বালুরঘাট: বেঁচে আছেন, অথচ বেঁচে নেই! অর্থাৎ খাতায় কলমে মারা গিয়েছেন! কিন্তু দিব্যি চলে ফিরে বেড়াচ্ছেন। এমনই ঘটনার নজির মিলেছে বালুরঘাট ব্লকের নাজিরপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের জন্তীগ্রামে। জীবিত কিন্তু ভোটার কার্ডে ‘মৃত’রা এখন ‘ভূত’ হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন সেখানে। এই এলাকার শম্ভুচন্দ্র দাস, মলিনা সরকাররা প্রশাসনের এই দরজা থেকে ওই দরজায় নাকি জীবিত হতে ঘুরছেন। তাঁদের আর্জি ভোটার তালিকায় যেন আবার তাঁদের নাম তোলা হয়। কারণ, ভোটার কার্ড ভোটার তালিকা থেকে বাদ পড়ায় তাঁদের বন্ধ হয়ে গিয়েছে সরকারি সুবিধা।
বৃদ্ধ শম্ভু চন্দ্র দাস পেশায় কৃষক। বছর দেড়েক আগে তাঁর স্ত্রী বিয়োগ হয়। কিন্তু এখন তাঁকে অজানা আতঙ্কের মুখে ফেলে দিয়েছে নির্বাচন দপ্তর। কারণ তাঁর মৃত স্ত্রীর নাম ভোটার কার্ডে জীবিত অবস্থায় থাকলেও, তাঁর নাম বাদ হয়ে গিয়েছে। কেন, কিভাবে বাদ হয়ে গেল, তা বোঝার আগেই চলে আসে পঞ্চায়েত নির্বাচন। ওই নির্বাচনে তিনি ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেননি। এরপর থেকে তিনি নিজের নাম ভোটার তালিকায় তুলতে ও স্ত্রীর নাম তালিকা থেকে সরাতে প্রশাসনের দরজায় দরজায় ঘুরে বেড়াচ্ছেন। কিন্তু আজও সেই নাম তিনি ভোটার তালিকায় তুলতে পারেননি বলে অভিযোগ।
ওই গ্রামেরই আরেক প্রৌঢ়া মলিনা সরকারের অভিযোগ আবার ভিন্ন। তিনি বলেন, ‘আমি বেঁচে রয়েছি। তবুও আমাকে মৃত বলে আমার নাম ভোটার তালিকা থেকে বাদ দিয়ে দেওয়া হয়েছে।’ তাঁর বক্তব্য, বিজেপি করায় তৃণমূলের মদতে নাম বাদ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এই গণতন্ত্রের দেশে এভাবে ভূত হয়ে বেঁচে থাকতে হবে এ কেমন কথা? গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে ভোট দিতে পারেননি তিনি। আগামী লোকসভা নির্বাচনেও পারবেন কিনা জানিনা। ভোটার কার্ড না থাকায় সরকারি সুবিধা থেকেও বঞ্চিত হচ্ছেন তাঁরা। ভোটার তালিকায় নাম তোলার জন্য পঞ্চায়েত থেকে ব্লক প্রশাসনের কাছে একাধিকবার দ্বারস্থ হয়েও কোনও সুরাহা হয়নি।
এবিষয়ে বিজেপির স্থানীয় মণ্ডল সভাপতি প্রবীর মণ্ডল বলেন, ‘গ্রামে গ্রামে এমন মানুষের সংখ্যা প্রচুর। শুধুমাত্র বিজেপি করার ‘অপরাধে’ নানা কায়দায় এভাবে ভোটার তালিকা থেকে নাম বাদ দেওয়ানো হচ্ছে।’ তৃণমূল নেতা বালুরঘাট পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি অরূপ সরকার বলেন, ‘বিজেপি মিথ্যা অভিযোগ করছে। যদি ওই বাসিন্দাদের নাম তালিকা থেকে বাদ গিয়ে থাকে, তবে প্রক্রিয়া মেনে যাতে তাঁরা ফের ভোটার তালিকায় নাম তুলতে পারেন, সেই সাহায্য আমরা করব।’ এবিষয়ে দক্ষিণ দিনাজপুরের জেলাশাসক বিজিন কৃষ্ণা জানান, বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখা হবে।