নীহাররঞ্জন ঘোষ, মাদারিহাট: মাদারিহাট ব্লকের মুজনাই চা বাগানের চারজন মৃত শ্রমিকের প্রভিডেন্ট ফান্ড, পেনশন ও বিমার টাকা মিলিয়ে ১৬ লাখ ৭৭ হাজার টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগ উঠেছে তিন ভাইয়ের বিরুদ্ধে। এই তিনজনের নামে মঙ্গলবার মাদারিহাট থানায় লিখিত অভিযোগ জানালেন ৪ মহিলা। তাঁদের অভিযোগ, মুজনাই চা বাগানের অজয় সাউ, তার দাদা অজিত সাউ এবং ভাই অনুপ সাউ তাঁদের টাকা আত্মসাৎ করেছে। উত্তরবঙ্গ ক্ষেত্রীয় গ্রামীণ ব্যাংকের শিশুবাড়ি শাখায় তাঁদের অজান্তে তাদের নামে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছিল। ব্যাংক অ্যাকাউন্টে টাকা ঢোকার পর কালচিনির গ্রাহক পরিষেবা কেন্দ্র থেকে সমস্ত টাকা তোলা হয়েছে। এই চারজন মহিলা হলেন মৃত বন্ধন ওরাওঁয়ের স্ত্রী বেনামি ওরাওঁ, মৃত গঙ্গা সোমরা ওরাওঁয়ের স্ত্রী মারিয়ম ওরাওঁ, মৃত কমল মুন্ডার স্ত্রী সুমিত্রা মুন্ডা এবং মৃত বিরে তামাংয়ের স্ত্রী সরস্বতী তামাং।
চার মহিলা জানালেন, তিন বছর আগে অজয় ও তার দুই ভাই তাঁদের কালচিনি নিয়ে যায়। সেখানে একটি ছোট ঘরে তাঁদের আধার ও ভোটার কার্ড নেওয়া হয়। টিপসই নেওয়া হয়। অজয়রা বলেছিলেন, টাকা এলেই তুলতে পারবেন তাঁরা। কিন্তু টাকার কথা জিজ্ঞেস করলেই নানারকম অজুহাত দেখাতে থাকে তারা। সম্প্রতি তাঁরা জলপাইগুড়িতে ভবিষ্যনিধি দপ্তরে খবর নিতে যান। সেখান থেকে জানানো হয় অনেকদিন আগেই তাঁদের সমস্ত টাকা তোলা হয়েছে।
এই চারজনের পাশে দাঁড়িয়েছেন ডুয়ার্স তরাই আদিবাসী মহিলা ওয়েলফেয়ার সোসাইটি। এই সংগঠনের সভানেত্রী বিনীতা কুজুর টেটে। তিনি বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করেছিলাম অজয় সাউদের কাছ থেকে টাকাটা আদায় করে দেওয়ার। কিন্তু অজয় ও তার দাদা, ভাই উলটে মারধরের হুমকি দেন। এখন তারা ফেরার।‘
বিনীতা জানালেন, বেনামি ওরাওঁয়ের স্বামীর নামে ৩ লক্ষ ৪৮ হাজার টাকা, মারিয়ম ওরাওঁয়ের স্বামীর নামে ৩ লক্ষ ৮১ হাজার টাকা, সুমিত্রা মুন্ডার স্বামীর নামে ৩ লক্ষ ৩৪ হাজার টাকা এবং সরস্বতী তামাংয়ের স্বামীর ৬ লক্ষ ১৪ হাজার টাকা জমা হয়েছিল। আর তাঁদের নামে ভুয়ো অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছিল উত্তরবঙ্গ ক্ষেত্রীয় গ্রামীণ ব্যাংকের শিশুবাড়ি শাখায়। এই ব্যাংকের গ্রাহক পরিষেবা কেন্দ্র কালচিনিতে রয়েছে। সেখান থেকে পুরো টাকাটা এই তিন ভাই তুলে নিয়েছে বলে বিনীতা জানালেন।
তিনি জানালেন, আমরা শিশুবাড়িতে গিয়েছিলাম। কিন্তু ব্যাংকের বর্তমান ম্যানেজার আমাদের জানালেন অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছিল তিনি আসার অনেক আগেই। এই ব্যাপারে তিনি কিছুই জানেন না। কালচিনিতেও যোগাযোগ করেছিলেন তিনি। সেখান থেকেও এ ব্যাপারে খোলসা করে কিছু জানানো হয়নি।
প্রশ্ন উঠেছে, যাদের নামে ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছিল, তাঁদের অনুপস্থিতিতে কীভাবে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ অ্যাকাউন্ট খুলেছিল। অন্যদিকে, কীভাবে এতগুলি টাকা দেওয়া হল? ওই সময় যাঁরা ব্যাংকের দায়িত্বে ছিলেন তাঁদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত তদন্ত হলে এই ঘটনার সঙ্গে আর কারা জড়িত সব বেরিয়ে আসবে বলে মনে করেন অনেকে।
এ ব্যাপারে উত্তরবঙ্গ ক্ষেত্রীয় গ্রামীণ ব্যাংকের শিশুবাড়ি শাখার ম্যানেজার তেজময় নন্দী বলেন, ‘যা বলার হেড অফিস বলবে।‘ পরে তিনি অবশ্য বলেন, ‘এখানে দেড় বছর আগে এসেছেন তিনি। তার আগে এখানে অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছিল। তাই এ ব্যাপারে তিনি কিছুই জানেন না।‘ অজয় সাউ, অজিত সাউ এবং অনুপ সাউ এই তিনজনের মোবাইল ফোন বন্ধ। তাঁদের বক্তব্য জানা যায়নি। এই তিনজন গা-ঢাকা দিয়েছেন। মাদারিহাট থানার ওসি মিংমা শেরপা জানান, অভিযোগ পেয়েছেন। তদন্ত শুরু করা হবে।