আলিপুরদুয়ার: আলিপুরদুয়ার-১ ব্লক। জেলার আর পাঁচটা ব্লকের মতই প্রশাসনিকভাবে সমান গুরুত্বপূর্ণ। তবে রাজনৈতিকভাবে বহু চর্চিত। কারণ জেলার একমাত্র এই ব্লকেই তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে। এমনকি কর্মীদের হাতাহাতির পর্যায়েও চলে গিয়েছে। কোন্দল সামলাতে বারবার জেলার নেতাদের হস্তক্ষেপ করতে হয়েছে। আর তৃণমূলের এই কোন্দল থেকে ফায়দা তুলতে মরিয়া বিজেপি।
পঞ্চায়েত ভোটের মুখে এই ব্লক আবারও জেলার রাজনীতির অনেকটা জায়গা দখল করেছে। শনিবারই ব্লকের পশ্চিম শিমলাবাড়িতে তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর মধ্যে সংঘর্ষ হয়। ব্যক্তিগত আক্রোশ থেকে ওই ঘটনার সূত্রপাত হলেও, শেষে গিয়ে রাজনীতির রং লাগে। এক গোষ্ঠী যখন অপর গোষ্ঠীকে দোষী করছে। আরেক গোষ্ঠী তখন অপর গোষ্ঠীর নেতাদের বাম নেতা-কর্মী হিসেবে আখ্যা দিচ্ছে। এই ঘটনা যেন সংকেত দিল পঞ্চায়েত ভোট যত এগিয়ে আসবে, ততোই বাড়বে রাজনৈতিক সংঘর্ষের সম্ভাবনা।
রবিবার পশ্চিম শিমলাবাড়িতে রুট মার্চ করে বিশাল পুলিশ বাহিনী। এলাকায় শান্তি বজায় রাখা, আর সাধারণ ভোটারদের নির্ভয় দিতে যখন পুলিশ চেষ্টা করছে, তখন সেই চেষ্টার সফলতা কতটা আসবে সেই নিয়েও তো প্রশ্ন থাকছে। কেননা আবারও সংঘর্ষ হওয়ার সম্ভাবনা থাকছে ব্লকের বিভিন্ন জায়গায়। এলাকা অশান্ত হওয়ারও সম্ভাবনা রয়েছে। তৃণমূল নেতাদের নিজেদের দ্বন্দ্ব ছড়িয়েছে কর্মীদের মধ্যেও।
ব্লকের এক সময় তৃণমূলের শেষ কথা ছিলেন প্রাক্তন ব্লক সভাপতি মনোরঞ্জন দে। জেলা থেকে তৃণমূল নেতা সৌরভ চক্রবর্তীর সহযোগিতায় ব্লক তৃণমূলের নেতৃত্ব দিয়েছেন মনোরঞ্জন। তবে সময় বদলেছে। ধীরে ধীরে সৌরভ এবং মনার দূরত্ব বাড়তে থাকে। ব্লকের মনার বিরোধী নেতারা সৌরভের সঙ্গে সখ্য বাড়াতে থাকে এবং ব্লকে একদিকে মনোরঞ্জন গোষ্ঠীর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে সৌরভ গোষ্ঠীও বাড়তে থাকে। বছর খানেক আগেই ব্লক সভাপতি পদ থেকে মনাকে সরিয়ে সৌরভ ঘনিষ্ঠ পীযুষ কান্তি রায়কে জায়গা দেওয়া হয়। এরপর থেকে গোষ্ঠী দ্বন্দ্বের আগুনে যে ঘি পড়তেই থাকে।
তবে সম্প্রতি পঞ্চায়েত নির্বাচনের প্রার্থী তালিকায় দেখা যায় মনোরঞ্জন ঘনিষ্ঠদের আধিপত্য। অন্য গ্রামে দুই গোষ্ঠীর মধ্যে প্রার্থী তালিকায় সামঞ্জস্য রাখা হলেও কিছু গ্রামে একছত্র মনোরঞ্জনের গোষ্ঠীর দাপট। যেমন পাতলাখাওয়া, মথুরা অঞ্চলই সেটার উদাহরণ।যে জায়গা তৃণমূলের এক গোষ্ঠীর লোকেরা বেশি টিকিট পেয়েছে অন্য গোষ্ঠীকে সেখানে নিষ্ক্রিয় দেখা যাচ্ছে। এমনকি পছন্দের প্রার্থী না হওয়াও বিরোধী দলগুলোর দিকেও ভোট দেওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে তৃণমূল সমর্থকদের মধ্যে। যদিও তৃণমূল নেতৃত্ব বলছে দ্বন্দ্ব মিটিয়ে সবাই একসঙ্গে কাজ করবে। ব্লক তৃণমূল সভাপতি পীযুষ কান্তি রায় এবিষয়ে বলেন, ‘নির্বাচনে ব্লকের ১১টি অঞ্চলেই আমরা ভালো ফল করব। যে জায়গাগুলোয় সমস্যা রয়েছে সেটা মিটিয়ে নেওয়া হয়েছে। এখনও কিছু জায়গায় সমস্যা রয়েছে সেটাও মিটিয়ে নেওয়া হবে শীঘ্রই।’ অন্যদিকে, তৃণমূলের এই ভোট কাটাকাটি যে তাদের ফায়দা করে দেবে সেটা মানছেন বিজেপি নেতারাও।তৃণমূল বিরোধী ভোটের সঙ্গে তৃণমূলের একটি অংশের ভোট দিয়েই নির্বাচন জয় করতে চাইছে বিজেপি। এবিষয়ে বিজেপির ব্লক কনভেনর সাধন সাহা বলেন, ‘তৃণমূল থেকে যা ভোট আসার সেটা তো আসবেই। তবুও প্রতি বুথে আমরা নিজের শক্তিতে লড়তে চাই।’