বালুরঘাট: চারিদিকে যখন ‘জল ধরো, জল ভরো প্রকল্প’-র দামামা। ১০০ দিনের কাজে পুকুর খনন করে জল সংরক্ষণের বার্তা দেওয়া হচ্ছে। ঠিক তখনই বালুরঘাটে (Balurghat) জলাশয় (reservoir) ভরাট করে কংক্রিটের নির্মাণ কাজের পথে হাঁটছে শহর। শহরের ৯ নম্বর ওয়ার্ডে আস্ত পুকুরে কোথাও খুঁটি, আবার কোথাও সিমেন্টের পিলার পুঁতে জায়গা চিহ্নিত করা হয়েছে। আবর্জনা ও রাবিশ ফেলে বুজিয়ে ফেলা হচ্ছে ডোবাটি। যা নিয়ে ইতিমধ্যেই সরব হয়েছে পরিবেশকর্মীরা। পুরসভা (Municipality) বিষয়টি খতিয়ে দেখবে বলে আশ্বস্ত করেছে।
শহর হোক কিংবা গ্রাম, পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার ক্ষেত্রে পুকুর বা জলাশয়ের গুরুত্ব সকলেরই জানা। কিন্তু এখনও প্রচুর অসচেতন মানুষ পুকুর ভরাট করে চলেছে। যার ফলে বিপদ আরও নেমে আসছে। কারণ বন্যার সময় এলাকা জলমগ্ন হয়ে উঠলে, সেখান থেকে জল এসে পুকুরে জমা হয়। কিন্তু পুকুর ভরে গেলে বন্যা প্রকট আকার ধারন করবে। তাছাড়াও, শহরে পুকুর থাকলে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে। ক্রমশ পুকুর ভরাট হওয়ার ফলে শহরের উষ্ণতা ক্রমশ বেড়ে চলেছে। তবু হুঁশ নেই কারও। এখনও নামাবঙ্গি স্কুলের পেছনে দেদারে পুকুর ভরাট চলছে। দ্রুততার সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে পুরসভার হস্তক্ষেপের দাবি জানাচ্ছেন পরিবেশকর্মীরা।
কয়েক বছর আগে ওই পুকুরের অংশ বিক্রি করেছেন সীমা সাহা। তিনি বলেন, ‘ওই জায়গাগুলি অনেক ভাগের ছিল। সেগুলি একাধিক মানুষ কিনেছে। অনেকেই এখন সেখানে বাড়ি করার জন্য রাবিশ ফেলছে। ট্র্যাক্টর আসতে দেখছি। তবে প্রতিবেশীদের আপত্তি নেই।’ রাবিশ ফেলে ক্রমশ জলাশয় ভরাট করার পক্ষে যুক্তি গেয়েছেন সারদা সাহা। তার কথায়, ‘এই পুকুরে সকলে আবর্জনা ফেলে। বিভিন্ন রোগ দেখা যায়। পুরসভার তরফেও আবর্জনার গাড়ি এসে পুকুরের এক অংশ ভরে দিয়েছে। প্রচন্ড দুর্গন্ধ হয়। এটা ভরাট হলে সকলেই উপকৃত হবে।’ ওই জলাশয় থেকে কিছুটা দূরে বাড়ি প্রতাপ সরকারের। তার আক্ষেপ, ‘পুকুর ভরাট হতে দেখেও স্থানীয় কাউন্সিলার কিছুই বলছেন না। প্রতিবেশীরা মিলেমিশে থাকার জন্য অভিযোগ করছেন না, এতে এলাকার জলস্তরও কমে যেতে পারে। বন্যায় পরিস্থিতি খারাপ হয়ে উঠতে পারে। আশেপাশের মানুষদের বোঝালেও বুঝছেন না।’ পরিবেশকর্মী তুহিনশুভ্র মণ্ডলের দাবি, ‘এই পুকুরগুলো একটি শহরের কিডনি। এগুলো বন্ধ হওয়ার ফলে শহরের তাপমাত্রা বাড়তে থাকবে। পরিবেশের বাস্তুতন্ত্র বিঘ্নিত হবে। প্রশাসন ও পুরসভার দ্রুত পদক্ষেপ করা উচিত।’ বালুরঘাটের পুরপ্রধান অশোক মিত্রের আশ্বাস, ‘স্থানীয় কাউন্সিলারের সঙ্গে কথা হয়েছে। তিনি বিষয়টি শুনেছেন বলে জানিয়েছেন। তাঁকে দ্রুত এলাকায় যেতে বলেছি। কোনও জলাশয় ভরাট হলে আমরা বরদাস্ত করব না। দ্রুত আইনি পদক্ষেপ করব।’