রাজগঞ্জ: লোকসভা নির্বাচনের ফল ঘোষণার পর থেকেই বন্ধ রয়েছে গজলডোবা পর্যটন হাবের নৌকাবিহার। ফলে কার্যত কর্মহীন হয়ে পড়েছেন প্রায় ১৭০ জন মাঝি। রোজগার হারিয়ে চরম হতাশায় দিন কাটছে তাঁদের। অভিযোগ, এবারের লোকসভা নির্বাচনে ওই এলাকা থেকে রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস কম ভোট পাওয়ার কারণেই নৌকাবিহার বন্ধ করে দেন স্থানীয় তৃণমূল কর্মীরা। তবে মাঝিদের কেউই ভয়ে এ বিষয়ে প্রকাশ্যে সংবাদমাধ্যমের কাছে কিছু বলতে রাজি হননি। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক মাঝি জানান, নৌকা চালিয়ে যা উপার্জন হত, তাই দিয়ে তাঁদের সংসাদর চলত। কিন্তু নৌকাবিহার বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর দু’বেলার অন্ন জোটাতে হিমসিম খেতে হচ্ছে তাঁদের। ওই এলাকায় কয়েক হাজার মানুষের বসবাস হলেও তৃণমূল কংগ্রেস কম ভোট পাওয়ায় খাঁড়ার ঘা নেমে এসেছে ১৭০ জন মাঝির ঘাড়েই। ভয়ার্ত কণ্ঠে বারংবার নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘কেউ যদি জানতে পারে আমি এসব বলেছি, তহলে হয়তো আমার নৌকাখানাও কেড়ে নেওয়া হবে।’
বিভিন্ন এলাকার পর্যটকরা গজলডোবায় এসে পক্ষীবিতানের পাশের জলাশয়ে নৌকাবিহারের আনন্দ উপভোগ করেন। কিন্তু বর্তমানে নৌকাবিহার বন্ধ থাকায় হতাশ হয়ে ফিরতে হচ্ছে পর্যটকদেরও। এ বিষয়ে ওই এলাকারই বাসিন্দা তথা বিজেপি কিষান মোর্চার জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক উত্তম রায় বলেন, ‘কোনও রীতিনীতি মানছে না তৃণমূল কংগ্রেস। মুখে গণতন্ত্রের কথা বললেও তৃণমূল কংগ্রেস আসলে কতটা গণতান্ত্রিক দল, তা তাদের কার্যকলাপেই পরিষ্কার হয়ে যায়। বিজেপি বেশি ভোট পাওয়ায় মাঝিদের নৌকা চালানো বন্ধ করে দেওয়া অত্যন্ত অমানবিক কাজ। আমরা আন্দোলনে নামব।’ ঘটনার কথা স্বীকার না করলেও পুরোপুরি অস্বীকারও করতে পারেননি তৃণমূল কংগ্রেসের মান্তাদারি অঞ্চল সভাপতি ললিত রায়। তিনি বলেন, ‘গজলডোবায় প্রথমদিকে নৌকাবিহার বন্ধ করা হলেও এখন সরকারিভাবেই তা বন্ধ রাখা হয়েছে।’
প্রশাসনিক কর্তাদের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে তাঁরা দায় ঠেলেছেন একে অপরের ঘাড়ে। গজলডোবা ডেভেলপমেন্ট অথরিটির ভাইস চেয়ারম্যান তথা রাজগঞ্জের বিধায়ক খগেশ্বর রায় বলেন, ‘আমি উন্নয়নের দিকটা দেখি। পর্যটনের বিষয়টা দেখে পর্যটন বিভাগ।’ পর্যটন বিভাগের উত্তরবঙ্গের ডেপুটি ডিরেক্টর জ্যোতি ঘোষের বক্তব্য, ‘নৌকাবিহারের বিষয়টা আমরা দেখি না। এর দেখভাল করে ইরিগেশন এবং বন দপ্তরের কানন ও উদ্যান বিভাগ।’ বৈকুণ্ঠপুর ডিভিশনের কানন ও উদ্যান বিভাগের আধিকারিক বিদ্যুৎনারায়ণ দাসের কথায়, ‘নৌকাবিহার আমাদের দায়িত্বে পড়ে না।’ সেচ দপ্তরের এগজিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার দেবব্রত দত্ত বলেন, ‘বর্ষাকালে তিস্তা নদীতে নৌকাবিহার ঝুঁকিপূর্ণ। তাই বন্ধ রাখা হয়। তবে পক্ষীবিতানে নৌকাবিহারের বিষয়টি আমাদের এক্তিয়ারভুক্ত নয়।’