রণজিৎ ঘোষ, শিলিগুড়ি: ন্যাশনাল মেডিকেল কমিশনের (National Medical Commission) নির্দেশের পর প্রায় ছ’মাস কেটে গিয়েছে। এখনও উত্তরবঙ্গ মেডিকেল কলেজে (North Bengal Medical) আধারভিত্তিক বায়োমেট্রিক অ্যাটেনড্যান্স (Biometric Attendance) ব্যবস্থা চালু হয়নি। উপস্থিতি নিয়ে কলেজ এবং হাসপাতাল, দুই কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধেই কর্তব্যে গাফিলতির অভিযোগ উঠছে। শুধু চিকিৎসকরা নয়, বহু কর্মী সময়মতো অফিসে আসছেন না বলে অভিযোগ।
এ প্রসঙ্গে কলেজ অধ্যক্ষ ডাঃ ইন্দ্রজিৎ সাহা অবশ্য আশ্বাস দিয়েছেন, ‘দ্রুত এই ব্যবস্থা চালু হবে।’ হাসপাতালের ডেপুটি সুপার সুদীপ্ত মণ্ডলের বক্তব্য, ‘স্বাস্থ্য ভবন থেকে বায়োমেট্রিক অ্যাটেনড্যান্স ব্যবস্থা পুনরায় চালু করার জন্য বলা হয়েছে। আশা করছি দ্রুত হাসপাতালেও এই ব্যবস্থা চালু হবে।’
দীর্ঘদিন ধরে উত্তরবঙ্গ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে অনেকে ‘আসি যাই মাইনে পাই’ গোছের মানসিকতা নিয়ে চলছে বলে অভিযোগ। সিনিয়ার ডাক্তারদের একটা বড় অংশ চূড়ান্ত ফাঁকিবাজি করছেন। এখানকার অর্ধেকের বেশি সিনিয়ার ডাক্তার কলকাতা থেকে আসেন। তাঁদের কেউ মাসে একবার এসে হাজিরা খাতায় পুরো মাসের সই করে দিয়ে কলকাতায় ফিরছেন। অনেকে মাসের পর মাস আসছেন না। কিছু চিকিৎসক আবার সংশ্লিষ্ট বিভাগে নিজেদের মধ্যে ডিউটি ভাগ করে রোটেশনে কাজ করছেন। চিকিৎসকদের পাশাপাশি কলেজ ও হাসপাতালের কর্মীদের একাংশ কাজে ফাঁকি দিচ্ছেন বলে অভিযোগ। অথচ সকাল ৯.৩০ মিনিট থেকে বিকেল ৪.৩০ মিনিট পর্যন্ত চিকিৎসক এবং অন্য কর্মীদের কর্মস্থলে থাকার কথা।
কলেজ এবং হাসপাতাল, দু’ক্ষেত্রেই ২০১৬-২০১৭ সালে বায়োমেট্রিক অ্যাটেনড্যান্স ব্যবস্থা চালু হয়েছিল। কিন্তু ২০২০ সালে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ শুরু হতেই সংক্রমণ ছড়ানোর ভয়ে সেটা বন্ধ করে দেওয়া হয়। সেই সময় থেকে পরিষেবা বন্ধ।
গত বছরের নভেম্বর মাসে এনএমসি উত্তরবঙ্গ মেডিকেল কলেজকে চিঠি দিয়ে দ্রুত আধারভিত্তিক বায়োমেট্রিক অ্যাটেনড্যান্স পরিষেবা চালু করার নির্দেশ দেয়। এই পরিষেবা অনলাইন করে স্বাস্থ্য ভবন এবং এনএমসির সদর দপ্তরের সঙ্গে যুক্ত করার কথা বলা হয়েছিল। তারপর এখানে নতুন বায়োমেট্রিক মেশিন বসানো হয়। কিন্তু সেই পরিষেবা চালু হয়নি। ফলে এখনও কলেজকর্মী থেকে শুরু করে অধ্যাপক, চিকিৎসকদের একটা বড় অংশ সময়মতো আসছেন না।
ডাক্তারি পড়ুয়াদের সঙ্গে কথা বলে জানা গিয়েছে, অধ্যাপকরা না আসায় কলেজে সেভাবে পঠনপাঠন হয় না। হাসপাতালের চিকিৎসা ক্ষেত্রেও প্রভাব পড়ছে। রোগী পরিষেবার পুরোটাই পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ট্রেনি (পিজিটি), ইন্টার্নদের ওপর নির্ভরশীল হচ্ছে।
হাসপাতালে কর্মীরা সময়মতো আসছেন কি না, সেখানকার মেডিকেল অফিসার থেকে রেসিডেন্সিয়াল মেডিকেল অফিসার (আরএমও), নার্সদের ওপরে নজরদারির জন্য পৃথক বায়োমেট্রিক অ্যাটেনড্যান্স ব্যবস্থা চালু হয়েছিল। সেটাও ২০২০ সাল থেকে বন্ধ। হাসপাতালের সুপারই দেরিতে অফিসে আসেন। ফলে সাধারণ কর্মী থেকে চিকিৎসক, নার্সরা কে কখন কাজে আসছেন, তার কোনও খতিয়ান থাকছে না।