উত্তরবঙ্গ সংবাদ ডিজিটাল ডেস্কঃ হাইকোর্ট অনুমতি দিলেও গর্ভপাত করানো গেল না গণধর্ষিতা নাবালিকার। মাত্র ১২ বছর বয়সেই কিশোরী কলকাতার এক হাসপাতালে জন্ম দিল কন্যা সন্তানের। যেহেতু নাবালিকার পরিবার গর্ভপাত করানোর দাবি জানিয়েছিল, তাই আইন অনুযায়ী, ওই সদ্যোজাতের অভিভাবক এখন রাজ্য সরকার। ঘটনার মূল অভিযুক্তকে চিহ্নিত করতে শিশুটির ডিএনএ পরীক্ষা করা হয়েছে। আপাতত শিশুটিকে ‘নিয়োনেটাল ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে’ রাখা হয়েছে।
জানা গিয়েছে, পূর্ব মেদিনীপুরের প্রত্যন্ত গ্রামের ১২ বছরের এক কিশোরীকে গণধর্ষণ করে তারই পরিচিত তিন কিশোর। ধর্ষণের জেরে সে অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ে বলে অভিযোগ। পুলিশ নাবালক তিন অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করে আদালতের নির্দেশে হোমে পাঠায়। নির্যাতিতাকেও রাখা হয় একটি সরকারি হোমে। মেয়েটির পরিবারের দাবি, ধর্ষণের বিষয়টি তাঁরা জানতেন না। মেয়েটি যে অন্তঃসত্ত্বা সেটাও অনুমান করতে পারেননি। যখন বিষয়টি জানতে পারেন ততদিনে ২৪ সপ্তাহ পেরিয়ে গিয়েছে। এরপরই পরিবারের লোকেরা কিশোরীর এত অল্পবয়সে মা হওয়ার শারীরিক ঝুঁকি, মানসিক ধাক্কা ও সামাজিক সমস্যার কথা ভেবে গর্ভপাতের আবেদন জানিয়ে কলকাতা হাই কোর্টের দ্বারস্থ হন। দেশের আইন অনুযায়ী, ২৪ সপ্তাহের পরে গর্ভপাত করাতে হলে আদালতের অনুমতির প্রয়োজন। মেডিক্যাল বোর্ডের রিপোর্টের ভিত্তিতে গত ২১ অগাস্ট কলকাতা হাই কোর্ট একটি নির্দিষ্ট হাসপাতালে নাবালিকার গর্ভপাত করানোর নির্দেশ দেয়।
কলকাতা হাইকোর্ট নির্দেশ দিলেও গর্ভপাত করানো সম্ভব হয়নি কিশোরীর। কলকাতার এক হাসপাতালের চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, সাড়ে ছ’মাসে গর্ভস্থ ভ্রূণ প্রায় পূর্ণাঙ্গ সন্তানেরই রূপ নেয়। অনেক শিশু ছয়-সাড়ে ছয় মাসে জন্মও নেয়। ওই নাবালিকার ক্ষেত্রে অস্ত্রপচার করে সাড়ে ছ’মাসের ভ্রূণ শরীর থেকে আলাদা করতে গেলে শারীরিক সমস্যার আশঙ্কা ছিল। নাবালিকার ভবিষ্যতের জন্যও তা ঠিক হত না। তাই আদালতের নির্দেশমতো গত ২২ অগাস্ট নির্যাতিতাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলেও সেখানে তার গর্ভপাত করা হয়নি। ২৪ অগস্ট ওই নাবালিকা ৯০০ গ্রাম ওজনের এক কন্যাসন্তানের জন্ম দেয় অস্ত্রপচার ছাড়াই। হাসপাতাল সূত্রের খবর, নাবালিকা ও শিশু সুস্থ রয়েছে। তবে গত শুক্রবার ওই নাবালিকাকে হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়। আপাতত তাকে একটি হোমে রাখা হয়েছে। তবে আপাতত শিশুটিকে ‘নিয়োনেটাল ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে’ রাখা হয়েছে।
নির্যাতিতার মা বলেন,”শিশুর কান্নার শব্দ শুনে খারাপ লাগছে। কিন্তু আমার মেয়ে যদি পরিণত হত এবং যদি সুস্থ ভালবাসার সম্পর্কের ফলে ওই সন্তান জন্মাত, তা হলে তাকে গ্রহণ করতাম। এখন আমাদের কিছু করার নেই। আইন মেনে ওই সন্তানকে কেউ গ্রহণ করলে আমাদের আপত্তি নেই।’’ শিশুর ডিএনএ পরীক্ষা নিয়ে তিনি বলেন, ‘‘তিন জন অভিযুক্তের মধ্যে শিশুর বাবা কে, সেটা জানতে চাই। তাতে বোঝা যাবে, মূল অভিযুক্ত কে। তবে অভিযুক্তদের সকলের চরম শাস্তি চাই।’’
যেহেতু নাবালিকার পরিবার গর্ভপাত করানোর দাবি জানিয়েছিল, তাই আইন অনুযায়ী, ওই সদ্যোজাতের অভিভাবক এখন রাজ্য সরকার। ঘটনার মূল অভিযুক্তকে চিহ্নিত করতে শিশুটির ডিএনএ পরীক্ষা করা হয়েছে। আপাতত শিশুটিকে ‘নিয়োনেটাল ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে’ রাখা হয়েছে।
পূর্ব মেদিনীপুর জেলা শিশু সুরক্ষা অফিসার আলোক বেরা বলেন, ‘‘নাবালিকার পরিবার গর্ভপাত করাতে চেয়েছিল। অর্থাৎ, নির্যাতিতার শরীর থেকে শিশুটিকে আলাদা করতে চেয়েছিল। চিকিৎসকেরা তাই করেছেন। শিশুটি জীবিত আছে। আইন অনুযায়ী, শিশুর বর্তমান অভিভাবক ‘কলকাতা চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটি’। তারা আইন মেনে শিশুটিকে দত্তক দিতে পারে। আমাদের এখন কাজ হল, নির্যাতিতা যাতে সমাজের মূল স্রোতে ফিরে আসে, তার জন্য উপযুক্ত পদক্ষেপ করা।’’
জেলা পুলিশের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘অভিযুক্ত তিন জনের মধ্যে এক জনের সঙ্গে শিশুর ডিএনএ-র নমুনা মিলে গেলে আমরা নিশ্চিত হব, অপরাধ ওই তিন জনই সংগঠিত করেছিল। যদি ডিএনএ তিন জনের সঙ্গে না মেলে, তা হলে তদন্ত অন্য দিকে মোড় নেবে। তখন বুঝতে হবে যে, তিন জনের বাইরে কোনও অপরাধী রয়েছে।’’
