উত্তরবঙ্গ সংবাদ ডিজিটাল ডেস্কঃ ২৪ বছর আগের গাইসাল রেল দুর্ঘটনার স্মৃতি আজও দগদগে। গভীর রাতে দুই মেল ট্রেনের মুখোমুখী সংঘর্ষের কথা মনে পড়লে আজও শিহরিত হয়ে ওঠেন উত্তর দিনাজপুর জেলার বাসিন্দারা। আজও শিরদাঁড়া দিয়ে বয়ে যায় একটা ঠান্ডা স্রোত। সেই রেল দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছিলেন ৩০০ জন যাত্রী। গাইসালের সেই নির্মম স্মৃতিকে এবার উসকে দিল শুক্রবার রাতের বালেশ্বরের রেল দুর্ঘটনা। গাইসালের বাসিন্দাদের মনের ভেতর চাপা আতঙ্ক যেন সেই দগদগে স্মৃতির দরজায় কড়া নাড়ল।
উত্তর দিনাজপুর জেলার গাইসাল একটি ছোট রেলস্টেশন। এই ছোট রেলস্টেশনটির নাম রাতারাতি জেনে গিয়েছিল গোটা ভারত। একটি ভয়ঙ্করতম রেল দুর্ঘটনা গাইসালকে এনে দিয়েছিল সংবাদ শিরোনামে। দিনটি ছিল ১৯৯৯ সালের ২ অগাষ্ট। গভীর রাতে মুখোমুখি সংঘর্ষ ঘটেছিল অসম এক্সপ্রেস আর ব্রহ্মপুত্র মেলের। প্রাণ গিয়েছিল কমপক্ষে ৩০০ যাত্রীর। প্রায় দু’দশক পেরিয়ে এসেও সেই বীভৎসতার কথা ভুলতে পারেনি গাইসাল তথা ইসলামপুরবাসী। শুক্রবার ওডিশার বালেশ্বরের ট্রেন দুর্ঘটনার খবর পেয়ে গাইসালের ভয়াবহতার স্মৃতি ভেসে উঠল ইসলামপুরবাসীর।
গাইসালের রেল দুর্ঘটনা প্রসঙ্গে ইসলামপুর পুরসভার তৎকালীন পুরপতি কানাইয়ালাল আগরওয়াল বলেন, গতকালের বালেশ্বরের দুর্ঘটনা মনে করিয়ে দিল গাইসালের দুর্ঘটনার বীভৎসতার কথা। দুটো ট্রেনের মুখোমুখি সংঘর্ষে যে ভয়ানক দুর্ঘটনা ঘটেছিল তার বিবরণ দিতে গেলে এখনও গা শিউরে ওঠে। প্রায় ছয় দিন ধরে আমরা দুর্ঘটনাস্থলেই পড়েছিলাম এবং উদ্ধার কার্যে সক্রিয় ভূমিকা নিয়েছিলাম। চারিদিকে শুধু মৃতদেহ পড়েছিল সেই স্মৃতি বড়ই কষ্টদায়ক।
গাইসাল স্টেশনের কাছে এক চা বিক্রেতা নরেশ দাস বলেন, “কালকের অ্যাক্সিডেন্ট টিভিতে দেখে গাইসালের কথা মনে পড়ে যাচ্ছে। গাইসালেও এমনই ট্রেনের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়েছিল। রাতের বেলা বিকট আওয়াজ শুনে এসে দেখি ট্রেন দুর্ঘটনা হয়েছে। প্রচুর লোক মারা গিয়েছিল। গ্যাস কাটার দিয়ে বগি কেটে মৃতদেহ বের করা হয়েছিল। খুব ভয়ানক ছিল সে অভিজ্ঞতা।”
ইসলামপুরের আরেক বাসিন্দা কাজল কুমার মণ্ডলের কথায়, “তখন মাধ্যমিক পরীক্ষা দিই। শিক্ষকের সঙ্গে গাড়ি করে গাইসালে যাই দুর্ঘটনা দেখতে। তবে ঘটনাস্থলে গিয়ে ঘটনার ভয়াবহতা দেখার মতো সাহস হয়নি। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বাড়ি ফিরে এসেছিলাম। তবে সেদিনের সাক্ষী বহনকারী সকলেরই একটাই কথা, গাইসাল হোক কিংবা বালেশ্বর, রেল দুর্ঘটনা এড়াতে রেল কর্তৃপক্ষের আরও সজাগ ও যাত্রী সুরক্ষায় নজর দেওয়া উচিৎ।