রায়গঞ্জঃ জমিতে ধান কাটতে গিয়ে এক নাবালিকার পায়ে ছোবল দেয় বিষধর সাপ। তাঁকে উদ্ধার করে নিয়ে আসা হলে রায়গঞ্জ হাসপাতালে মৃত্যু হয় ওই নাবালিকার। নাবালিকার মৃত্যুর পরই প্রাণ ফেরাতে ওঝার কাছে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা পরিবারের লোকের। হাসপাতালের তরফে দেহটি দিতে অস্বিকার করায় মৃতার আত্মীয় পরিজনরা বচসায় জড়িয়ে পড়ে। পরে পুলিশের হস্তক্ষেপে ঝামেলা মিটলে ময়নাতদন্তের জন্য দেহটি পাঠায় হাসপাতালের মর্গে। ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে মৃত নাবালিকার নাম রেশমা খাতুন(১৩), বাড়ি ইটাহার থানার সুরুন(১) গ্রাম পঞ্চায়েতের গোড়াহার গ্রামে। ওই নাবালিকা ইটাহার ব্লকের বালুচল হাই স্কুলের নবম শ্রেণী ছাত্রী। মঙ্গলবার সকালে নাবালিকা তাঁর বাবার সঙ্গে মহানন্দা নদী লাগোয়া গোড়াহার বিলে ধান কাটতে গিয়েছিল। ধান কাটার সময় আচমকাই তাঁর বাঁ পায়ে একটি বিষধর সাপ ছোবল মারে। সঙ্গে সঙ্গে ওই নাবালিকাকে উদ্ধার করে রায়গঞ্জ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসলে কিছুক্ষণের মধ্যেই মৃত্যু হয় সাপে কাঁটা রোগীর। কর্তব্যরত চিকিৎসক ওই নাবালিকাকে মৃত ঘোষণার পরই মৃতদেহ ময়নাতদন্তের জন্য নির্দেশ দেন।
নাবালিকার মৃত্যুর পরই মৃতার পরিবারের লোকেরা ময়নাতদন্ত না করিয়ে মৃতদেহ নিয়ে যেতে চান। তাদের বক্তব্য, ওঝার কাছে নিয়ে গিয়ে ঝাড়ফুঁক করলেই প্রাণ ফিরে পাবেন মৃত নাবালিকা। কিন্তু চিকিৎসকের সাফ জবাব মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানতে ময়নাতদন্ত করাতে হবে। তারা মৃতদেহ ময়না তদন্ত ছাড়া পরিবারের হাতে দেবে না। এর পরই বচসায় জড়িয়ে পরে দুই পক্ষ। বচসা তীব্র আকার নেয়। হাসপাতাল চত্ত্বরে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছে পুলিশ পরিস্থিতি সামাল দেয়।
মৃত নাবালিকার মা নুরকামারি বিবি বলেন, আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস মেয়ের মৃত্যু হয়নি ওঝার কাছে নিয়ে গেলে আমার মেয়ে বেঁচে যেত। চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের বারংবার অনুরোধ করলেও তারা আমাদের কথা শুনলেন না। মৃত নাবালিকার বাবা জাহিরুল হক বলেন, “আমার মেয়ের বা পায়ে সাপে কাটার সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালে নিয়ে আসি। ওই অবস্থায় লিফটে উড়তেই কুড়ি মিনিট সময় লেগে যায়। এরপর মেডিসিন বিভাগে নিয়ে গেলে ৫ মিনিটের মধ্যে চিকিৎসক মৃত বলে ঘোষণা করেন। হাসপাতালে চিকিৎসার কোন সুযোগই পায়নি। এভিএস দেওয়ার ও সুযোগ হয়নি। হাসপাতালে না নিয়ে এসে ওঝার কাছে নিয়ে গেলে অকালে আমার মেয়েকে হারাতে হতো না। চিকিৎসককে বারংবার বলেছি আমরা রোগীকে ছেড়ে দেন ও যার কাছে নিয়ে গেলেই বেঁচে যাবে কিন্তু আমাদের কথা শোনেনি।
রায়গঞ্জ মেডিকেল কলেজের মেডিসিন বিভাগের চিকিৎসক অরবিন্দ রায় বলেন, মৃতার পরিবারের তরফ থেকে বলা হয়েছিল ওই মৃতকে ওঝার কাছে নিয়ে গিয়ে জীবিত করবে। কিন্তু আমরা তা দেইনি। মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানতে ময়না তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। রায়গঞ্জ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহকারি অধ্যক্ষ প্রিয়ঙ্কর রায় বলেন,“অস্বাভাবিক মৃত্যু হলেই পোস্টমর্টেম করা বাধ্যতামূলক। এদিনের ঘটনাও ব্যতিক্রম নয়। মৃতদেহ ময়নাতদন্ত করে পরিবারের হাতে দেওয়া হয়েছে।”