূত্রে খবর, ঋণ পরিশোধ হয়নি ব্যাংকের এমন বহু চিঠি প্রতি মাসে আসে। বেতন বন্ধ হলে সংখ্যাটা আরও বাড়বে। তাঁদের কোন কোন ব্যাংকে কত ঋণ রয়েছে তা এখনও অজানা। সমস্যার কথা মেনেছে সব সংগঠনই। অখিল ভারতীয় রাষ্ট্রীয় শৈক্ষিক মহাসংঘের জেলা যুগ্ম সম্পাদক হারাধন ঘোষ জানান, শিক্ষক-শিক্ষিকাদের সমস্যাটা স্বাভাবিক। বিষয়টি রাজ্যপালের নজরে আনা হয়েছে। নিখিলবঙ্গ শিক্ষক সমিতির জেলা ক্যাম্প অফিসে শিক্ষকদের নথিপত্র যাচাই করে সুপ্রিম কোর্টে যাওয়ার প্রস্তুতি চলেছে। সংগঠনের জেলা সম্পাদক জয়ন্ত সাহা জানান, তাঁরা সুপ্রিম কোর্টে যাচ্ছেন। যোগ্য শিক্ষকদের নথি যাচাই করে ওকালতনামা তৈরি হবে।