বালুরঘাট: বালুরঘাট বিমানবন্দর চালুর জন্য তা নতুন করে সংস্কারের উদ্যোগ নেয় বর্তমান সরকার। কয়েক কোটি টাকা দিয়ে সংস্কার করা হয় বালুরঘাট বিমানবন্দর। একাধিকবার বিমানবন্দর চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত উড়ান চালু করা সম্ভব হয়নি। মাঝে কিছুদিন হেলিকপ্টার পরিষেবা থাকলেও সেটিও বন্ধ হয়ে গিয়েছে। বর্তমানে আগাছাতে ভরে গিয়েছে গোটা বিমানবন্দর। এদিকে বালুরঘাট বিমানবন্দর নতুন করে চালু করার উদ্যোগ নিয়েছে দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা প্রশাসন। ইতিমধ্যেই এনিয়ে একাধিক উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার মাহিনগরে রয়েছে বালুরঘাট বিমানবন্দর। প্রায় ১৫২ একর জমির মধ্যে রয়েছে ২ কিলোমিটার রানওয়ে। বড় মাপের ইল্যুশান বা গজরাজ এবং জেট গোত্রের বিমান এখান থেকে না চললেও সব ধরনের প্রপেলার চালিত বিমান এখান থেকে চলতে পারবে। তবে বৃহৎ এলাকার বিস্তীর্ণ জমি, এয়ার স্ট্রিপ, প্যাসেঞ্জার লাউঞ্জ, এয়ার ট্রাফিক সহ বিমান পরিষেবার সমস্ত সুবিধাযুক্ত বালুরঘাট বিমানবন্দরটি দীর্ঘদিন ধরে পরিত্যক্ত অবস্থায় ছিল। প্রায় ৩০ বছরের উপরে এই বিমানবন্দর থেকে বিমান চলাচল করেনি বিগত সরকারের সদিচ্ছার অভাব বলেই বারবার অভিযোগ তোলা হয়েছে।
অবশেষে বর্তমান রাজ্য সরকারের উদ্যোগে ফের বিমান পরিষেবা চালু করার উদ্যোগ নেওয়া হয়। ২০১৬ সালের প্রথম দিকে বালুরঘাট বিমানবন্দরের কাজ শুরু করছিল পূর্ত দপ্তর। এই কাজে ১১ কোটি ৩৫ লক্ষ টাকা বরাদ্দে বিমানবন্দরের ভেঙে যাওয়া রানওয়ে থেকে শুরু করে এয়ার স্ট্রিপ, প্যাসেঞ্জার লাউঞ্জ, এয়ার ট্রাফিক, স্ক্রু এবং পাইলটদের রেস্ট রুম, প্রয়োজন মতো রেস্তোরাঁ , রিফ্রেশমেন্ট কাউন্টার এবং অন্যান্য সমস্ত কিছু একেবারে নতুনভাবে তৈরি হয়েছে। লম্বায় ১৩৭৫ মিটারের রানওয়েকে সামান্য বাড়িয়ে করা হয়েছে ১৪৯৫ মিটার। পরবর্তীতে আরও কিছুটা রানওয়ে বাড়ানোর কথা বলা হয়। বর্তমানে যে রানওয়ে আছে তাতে করে ছোট বিমান চলাচল করতে পারবে।
কিন্তু আধুনিক মানে এই সমস্ত জিনিসপত্র তৈরি করেও বর্তমানে এয়ারপোর্টের রানওয়ে ছাড়া বাকি অংশ ঘন জঙ্গলে পরিপূর্ণ। দিনের বেলাতেও লোকে ঢুকতে ভয় পাবে। রানওয়ের আশেপাশেও গজিয়ে উঠেছে বড় বড় গাছ, ঘাসে ঢেকেছে অন্যান্য এলাকা। অথচ পরিকাঠামো উন্নয়নের খাতে কোটি কোটি টাকা ব্যয় করা হয়েছে।
এবিষয়ে মাহিনগরের বাসিন্দা প্রশান্ত মণ্ডল বলেন, ‘বাড়ির পাশের পরিত্যক্ত বিমানবন্দর চালু হবে। এমনটা শোনার পর ভেবেছিলাম এলাকার আর্থসামাজিক উন্নয়ন ঘটবে। জোরকদমে সংস্কারের কাজ শুরু হল। কিন্তু দেখেছি কিছুদিন পর সব একই অবস্থায় রয়েছে।‘
বিজেপির জেলা সাধারণ সম্পাদক বাপী সরকার বলেন, ‘তৃণমূল সরকারের কাজই শুধু ভাওতাবাজি দেওয়া। বিমানবন্দর নিয়েও একই রকমভাবে ভাওতাবাজি দেওয়া হয়েছে জেলাবাসীকে। বিমান চালানোর ইচ্ছাই নেই সরকারের। সংস্কারের নামে শুধু কাটমানি খেয়েছে তৃণমূল নেতারা। কয়েক কোটি টাকা দিয়ে সংস্কার করা বিমানবন্দরের সম্পত্তি বর্তমানে নষ্ট হচ্ছে। এনিয়ে আগেও আমরা আন্দোলন করেছি আগামীদিনেও আন্দোলন করব।‘
তৃণমূলের জেলা সহ সভাপতি সুভাষ চাকি বলেন, ‘বালুরঘাট বিমানবন্দর চালুর জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ইতিমধ্যে বিমানবন্দরের সংস্কারের কাজ শেষ হয়েছে। অজানা কিছু অজুহাতে কেন্দ্রীয় সরকারের গাফিলতির কারণে বিমান চলাচল করছে না। আবার রাজ্য সরকার ও জেলা প্রশাসন বিমানবন্দর চালুর উদ্যোগ নিয়েছে। বিমান চালুর সব রকম ভাবে চেষ্টা চালানো হচ্ছে। তৃণমূল ভাওতাবাজি দেয় না। বালুরঘাট ও কোচবিহার বিমানবন্দর চালুর উদ্যোগ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নেয়। যার মধ্যে কোচবিহার ইতিমধ্যে চালু হয়েছে। তৃণমূল নয় ভাওতাবাজি দেয় বিজেপি।‘
অন্যদিকে এবিষয়ে জেলাশাসক বিজিন কৃষ্ণা বলেন, ‘বালুরঘাট বিমানবন্দর চালুর জন্য উপযোগী রয়েছে। সম্ভাবনাও অনেক আছে। ভালো রানওয়ে আছে। রাজ্য সরকার এই বিমানবন্দর চালুর জন্য আগ্রহী রয়েছে। পরিবহন দপ্তর ইতিমধ্যেই কাজ শুরু করে দিয়েছে। আগামী কিছুদিনের মধ্যে পরিবহন দপ্তরের পক্ষ থেকে বিমানবন্দর পরিদর্শন করবে। কয়েক মাসের মধ্যে বালুরঘাট বিমানবন্দর থেকে উড়ান চালুর পরিকাঠামো তৈরি হয়ে যাবে।‘