শমিদীপ দত্ত, শিলিগুড়ি: দাম বাড়ছে ব্রাউন সুগারের। তাই উত্তরবঙ্গজুড়েই নেশাগ্রস্তরা খুঁজে নিয়েছে নেশা করার ‘সস্তা ও বিকল্প’ উপায়। শিলিগুড়ি শহরে এখন রমরমিয়ে চলছে তিন কম্পোজিশনের নেশা।
এই নতুন নেশা ঠিক কী? শিলিগুড়ি শহরের মাদকাসক্তদের একটা অংশ এখন ইনজেকশনের মাধ্যমে নেশা করছে। সেই ইনজেকশনের সিরিঞ্জে থাকছে তিন ধরনের ওষুধের মিশ্রণ। পুলিশের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যে জানা গিয়েছে, সর্দি-কাশির ওষুধ, গায়ে ব্যথার ওষুধ ও ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে ইনজেকশনের মাধ্যমে শরীরে নেওয়া হচ্ছে। এতে বিপদ কতখানি? চিকিৎসকরা বলছেন, এই ‘কম্পোজিশন’-এর ওভারডোজ হলে কোনও ব্যক্তি কোমায় পর্যন্ত চলে যেতে পারেন।
এই তিনটে ওষুধের মিশ্রণ শরীরে কীভাবে তাৎক্ষণিক প্রভাব ফেলতে পারে, তা নিয়ে কথা হচ্ছিল আইএমএ শিলিগুড়ি শাখার সম্পাদক, ডাঃ শঙ্খ সেনের সঙ্গে। তিনি বলছিলেন, ‘এই কম্পোজিশন কেউ শরীরে নিলে ঘুম ঘুম পাবে। শরীরে ব্যথা থাকলে সেটাও কমবে। ফলে আরাম লাগবে। সার্দি-কাশির কমারও ওষুধ ওর মধ্যে মিশে থাকায় নেশার ভাব তো থাকবেই।’
পুলিশ বলছে, শহরে নেশার সামগ্রীগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি চাহিদা রয়েছে ব্রাউন সুগারের। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সেই ব্রাউন সুগারের দাম বাড়ছে। বছর দুয়েক আগে যে পরিমাণ ব্রাউন সুগারের দাম দুশো টাকা ছিল, এখন সেই একই পরিমাণ মাদকের দাম প্রায় সাড়ে তিনশো টাকা। তাই এখন এই ওষুধ মিলিয়ে নেশা করার দিকে ঝোঁক বাড়ছে। ওই তিনটে ভায়াল ও ইনজেকশন মিলিয়ে দাম নেওয়া হচ্ছে ১২০ টাকা। আর নেশাগ্রস্তদের কথায়, ‘এই ইনজেকশন নিলে শরীরে একধরনের এনার্জি আসে।’ যদিও সেই ‘এনার্জি’ তাদের স্বাস্থ্যের উপর চরম ক্ষতিকারক প্রভাব ফেলছে। এমনকি নেশার খরচের টাকা জোগাড়ে তাদের নানা অপরাধমূলক কাজের দিকেও ঠেলে নিয়ে যাচ্ছে। অথচ সেদিকে তাদের হুঁশই নেই। চিকিৎসক শঙ্খ বলছেন, ‘ওভারডোজ হলে কোমাই শুধু নয়, হার্ট অ্যাটাক করে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।’
প্রশ্ন উঠছে, স্থানীয় ওষুধ ব্যবসায়ীদের হাত থেকেই কি এধরনের ওষুধ মাদক ডিলারদের হাতে পৌঁছে যাচ্ছে? নাকি বাইরে থেকে ইনজেকশন ভায়াল আসছে? তা নিয়ে তদন্তে নেমেছে পুলিশ। যদিও কোনও দোকানের মাধ্যমে এধরনের ওষুধ বিনা প্রেসক্রিপশনে কারও হাতে তুলে দেওয়া হলে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়ে দিয়েছেন বেঙ্গল কেমিস্ট অ্যান্ড ড্রাগিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের দার্জিলিং জেলা সম্পাদক বিজয় গুপ্ত। তিনি বলেন, ‘কোনও দোকানদার যদি অবৈধভাবে এধরনের ওষুধ বিক্রি করে, তাহলে তার বিরুদ্ধে প্রশাসন কড়া ব্যবস্থা নেবে। আমরা ওই ব্যবসায়ীর সদস্যপদ বাতিল করে দেব।’