উত্তরবঙ্গ সংবাদ ডিজিটাল ডেস্কঃ আরও বিপাকে জলপাইগুড়ি যুব তৃণমূলের জেলা সভাপতি সৈকত চট্টোপাধ্যায়। দম্পতিকে আত্মহত্যার প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে এই তৃণমূল নেতার বিরুদ্ধে। হাইকোর্টেও মেলেনি জামিন। গ্রেপ্তারি এড়াতে দীর্ঘদিন ধরেই পুলিশের খাতায় ফেরার তিনি। তাঁর নাগাল পেতে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা চেয়ে এদিন সিজেএম আদালতে আবেদন করেন তদন্তকারী অফিসার। আদালতের নির্দেশে সৈকতের বিরুদ্ধে জারি হয়েছে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা। জানিয়েছেন আদালতের সহকারী সরকারি আইনজীবী মৃন্ময় বন্দোপাধ্যায়। আদালত থেকে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হওয়ায় সৈকতকে দেশের যেকোন জায়গা থেকে গ্রেপ্তার করতে আর কোনও বাধা থাকল না।
গত ১ এপ্রিল জলপাইগুড়ির পান্ডাপাড়ার বাসিন্দা সুবোধ ও অপর্না ভট্টাচার্য আত্মহত্যা করেন। সুইসাইড নোটে সৈকত চট্টোপাধ্যায় সহ চারজনের বিরুদ্ধে আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগ করে যান দম্পতি। প্রথম দিকে প্রভাবশালী এই তৃণমূল নেতাকে ধরতে সাহস দেখায়নি পুলিশ। গত ১৬ জুন হাইকোর্টে তাঁর আগাম জামিনের আবেদন খারিজ হয়ে যাওয়ার পরেই তিনি শহর ছেড়ে পালিয়ে যান। গত এক মাসের বেশি সময় ধরে তিনি পুলিশের নজর এড়াতে গা ঢাকা দিয়ে রয়েছেন। অন্যদিকে তিনি সুপ্রিম কোর্টের দারস্থ হয়েছেন বলেও সূত্রের খবর। কিন্তু সুপ্রিম কোর্টে কবে তাঁর সেই মামলার শুনানি হবে সেই বিষয়ে এখনও কিছু জানা যায়নি। সুপ্রিম কোর্টে সৈকতের মামলটির শুনানি যাতে একতরফা না হয়, তার জন্য ক্যাভিয়েট ফাইল করেছেন দম্পতি আত্মহত্যার মামলার অভিযোগকারি তথা বিজেপি বিধায়ক শিখা চট্টোপাধ্যায়।
অভিযোগকারী শিখা চট্টোপাধ্যায়ের অভিযোগ ছিল, তাঁর ভাই সুবোধ ও ভাইয়ের স্ত্রী অপর্ণাকে আত্মহত্যায় প্ররোচনা দিয়েছেন জলপাইগুড়ি পুরসভার বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান সৈকত চট্টোপাধ্যায় ও কাউন্সিলর সন্দীপ ঘোষ। থানায় সৈকতবাবু ও সন্দীপবাবু সহ মোট চারজনের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন এই বিজেপি বিধায়ক। শিখাদেবীর দাবি, জলপাইগুড়ি শিশু পাচার কাণ্ডের পর্দাফাঁস করেছিলেন তাঁর ভাই সুবোধ ভট্টাচার্য। সুবোধবাবুর অভিযোগের ভিত্তিতে হোমের কর্ণধার চন্দনা চক্রবর্তীর জেল হয়। কিন্তু সেখানে সৈকত চট্টোপাধ্যায়ের নাম থাকলেও প্রভাব খাটিয়ে মামলা থেকে তিনি অব্যহতি পেয়ে যান। এরপর থেকে সৈকতবাবু সুবোধবাবুর উপর বিভিন্নভাবে চাপ সৃষ্টি করেছিলেন, যা সুইসাইড নোটে উল্লেখ রয়েছে।
জলপাইগুড়ি জেলা পুলিশ সুপার খান্ডবাহালে উমেশ গনপথ বলেন, ‘দম্পতি আত্মহত্যার মামলার অভিযুক্ত সৈকত চট্টোপাধ্যায় দীর্ঘদিন ধরে ফেরার। এদিন আমরা আদালতের কাছে তাঁর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানার আবেদন জানিয়েছিলাম। আমাদের আবেদন আদালত মঞ্জুর করেছে। এটা তদন্তের একটা অংশ। আদালতের থেকে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হলে সেক্ষেত্রে তাঁকে যেকোন সময় যেকোন জায়গা থেকে পুলিশ গ্রেপ্তার করতে পারবে।’
উল্লেখ্য শহরের পান্ডাপাড়ার দম্পতি আত্মহত্যার মামলায় যে চার জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে তাদের মধ্যে মূল অভিযুক্ত জলপাইগুড়ি পুরসভার ভাইস চেয়ারম্যান তথা তৃণমূলের জেলা যুব সভাপতি সৈকত চট্টোপাধ্যায়। এই মামলার বাকি তিন অভিযুক্তর মধ্যে ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলার সন্দীপ ঘোষ এবং সোনালী বিশ্বাস ৬০ দিন জেল হেপাজতে থাকার পর সম্প্রতি জামিনে মুক্তি পেয়েছেন। বর্তমানে জেলা হেপাজতে রয়েছেন অপর অভিযুক্ত মনোময় সরকার।
প্রশ্ন উঠেছে তাহলে কি সৈকত রাজ্যের বাইরে রয়েছে এমন কোন তথ্য পুলিশের হাতে এসেছে? শুধু তাই নয় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হওয়ার পর একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সৈকত আত্মসমর্পণ বা পুলিশ গ্রেপ্তার করতে না পারলে, সেক্ষেত্রে পরবর্তীতে তাঁর সম্পত্তি ক্রোক করার নির্দেশ দিতে পারে আদালত।