উত্তরবঙ্গ সংবাদ ডিজিটাল ডেস্ক: পাকিস্তানের বালুচিস্তানে ফের বিস্ফোরণ। শুক্রবার বালুচিস্তানে মাস্তং জেলার সদর শহরে একটি ধর্মীয় সমাবেশে জমায়েত হয়েছিলেন বহু মানুষ। পাক সংবাদ মাধ্যম সুত্রে জানা যাচ্ছে, সেখানে বিস্ফোরণের ঘটনায় ৫২ জন নিহত হয়েছে। গুরুতর আহতের সংখ্যা ১৩০-এরও বেশি। নিহতদের মধ্যে এক ডিএসপি-সহ বালুচিস্তান পুলিশের কয়েক জন কর্মীও রয়েছেন। প্রাথমিক তদন্তে জানা যাচ্ছে, মানববোমার হামলায় এই ঘটনা ঘটেছে।
এদিন মাস্তংয়ের সহকারী কমিশনার আত্তাহুল মুনিম জানিয়েছেন, আলফালাহ রোডে মদিনা মসজিদের সামনে ঈদ-ই-মিলাদুন উৎসব উপলক্ষ্যে জমায়েত হয়েছিলেন বহু মানুষ। সেই জমায়েতে আচমকা বিস্ফোরণের ঘটে। হতহতদের দ্রুত অদূরের শহিদ নবাব ঘৌস বখ্শ রাইসানি মেমোরিয়াল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। বিস্ফোরণের তীব্রতা এত বেশি ছিল যে আশপাশের বেশ কিছু দোকান এবং যানবাহন ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় সক্রিয় রয়েছে ‘বালুচ ন্যাশনালিস্ট আর্মি’, ‘বালুচিস্তান লিবারেশন আর্মি’ এবং তেহরিক-ই-তালিবান পাকিস্তান নামে বিদ্রোহী সংগঠনগুলি।সম্প্রতি স্বাধীনতাপন্থী বালুচদের সঙ্গে সমঝোতা করেছে টিটিপি। তাঁদের এই সমঝোতার কারণ পাক সেনার বিরুদ্ধে লড়াই।সেপ্টেম্বরের শুরুতে মাস্তংয়েই বিস্ফোরণে নিহত হয়েছিলেন ‘ইসলামাবাদপন্থী’ জমিয়ত উলেমা-ই-ইসলাম-এর ফজল নেতা হাফিজ হামিদুল্লা।এই ঘটনার জন্য টিটিপি কে দায়ি করা হলেও বিস্ফোরণের কিছুক্ষণ পর ঘটনায় নিজেদের দায় অস্বীকার করে বিবৃতি দেয় তাঁরা।
পাকিস্তানের বৃহত্তম প্রদেশ বালুচিস্তান প্রাকৃতিক ভাবে সবচেয়ে সম্পদশালী। ‘চিন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডর’ তৈরি হওয়ার পর ধীরে ধীরে তা বেহাত হয়ে যাচ্ছে বালোচ নাগরিকদের হাত থেকে।বর্তমানে তা যেন আরও বেড়েছে। পশ্চিম চিনের শিনজিয়াং প্রদেশের কাশগড় থেকে শুরু হওয়া ওই রাস্তা কারাকোরাম পেরিয়ে ঢুকেছে পাকিস্তানে। প্রায় ১,৩০০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে শেষ হয়েছে বালুচিস্তান প্রদেশের দক্ষিণ-পশ্চিম প্রান্তে চিন নিয়ন্ত্রিত গ্বদর বন্দরে।এই রাস্তাকে কাজে লাগিয়ে প্রাকৃতিক সম্পদ লুঠ করছে ইসলামাবাদ এবং বেজিংয়ের শাসকেরা। এমনই অভিযোগ করছে ‘বালুচ ন্যাশনালিস্ট আর্মি’ এবং ‘বালুচিস্তান লিবারেশন আর্মি’ মতো স্বাধীনতাপন্থী সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলি।‘বালুচিস্তানের গাঁধী’ বলে পরিচিত স্বাধীনতাপন্থী নেতা আবদুল কাদির বালোচ বছর কয়েক আগে এসেছিলেন দিল্লিতে। তখন তিনি ভারতের মাটিতে দাঁড়িয়ে বলেছিলেন, ‘১৯৭১-এ ভারত যে ভাবে বাংলাদেশের পাশে দাঁড়িয়েছিল, সে ভাবেই পাশে দাঁড়াক বালুচিস্তানের। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির কাছে বালুচিস্তানের উপর পাক নিপীড়ন বন্ধের জন্য আন্তর্জাতিক মঞ্চে সরব হওয়ার আবেদন জানাচ্ছি।’
উল্লেখ্য, ১৯৪৭ সালের ১১ অগাস্ট ব্রিটিশ শাসনের থেকে মুক্তি পেয়েছিল দেশীয় রাজ্য কালাত। ১২ অগাস্ট কালাতের শাসক মির সুলেমান দাউদ ঘোষণা করেছিলেন স্বাধীনতার। মাত্র ৭ মাস ছিল সেই স্বাধীনতার মেয়াদ। ১৯৪৮-এর ২৭ মার্চ পর্যন্ত। বালুচিস্তানের মানুষের কাছে সেই দিনটা আজও যন্ত্রণার ‘পরাধীনতা দিবস’! পাকিস্থানের সেনা ৭ দশক আগে দখল করেছিল বালুচিস্তান। তৎকালীন শাসককে অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে বাধ্য করেছিল পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত হতে।