ভাস্কর শর্মা, আলিপুরদুয়ার: গণতন্ত্রের মহাযজ্ঞে এবার সাধারণ ভোটারের মতোই ভোট (Lok sabha election 2024) দেবেন দৃষ্টিহীন ভোটাররা। গোটা দেশে এই প্রথম দৃষ্টিহীন ভোটারদের জন্য ভোটার স্লিপের ব্যবস্থাও করা হচ্ছে। আলিপুরদুয়ার জেলা নির্বাচন দপ্তরের তরফে সব ভোটগ্রহণ কেন্দ্রেই দৃষ্টিহীন ভোটারদের জন্য অভিনব এই ব্যবস্থা থাকছে। এর জন্য ভোটকর্মীদের ট্রেনিংও দেওয়া হয়েছে। নির্বাচন কমিশনের এমন উদ্যোগে খুশি দৃষ্টিহীন ভোটাররা।
কমিশন সূত্রে জানা গিয়েছে, আগে দৃষ্টিহীন ভোটাররা ব্রেইল (Braille) পদ্ধতিতে তৈরি ব্যালটে হাত বুলিয়ে প্রার্থীদের নাম ও প্রতীক বুঝে ভোট দিতেন। এবার কমিশনের অভিনব উদ্যোগের ফলে দৃষ্টিহীন ভোটাররাও সাধারণ ভোটারদের মতো ভোটার স্লিপ পাবেন। সেই ভোটার স্লিপ নিয়ে তাঁরাও সরাসরি ইভিএমে ভোট দিতে পারবেন। এর জন্য ইভিএমেও থাকবে ব্রেইল পদ্ধতির বোতাম। ফলে ভোটার স্লিপের মাধ্যমে তাঁরাও জানতে পারবেন তাঁদের কেন্দ্র, পার্ট নম্বর, এপিক নম্বর প্রভৃতি।
আলিপুরদুয়ার জেলা নির্বাচন সেলের এক আধিকারিকের কথায়, ‘নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশন রিজিওনাল ব্রেইল প্রেস থেকে দৃষ্টিহীন ভোটারদের জন্য ভোটার স্লিপ তৈরি হচ্ছে। সেখানে নরওয়ের তৈরি অত্যাধুনিক ব্রেইল মেশিনের মাধ্যমে ছাপা হচ্ছে এই স্লিপ। ইভিএমে থাকবে বোতাম। ব্রেইল পদ্ধতি ব্যবহার করে তাঁরা ভোট দিতে পারবেন।
কমিশন সূত্রে খবর, এই রাজ্যের পাশাপাশি ত্রিপুরার দৃষ্টিহীন ভোটারদের জন্যও ভোটার স্লিপ ব্রেইল পদ্ধতিতে এখানে ছাপানো হচ্ছে। প্রথম দফার ভোটের জন্য এই ব্রেইল প্রেস থেকে জলপাইগুড়ি (Jalpaiguri) এবং আলিপুরদুয়ার (Alipurduar) জেলার বিভিন্ন ভোটকেন্দ্রের দৃষ্টিহীন ভোটারদের জন্য ভোটার স্লিপ ছাপা হয়েছে। জানা গিয়েছে, নরওয়ের তৈরি অত্যাধুনিক ব্রেইল মেশিনের মাধ্যমে ছাপা হয়েছে এই ভোটার স্লিপ। যথেষ্ট কষ্ট এবং সময় নিয়ে তৈরি করতে হচ্ছে এই ভোটার স্লিপের কাজ। প্রথমে আলাদাভাবে কম্পিউটারে টাইপ করে প্রতিটি ভোটারের জন্য আলাদা স্লিপ তৈরি করা হচ্ছে। তারপরেই ব্রেইল পদ্ধতিতে তা ছাপা হচ্ছে। এখন দিনরাত ছাপাখানায় এই কাজ চলছে।
নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশনের ব্রেইল বিভাগের এক কর্তার বক্তব্য, এবার লক্ষাধিক ব্রেইল ভোটার স্লিপ ছাপা হচ্ছে। এতে ব্রেইল পদ্ধতিতে তৈরি ব্যালট ও ভোটার স্লিপ ব্রেইলের জনপ্রিয়তাকে আরও বাড়িয়ে তুলছে।
এপ্রসঙ্গে ফালাকাটা যাদবপল্লি হাইস্কুলের দৃষ্টিহীন শিক্ষক জলধর বর্মন বলেন, ‘এতদিন আমরা অন্যের উপর নির্ভর হয়েই ভোট দিতাম। এমনকি কোনও স্লিপও পেতাম না। কিন্তু এবার শুনছি নির্বাচন কমিশন স্লিপ সহ আরও বেশ কিছু উদ্যোগ নিয়েছে। নির্বাচন কমিশন আমাদের জন্য ভাবায় আমরা খুশি।’