প্রণব সূত্রধর, আলিপুরদুয়ার: তাঁর শারীরিক পরিস্থিতির সঙ্গে অনেকটা মিল খুঁজে পাওয়া যাবে সোমা দাসের। কিন্তু ‘ভাগ্য’টা সোমার মতো হয়নি। বীরভূমের সোমা ছাড় পেয়েছেন। ফাঁসিদেওয়ার (Phansidewa) বিধাননগরের (Bidhannagar) ওই শিক্ষক ছাড় পাননি আদালতের নির্দেশ থেকে।
চলতি সপ্তাহেই কলকাতা হাইকোর্টের (Calcutta High Court) নির্দেশে হাইস্কুলের প্রায় ২৬ হাজার শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীর চাকরি গিয়েছে (Teacher Recruitment Scam)। ব্যতিক্রম বীরভূমের সোমা। তিনি ব্লাড ক্যানসারে ভুগছেন। মানবিক কারণেই তাঁর চাকরি বহাল রেখেছে হাইকোর্ট। এদিকে, বিধাননগরের ওই শিক্ষকও আক্রান্ত ব্লাড ক্যানসারেই। তাঁর চাকরি কিন্তু নেই।
এখনও অবধি অবশ্য হাইকোর্টের কাছে নিজের শারীরিক পরিস্থিতির কথা বলে আলাদা করে কোনও আবেদন করেননি সেই তরুণ। নিজের নাম সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ্যে আসুক, চাইছেন না তিনি।
বিধাননগরের ওই শিক্ষক বছরখানেক ধরে ক্যানসারে আক্রান্ত। ইতিমধ্যে আটবার কেমো দিয়েছেন। শিলিগুড়ি শহর থেকে প্রায় ত্রিশ কিলোমিটার দূরে বাড়ি। স্কুল জীবনে বরাবর প্রথম হতেন। তারপর ফিজিক্স নিয়ে উচ্চশিক্ষা। প্রথম থেকেই ইচ্ছা ছিল শিক্ষক হবেন। বিএড করার পর কলেজে পার্ট টাইম অধ্যাপনা করতেন। এসএসসি পরীক্ষায় সফল হওয়ার পর ভেবেছিলেন জীবনে প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন। তবে পরিস্থিতি বদলে যায় কয়েকমাস আগে।
হঠাৎ সর্দি-কাশির উপসর্গ নিয়ে চিকিৎসক দেখান। এক্স-রে করতেই বুকে বড় আকারের টিউমারের উপস্থিতি ধরা পড়ে। চিকিৎসক মুম্বই টাটা মেমোরিয়াল হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য যেতে বলেন। তারপর সেখানে পরীক্ষানিরীক্ষার পর জানা যায়, টিউমারের পাশাপাশি তিনি ব্লাড ক্যানসারে আক্রান্ত। এদিকে স্ত্রী গর্ভবতী। কী করবেন বুঝে উঠতে পারছিলেন না। পরে চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে মুম্বইতে বায়োপসি করান। বাড়ি ফিরে গর্ভবতী স্ত্রীকে হাসপাতালে ভর্তি করান। নবজাতকের মুখ দেখেই ফের তাঁকে কেমো নিতে মুম্বই চলে যেতে হয়।
চিকিৎসক ১৫ দিন পরপর ১২টি কেমো দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। ইতিমধ্যে আটটি কেমো দেওয়া শেষ হয়েছে। ক্যানসারের চিকিৎসা শুরু হওয়ার পর দীর্ঘদিন শয্যাশায়ী ছিলেন। তখন নাক ও মুখে পাইপ ঢোকানো ছিল। ভালোমতো কথাও বলতে পারতেন না। চিকিৎসা চলায় এখন অবশ্য অনেকটাই সুস্থ। আপাতত শিলিগুড়িতেই কেমোথেরাপির ব্যবস্থা করা হয়েছে। কিন্তু সেসব তো এখন কোনও সমস্যাই নয় তাঁর কাছে। বড় সমস্যা হল, চাকরির কী হবে, উপার্জনের কী হবে, সংসারের কী হবে।
চাকরি বাতিলের খবরে তাঁর মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ার উপক্রম হয়েছে। চিকিৎসার বিপুল খরচ। চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলতে হচ্ছে। ফলে কলকাতায় গিয়ে আইনি লড়াই করা সম্ভব নয় তাঁর পক্ষে।
ওই শিক্ষক বলেন, ‘স্কুলে সবসময় প্রথম হতাম। একাধিক সরকারি চাকরিও পেয়েছিলাম। তবে স্কুলের চাকরি বেছে নিয়েছিলাম। চাকরির টাকাতেই চিকিৎসা চলত। এখন কী করব?’ বলছেন, আদালতের কাছে মানবিকতার খাতিরে চাকরি বাঁচানোর জন্য আবেদন করার মতো আর্থিক সামর্থ্যের সঙ্গে সঙ্গে শারীরিক সামর্থ্যও তাঁর নেই।
সেই তরুণের বাবা চা বাগানের কর্মী ছিলেন। ছেলের পড়াশোনায় আগ্রহ দেখে উচ্চশিক্ষার জন্য সচেষ্ট হন। চাকরি পাওয়ার পর স্বস্তি পেয়েছিলেন। তারপর হঠাৎ এই বিনা মেঘে বজ্রপাত। চাকরি বাতিলের খবরে এখন রীতিমতো আতঙ্কে রয়েছেন পরিবারের লোকজন।