বর্ধমান: বঙ্গ রাজনীতিতে এ যেন সত্যি এক দৃষ্টান্ত। গোটা পরিবারটাকে সর্বদলীয় রাজনীতির মিলনক্ষেত্র বানিয়ে ফেলেও সংঘাতহীন দুই বৌমা ও কাকিমা শাশুড়ি। পশ্চিমবঙ্গের এবারের পঞ্চায়েত নির্বাচনে এই তিনজন ভিন্ন ভিন্ন রাজনৈতিক দলের হয়ে ভোট যুদ্ধে শামিল হয়েছেন। ছোট জা স্বপ্না দাস তৃণমূলের হয়ে, বড় জা রীনা দাস সিপিএমের হয়ে পঞ্চায়েত আসনে প্রার্থী হয়েছেন। আর এই দুই বৌমাকে টক্কর দিতে কাকিমা শাশুড়ি অর্চনা দাস পঞ্চায়েত সমিতির আসনে বিজেপির প্রার্থী হয়ে ভোটের লড়াইয়ে শামিল হয়েছেন। তবে শাশুড়ি বৌমারা কেউই রাজনীতির ময়দানের উত্তাপের আঁচ বাড়িতে পৌঁছোতে দেননি। বরং একে অপরের পরিপূরক হয়ে সংসার সামলে তাঁরা তাঁদের শান্তিও বজায় রেখেছেন। রান্না করা তরকারি আদান প্রদানও যথারীতি চলছে।
পঞ্চায়েত ভোট ঘোষণার পর থেকেই উত্তাপের পারদ চড়েছে রাজ্যজুড়ে। তারই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে শাসক ও বিরোধীদের মধ্যে রাজনৈতিক হিংসা হানাহানির ঘটনা। পাহাড় থেকে সমতল সর্বত্রই একই চিত্র। রক্ত ঝরছেই। এমন এক অশান্ত পরিস্থিতিতে কাটোয়ার গোশুম্বা গ্রামের দাস পরিবারের তিন বধূ এখন যেন হিংসামুক্ত বন্ধুত্বপূর্ণ রাজনীতির প্রতিচ্ছবি। আর তার দৌলতেই তাঁরা কাটোয়াবাসীর মনজয় করে নিয়েছেন।
গ্রামের তৃণমূল প্রার্থী স্বপ্না দাসের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেল তিনি সংসারের কাজে ব্যস্ত রয়েছেন। প্রচারে যাচ্ছেন না? এই প্রশ্ন করতেই স্বপ্নার স্পষ্ট জবাব, ‘দিদি মমতা বন্দ্যেপাধ্যায়ের দলের প্রার্থী হয়েছি, প্রচারে বের হব না? সেটা কি করে হয়! সংসারের কাজ সেরেই দলের নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের সঙ্গে গ্রামের বাসিন্দাদের বাড়ি বাড়ি প্রচারে যাচ্ছি। ভোটাররাও বুঝছে তৃণমূল কংগ্রেস সরকারের দ্বারা তাঁরা কতটা উপকৃত হচ্ছে।’
স্বপ্না যখন তৃণমূলের হয়ে এত কথা বলছেন তখন পাশের ঘর থেকে বেরিয়ে এসে সিপিএম প্রার্থী রীনা দাস বলেন, ‘কেন্দ্র ও রাজ্য উভয় সরকারই উন্নয়নের নামে সাধারণ মানুষকে শোষন করছে। তাই মানুষ আমাদের অর্থাৎ সিপিএমের প্রতি ফের আস্থা রাখবেন। আমাকেই জয়ী করবেন।‘ এই কথাবার্তা চলাকালীন বিজেপির প্রার্থী কাকি শাশুড়ি অর্চনা দাস বলেন, ‘তৃণমূল নয়, সিপিএমও নয়, দেশের মানুষের প্রকৃত উন্নয়ন একমাত্র বিজেপি করতে পারে। বাংলার মানুষও সেটাই বিশ্বাসও করেন। তাইতো গোশুম্বা গ্রামের মানুষ গত দুটি ভোটে বিজেপিকেই এগিয়ে রেখেছে। তাই এবারের ভোটে মানুষ আমাকেই ভোট দিয়ে জয়ী করবেন।‘
একই বাড়ির সদস্য হয়েও তিনজনে যুযুধান তিন রাজনৈতিক দলের প্রার্থী হয়েছেন বলে সংসারে অশান্তি হচ্ছে না? এর উত্তরে তিনজনই এক সুরে বলে ওঠেন, ’অশান্তি কেন হবে! আমাদের সংসারে কোনদিন অশান্তি ছিল না, আর অশান্তি হবেও না। রাজনীতি রাজনীতির জায়গায় থাকবে, আর সংসার সংসারের জায়গায় থাকবে। ভোট সাময়িক সময়ের ব্যাপার, কিন্তু সংসার সারা জীবনের।‘ পাশাপাশি তিন প্রার্থীই একসুরে বলেন, ’আমরা বাড়িতে যেমন শান্তি চাই, তেমনি শান্তি চাই ভোটের ময়দানেও। গ্রামের মানুষ তাঁদের পছন্দ মতো যাকে খুশি ভোট দেবেন। এখানে কোনও অশান্তি হতে আমরা দেব না।‘