শিলিগুড়িঃ কেন্দ্র সরকারের ভারতমালা প্রকল্পে অনিয়ম নিয়ে সংসদের পাবলিক অ্যাকাউন্টস কমিটির (পিএসি) ডাকা সাংবাদিক বৈঠকে সাংসদদের মত বিরোধ সামনে উঠে এল। সাংবাদিক বৈঠকে পিএসির চেয়ারম্যান সাংসদ অধীর চৌধুরী ভারতমালা প্রকল্পের আর্থিক অনিয়মের বিষযটি তোলেন। আর এতেই মেজাজ হারিয়ে সাংবাদিক সম্মেলন মাঝ পথে বয়কট করে বেরিয়ে যান পিএসির সদস্য বিজেপি সাংসদ জগদম্বিকা পাল ও রামকৃপাল যাদব। অন্যদিকে, কেন্দ্রের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ তোলা সত্ত্বেও পুরো সাংবাদিক সম্মেলনে অধীর চৌধুরীর পাশেই বসেছিলেন বিজেপির অপর দুই সাংসদ সত্যপাল সিং ও প্রতাপ চন্দ্র সারেঙ্গী।
শনিবার শিলিগুড়ি সংলগ্ন সুকনার কাছে একটি টি রিসর্টে পিএসির বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকের আগে অধীর চৌধুরী পিএসির সদস্যদের নিয়ে সাংবাদিক সম্মেলনে বসেন। যেখানে ভারতমালা প্রকল্প নিয়ে অনিয়মের অভিযোগে ক্যাগ-এর রিপোর্টের বিষয়টি অধীর উল্লেখ করেন। পাশাপাশি উড়ান প্রকল্প নিয়ে কেন্দ্রের ব্যর্থতা তুলে ধরেন। সংবাদমাধ্যমের সামনে এমন রিপোর্টের কথা উল্লেখ করা অসংবিধানিক বলে, সম্মেলন চলাকালীন অধীরের ডান দিকে বসে তাঁকে থামানোর চেষ্টা করেন জগদম্বিকা পাল। কিন্তু তাতে অধীর না থেমেই নিজের কথা বলতে থাকেন। এমন পরিস্থিতিতে জগদম্বিকা পাল ও রামকৃপাল যাদব একসঙ্গে সম্মেলন ছেড়ে বাইরে চলে যান। তবে দুই সদস্য উঠে চলে গেলেও অধীর সাংবাদিক সম্মেলন চালিয়ে যান।
জগদম্বিকা পালের কথায়, পিএসি চেয়ারম্যান পদে থেকে অধীর চৌধুরি রাজনীতি করছেন। নিজের ক্ষমতার অপব্যবহার করছেন। ক্যাগের রিপোর্ট সংসদের কক্ষে পেশের পর তা স্কুটিনি করার দায়িত্ব পিএসিকে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তার আগেই এই বিষয়টি নিয়ে চেয়ারম্যানের প্রকাশ্যে কথা বলা পুরোপুরি অসংবিধানিক। বিজেপি সাংসদ হিসাবে সেই কারনে আমরা সাংবাদিক সম্মেলন বয়কট করি। একই বক্তব্য পেশ করেন রামকৃপাল যাদব। দুই সাংসদের সম্মেলন বয়কটের বিষয়ে অধীর চৌধুরীর বক্তব্য, বক্তব্যটি নিয়ে ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে।
পিএসির বৈঠকের আগে ভারতমালা ইস্যুতে যখন পরিস্থিতি সরগরম তখন অধীরের বাম পাশে চুপ করে বসেছিলেন সত্যপাল সিং ও প্রতাপ চন্দ্র সারেঙ্গী। অধীর চৌধুরীর বক্তব্য পেশের পরই মাইক নিজের দিকে টেনে নেন বিজেপির সত্যপাল সিং। তাঁর কথায়, সরকারের খামতি বের করে আনা পিএসির কাজ নয়। সরকারি দপ্তরগুলিতে কাজ কি করে আরও ভাল হয় সেটা দেখা আমাদের কাজ। যদিও জগদম্বিকা ও রামকৃপালের বৈঠক ছেড়ে যাওয়ার প্রশ্নে সত্যপাল মুখে কুলুপ এঁটে থাকেন। পাশাপাশি প্রতাপ চন্দ্র সারেঙ্গীও চুপ থেকেছেন। তবে বিজেপির চার সাংসদ একই ইস্যুতে দুইভাগে বিভক্ত হয়ে যাওয়ায় প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।
উত্তরবঙ্গের চা শ্রমিকদের কি করুন অবস্থা তা জলপাইগুড়ি জেলার রায়পুর চা বাগানের একের পর এক মৃত্যুর ঘটনা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিযে দিচ্ছে। তার মাঝেই শুক্রবার পিএসির বৈঠকে উত্তরের বিভিন্ন এলাকার চা শ্রমিকদের অভাব অভিযোগের কথা অধীর চৌধুরিরা শোনেন। শ্রমিকদের কথায় মূলত খাদ্য, স্বাস্থ্য পরিসেবা ও ঘর নিয়ে ক্ষোভ ঝড়ে পড়ছে বলে খবর। সেই ইস্যুতে এদিন অধীর বলেন, শ্রমিকদের অভাব, অভিযোগের কথা রিপোর্ট আকারে টি বোর্ডের কাছে তুলে ধরা হয়েছে। এরাজ্যে ১৭টি চা বাগান বর্তমানে বন্ধ হয়ে রয়েছে। কিন্তু তারপরও রাজ্য কিছু না করায় আমাদের সমস্যা পরতে হয়। কেরলে যেখানে চা শ্রমিকরা ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা দৈনিক মজুরি পান। সেখানে এরাজ্যে তা ২৫০ টাকা।
অন্যদিকে, রাজ্যে মিডডে মিলে অনিয়মের অভিযোগে ইতিমধ্যেই সিবিআই চেয়েছেন বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। এদিন শুভেন্দুর সুরেই অধীর বলেন, রেশন দুর্নীতির জন্য প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রী জেলবন্দি। মিডডে মিলেও ব্যাপক দুর্নীতি হয়েছে। তদন্তের স্বার্থে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রক চাইলে সিবিআই তদন্ত হতে পারে।