নাগরাকাটা: পুজোর আগে বন্ধ হয়ে গেল নাগরাকাটার বামনডাঙা-টন্ডু চা বাগান। মঙ্গলবার গভীর রাতে লকআউট নোটিশ ঝুলিয়ে বেপাত্তা বাগান কর্তৃপক্ষ। এতে ঘোর বিপাকে পড়লো সেখানকার ১১১৪ জন শ্রমিকের পাশাপাশি বাগানের ওপরই রুটি রুজির জন্য নির্ভরশীল হাজার ছয়েক বাসিন্দা। মঙ্গলবার রাতে জারি করা লক আউটের নোটিশে মালিকপক্ষের অভিযোগ, সেখানকার একাংশ বাগান চালাতে অযাচিত নানা ধরনের হস্তক্ষেপ করছিল। ওই সিদ্ধান্ত নেওয়া ছাড়া তাঁদের আর কোন উপায় ছিল না। যদিও শ্রমিকরা একযোগে দাবি করেছেন, বোনাস-মজুরি যাতে না দিতে হয় সেকারনেই অজুহাত খাড়া করে পরিচালকরা বাগানটি বন্ধ করে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। বিডিও বিপুল কুমার মন্ডল বলেন, শ্রম দপ্তর বিষয়টি দেখছে। বাগানের শ্রমিকদের স্বাস্থ্য পরিসেবা পেতে যাতে কোন সমস্যা না হয় সেজন্য ব্লক স্বাস্থ্য দপ্তরকে বলা হয়েছে। শ্রম দপ্তরের মালবাজারের সহকারী শ্রম কমিশনার প্রণব কুমার দাস জানান, বৃহস্পতিবার মালিকপক্ষের সাথে ও শুক্রবার শ্রমিকদের সাথে আলাদা দুটি বৈঠক ডাকা হয়েছে।
বাগান পরিচালন কর্তৃপক্ষের তরফে সৌম্য ঘটক জানান, চরম আর্থিক সংকটের মাঝেও বাগান চালানো হচ্ছিল। দিনকে দিন কাঁচা পাতা তোলার পরিমান উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যাচ্ছিল। এলাকার বিজেপির এক গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্য ও এনজিও-র মদতে শ্রমিকদের একাংশ কাজ করতে চরম উদাসীনতা দেখাচ্ছিল। এর আগে একাধিকবার বৈঠক করা হলেও সমস্যা মেটে নি। এছাড়া আমাদের আর কোন বিকল্প ছিল না।
এর পাল্টা হিসেবে ওই এলাকা থেকে নির্বাচিত বিজেপির গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্য ও ভারতীয় টি ওয়ার্কাস ইউনিয়নের নাগরাকাটা এক নম্বর মণ্ডল কমিটির সাধারণ সম্পাদক লক্ষ্ণণ কাওয়ার বলেন, গত বছরের শেষে এই পরিচালকরাই লক আউটের নোটিশে তৃণমূলের এক শ্রমিক নেতাকে দুষে বাগান বন্ধ করে দিয়েছিলেন। আসলে কাজ করিয়েও শ্রমিক-কর্মচারীদের মজুরি-বেতন দিতে না পেরে এখন অজুহাত তৈরি করা হচ্ছে্। এই মালিককে দিয়ে বাগান চলবে বলে শ্রমিকদের মনে হয় না। প্রত্যেকেই অন্য মালিক চাইছে। আর যদি ওঁরা ফের ঢোকেও তবে শ্রম দপ্তরে যাবতীয় বকেয়া মেটানোর চুক্তি করে তবেই আসুক। নচেৎ শ্রমিকরাই বাধা দেবে। একই সুরে শাসকদল প্রভাবিত তৃণমূল চা বাগান শ্রমিক ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ সভাপতি ও নাগরাকাটা পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি সঞ্জয় কুজুর বলেন, ‘বাগানে জটিলতা তৈরির পেছনে বর্তমান পরিচালকদের হাত রয়েছে বলে আমাদের ধারনা। তাঁদের বাদ দিয়েই বামনডাঙ্গা ফের খুলতে হবে। শ্রমিকদের পাশে আমরা রয়েছি।’
সংশ্লিষ্ট সূত্রেই জানা গেছে বামনডাঙ্গায় শ্রমিকদের দুই পাক্ষিক সপ্তাহের মজুরি বকেয়া পড়ে গেছে। কর্মচারীরা মাইনে পাননি অগাস্ট ও সেপ্টেম্বরের। ২০২২ সালে বর্ধিত ৩০ টাকা মজুরির ৫ মাসের এরিয়ার ও এবছরের বর্ধিত ১৮ টাকা মজুরির এরিয়ারও মেলেনি। জমা পড়েনি কয়েকমাসের পিএফ খাতের টাকাও। বাগানের হাতি লাইনের আরতি খেরোয়ার নামে এক শ্রমিক বলেন, ‘এই কোম্পানী আর চাই না। এরা বাগান চালাতে পারে না তাঁর দায় শ্রমিকরা কেন নেবে। ’ বিছ লাইনের সুশান্তী লোহার নামে এক শ্রমিক বলেন, ‘আজ বকেয়া মজুরি দেওয়ার দিন ছিল। সেই জায়গায় রাত দেড়টায় লক আউটের নোটিশ ঝোলানো হল। বোনাসের কি হবে। এসব প্রশ্নের কোন উত্তর নেই। এই অবিচার কিভাবে মেনে নেব। অন্য মালিককে দিয়ে বাগান খোলা হোক।’