মাদারিহাট: একের পর এক গন্ডার মেরে ধরা পড়ার পর জেল খেটেও স্বভাব বদলায়নি। জেল থেকে বেরিয়ে সে ফের একই কাজ শুরু করে। গন্ডার নিধনের সেই কিংপিং রিকষ নার্জারিকে এবারে কামরূপ থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
২০১৪ সাল থেকে আজ পর্যন্ত জলদাপাড়া ও গরুমারায় যতগুলি গন্ডার শিকার হয়েছে রিকষই মূলত তার পিছনে ছিল। সে ফালাকাটা ব্লকের শালকুমার গ্রাম পঞ্চায়েতের বাদাইটারি আভাড়ুপাড়া গ্রামের বাসিন্দা। ২০১৬ সালে ধরা পড়ার পর তিন বছর জেল খেটে ২০১৯ সালে সে জামিনে ছাড়া পায়। কিন্তু ছাড়া পেয়েই সে আবার একই কাজ শুরু করে। ২০১৯ সালে আলিপুরদুয়ার আদালত এই গন্ডার শিকারির বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট জারি করে। তাকে ধরতে বন দপ্তর ও আলিপুরদুয়ার জেলা পুলিশ মিলে ১৯ মার্চ যৌথ অপারেশন চালায়। রিকষ অসমের কামরূপ জেলার এক গোপন ডেরায় রয়েছে বলে তাদের কাছে ছবি সহ খবর আসে।
জলদাপাড়ার বনাধিকারিক পারভিন কাসোয়ান বললেন, ‘২০১৪ সালের পর থেকে জলদাপাড়ায় যতগুলি গন্ডার শিকার হয়েছে তার প্রতিটির সঙ্গেই রিকষের সরাসরি হাত ছিল। ওকে কামরূপ থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। বৃহস্পতিবার ওকে আলিপুরদুয়ার আদালতে তোলা হয়।’ একবার জেল খেটেও কীভাবে আবার সেই একই অপরাধ শুরু করা?
বন দপ্তর সূত্রে খবর, জামিনে ছাড়া পেয়েই রিকষ মণিপুর চলে যায়। সেখানে চূড়াচাঁদপুর গ্রামে ঘাঁটি গাড়ে। আবার গন্ডার শিকারের পরিকল্পনা করে। সেখানেই মণিপুর, অসম ও পশ্চিমবঙ্গের দুষ্কৃতীদের নিয়ে সে গন্ডার শিকারের একটি টিম তৈরি করে। রিকষকে ধরার জন্য ২০১৯ সালে ওয়ারেন্ট জারি করা হয়েছিল। কারণ, ২০১৯ সালের ৩০ অক্টোবর জলদাপাড়া নর্থ রেঞ্জের ৫০ বিটের জেপি ৫ কম্পার্টমেন্টে যে গন্ডারটি শিকার করা হয়েছিল সেটার সঙ্গে রিকষের সরাসরি যোগসূত্র মিলেছিল। ২০২১ সালের ৪ এপ্রিল চিলাপাতা রেঞ্জের বানিয়া বিটের ১ এবং ২ কম্পার্টমেন্টে যে পূর্ণবয়স্ক মাদি গন্ডার শিকার হয়েছিল সেটার সঙ্গেও রিষকের সরাসরি যোগসূত্র মেলে। তারপর থেকে তাকে ধরতে জোরকদমে অভিযান শুরু হয়।
জলদাপাড়ার বনাধিকারিকের কথায়, ‘রিকষ বেশ কয়েকটি ভাষায় সাবলীলভাবে কথা বলতে পারে। নিজে গন্ডার শিকারের পাশাপাশি এই কাজের জন্য সে বিশেষজ্ঞদেরও নিয়োগ করত। গন্ডার শিকারের জন্য সে তাদের টাকাও দিত। এমনকি এই কাজের জন্য সে স্থানীয়দেরও ব্যবহার করত। গন্ডার শিকার করার জন্য বন্দুকের জোগান দেওয়া থেকে শুরু করে আন্তর্জাতিক বাজারে খড়্গ বিক্রি, সমস্ত কিছুরই মূলে সেই ছিল। ঘন ঘন মোবাইল ফোন পরিবর্তন করা থেকে নিজের ঠিকানাও পালটাত।’
২০১৪ সালে জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যানে তিনটি গন্ডার শিকার হয়েছিল। সেগুলিকে হলং বিট, কোদালবস্তি বিট এবং ৫০ ফুট বিটে শিকার করা হয়। ২০১৫ সালে মেন্দাবাড়ি বিটে একটি, হলং বিটে দুটি এবং চিলাপাতা বিটে একটি গন্ডার মারা হয়। ২০১৮ সালে কোদালবস্তি বিটে আরেকটি গন্ডার শিকার হয়। ২০১৯ সালে ৫০ ফুট বিটে আরেকটি গন্ডার মারা হয়। ২০২১ সালের ৪ এপ্রিল চিলাপাতা রেঞ্জের বানিয়া বিটে শেষবারের মতো একটি গন্ডারকে খুন করা হয়েছিল। ওই বছরের পর থেকে জলদাপাড়ায় আর গন্ডার শিকার হয়নি বলে বন দপ্তরের দাবি।