প্রসেনজিৎ দাশগুপ্ত, নয়াদিল্লি: সংসদে শুরু হল অনাস্থা প্রস্তাব নিয়ে বিশেষ আলোচনা। মঙ্গলবার আলোচনার প্রথম পর্বে নিজ নিজ অবস্থানে অটল থেকে একে অন্যের বিরুদ্ধে বাছা বাছা অভিযোগের তির ছুড়ে দিতে কার্পণ্য করলেন না শাসক এবং বিরোধী জোট শিবিরের প্রতিনিধিরা। মণিপুর ইস্যুতে মোদি সরকারের বিরুদ্ধে আনা অনাস্থা প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে আলোচনা শুরু হতেই সংসদীয় বিতর্কে জমজমাট হয়ে ওঠে লোকসভা।
মোদি সরকারকে তীব্র নিশানা করেন কংগ্রেস সাংসদ গৌরব গগৈ, বর্ষীয়ান তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায়, মণীশ তিওয়ারি, এনসিপি সাংসদ সুপ্রিয়া সুলে, সপা নেত্রী ডিম্পল যাদব, আরএসপি সাংসদ এন কে প্রেমচন্দ্রণ প্রমুখ। অন্যদিকে, মোদি সরকারের কার্যকালে গড়ে ওঠা বিভিন্ন কেন্দ্রীয় প্রকল্পের সাফল্যের বিবরণ তুলে ধরার পাশাপাশি বিরোধী শিবিরের বিরুদ্ধে তোপ দাগেন বিজেপি সাংসদ নিশিকান্ত দুবে, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী কিরেণ রিজিজু, শিবসেনা সাংসদ শ্রীকান্ত একনাথ শিণ্ডে, নির্দল সাংসদ নভনীত রাণা প্রমুখ।
এসবের মাঝেই শেষ মুহূর্তে তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে রণকৌশলে পরিবর্তন এনে রাহুল গান্ধিকে দিয়ে এদিন বক্তব্য পেশ করায়নি কংগ্রেস, যদিও রাহুল এদিন আগাগোড়া উপস্থিত ছিলেন সভায়। দলীয় সূত্রের দাবি, প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের আগে ‘ওস্তাদের মার শেষ রাতে’ নীতি মেনেই রাহুলকে রণাঙ্গনে নামাতে চায় কংগ্রেস। এদিন রাহুল গান্ধি কেন বক্তব্য রাখলেন না, তা নিয়ে কটাক্ষ করেন ট্রেজারি বেঞ্চের বহু সাংসদ, এমনকি কেন্দ্রীয় মন্ত্রী প্রহ্লাদ যোশীও।
মোদি সরকারের বিরুদ্ধে লোকসভায় অনাস্থা প্রস্তাব পেশ করেছিলেন কংগ্রেস সাংসদ গৌরব গগৈ। এদিনও প্রথম আক্রমণ করার গুরুদায়িত্বও বর্তায় তাঁরই কাঁধে। মণিপুর ইস্যুতে কেন্দ্রীয় সরকারকে নিশানা করতে গিয়ে গগৈ বলেন, ‘আমরা অনাস্থা আনতে চাইনি। অগ্নিগর্ভ মণিপুর নিয়ে প্রধানমন্ত্রী কোনও কথা না বলায় বাধ্য হয়েই আমাদের অনাস্থা আনতে হয়েছে।’
শাসক শিবিরের উদ্দেশ্যে এদিন তিনটি প্রশ্ন ছুড়ে দেন গগৈ- ১) কেন মণিপুর নিয়ে মন্তব্য বা উপদ্রুত রাজ্য পরিদর্শনে যাননি মোদি? ২) কেন ৮০ দিন সময় লাগল প্রধানমন্ত্রীর মণিপুর নিয়ে ৩০ সেকেন্ডের বক্তব্য রাখতে? ৩) কেন মণিপুরের মুখ্যমন্ত্রীকে বরখাস্ত করেননি তিনি?
গগৈ বলেন, ‘এতে প্রমাণিত যে ডবল ইঞ্জিন সরকার ফেল করেছে। প্রধানমন্ত্রীও তাঁর রাজধর্ম ভুলে গিয়েছেন।’ অসমের কংগ্রেস সাংসদের সংযোজন, ‘করোনা কালে যখন অক্সিজেনের অভাবে লোক মরছে তখন প্রধানমন্ত্রী পশ্চিমবঙ্গে ভোট চাইছিলেন। যখন মণিপুর জ্বলছে তখন প্রধানমন্ত্রী কর্ণাটকে ভোট চাইছিলেন। এ কেমন প্রধানমন্ত্রী, এ কেমন রাষ্ট্রতন্ত্র?’
এনসিপি সাংসদ সুপ্রিয়া সুলের বক্তব্য, ‘মণিপুরের ঘটনায় দেশের মহিলাদের সম্মান ধুলোয় মিশে যাচ্ছে। যত দ্রুত সম্ভব মণিপুরে মৈত্রী এবং শান্তি প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করতে হবে।’
বিরোধীদের পাল্টা দেন বিজেপি সাংসদ নিশিকান্ত দুবে। তাঁর তোপ, ‘বিরোধীরা যে জোট গঠন করেছে, তার মধ্যে দিয়ে তারা দেখতে চাইছে কতজন তাদের পাশে আছে। ঘটা করে বিরোধীরা জোটের নাম রেখেছে- ‘ইন্ডিয়া’, কিন্তু অনেকেই এর সম্পূর্ণ নামও জানেন না। এটা আসলে কোনও অনাস্থা ভোট নয়, এটা আদতে বিরোধীদের আস্থা ভোট।’ নিশিকান্ত বলেছেন, ‘এ এক বিচিত্র জোট। এরা আসলে জোটের রাজনীতি করছেন, দেশের হিতসাধন এঁদের কাম্য নয়। বিজেপিকে হারাতে শত্রুর সঙ্গেও সংসার বেঁধেছেন এঁরা।’
মহাভারতের দৃষ্টান্ত তুলে ধরে দুবে বলেন, ‘হস্তিনাপুরের সভায় দ্রৌপদীর যেমন অপমান হয়েছিল, বিরোধীরা তেমনই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে অপমানিত করতে চান। কিন্তু কালের প্রবাহে তাঁরা সেই ষড়যন্ত্রে ব্যর্থ হবেন। আগামী নির্বাচনে নিরঙ্কুশ ক্ষমতা লাভ করবেন মোদি।’