বক্সিরহাট: গোরু পাচরের ছক কষেও শেষরক্ষা হল না। গোরু বোঝাই একটি পিকআপ ভ্যান আটক করল স্থানীয় লোকজন। পাশাপাশি গোরুপাচার সন্দেহে দুই যুবককে গণধোলাই দেয় উত্তেজিত জনতা। গোরু পাচারের ব্যবহৃত ওই গাড়িকে লক্ষ্য করে চলে ইটবৃষ্টি। বুধবারের এই ঘটনাকে ঘিরে কার্যত রণক্ষেত্রের চেহারা নেয় তুফানগঞ্জ ২ নম্বর ব্লকের শালবাড়ি ১ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের শালবাড়ি বাজার এলাকা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নামানো হয় বিশাল পুলিশ বাহিনী।
স্থানীয় সূত্রে খবর, শালবাড়ি-১ গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকা থেকে বেশ কিছুদিন ধরেই গোরু চুরি যাচ্ছে। অন্যদিকে, শালবাড়ি বাজারের পাশেই সিরাজুল হকের বাড়িতে দীর্ঘদিন ধরেই চলছে গোরু পাচারের রমরমা কারবার। সবকিছু জেনেও পুলিশ কোনও ব্যবস্থা নেয়নি বলে অভিযোগ। ফলে বছরখানেকের মধ্যেই ফুলে ফেঁপে উঠেছে ওই ব্যবসা। বিষয়টি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই ক্ষোভ জন্মেছিল স্থানীয়দের মধ্যে। বেশ কিছুদিন ধরে ওই বাড়ির উপর নজর রাখছিলেন স্থানীয় ক্লাবের সদস্যরা। এদিন ওই বাড়ি থেকে গোরু সমেত একটি পিকআপ ভ্যান অসমের পথে রওনা দেয়। সেইসময় স্থানীয় লোকজন ওই গাড়িটিকে আটকানোর অনেক চেষ্টা করেন। তবে রাস্তায় উঠতেই গাড়ির গতি বাড়িয়ে দেয় চালক। গাড়িটিকে আটক করার জন্য রাস্তার উপর কাঠের গুড়ি ফেলে রাখা হয়। নানা চেষ্টা করেও গাড়িটি আটকানো যায়নি। পরে গোরু সমেত এই গাড়িটি আটক করতে না পেয়ে ওই সিরাজুল হকের বাড়িতে হানা দেয় স্থানীয় লোকজন। বাড়ির মালিক পালিয়ে গেলেও, গোরু পাচারকারী সন্দেহে দুই লাইন ম্যানকে ওই আটক করেন স্থানীয় লোকজন। পরে খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আসে বক্সিরহাট থানার পুলিশ। ওই বাড়ি থেকে উদ্ধার গোরুগুলিকে একটি খোঁয়াড়ে রাখা হয়। পাচারের কাজে ব্যবহৃত গাড়িটিকে বাজেয়াপ্ত করে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। বাপ্পা আলী ও আবু হোসেন নামে দুইজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
বিজেপির তুফানগঞ্জ বিধানসভার কনভেনার বিমল পাল বলেন, ‘তৃণমূল নেতাদের মদতেই দিনের পর দিন এভাবেই গোরু পাচারের কারবার চলছে। পুলিশ সবকিছু জেনেও নিরব দর্শক।’ সিপিএমের বক্সিরহাট এরিয়া কমিটির যুব নেতা ইউসুফ আলীর কথায়, ‘বাংলায় গোরুপাচার নতুন কিছু নয়। তবে চোরাকারবারিদের অবিলম্বে খুঁজে বের করে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ করুক প্রশাসন।’ তৃণমূল অবশ্য বিরোধীদের অভিযোগ যথারীতি অস্বীকার করেছেন। দলের তুফানগঞ্জ-২ ব্লক কমিটির সভাপতি চৈতি বর্মন বড়ুয়া বলেন, ‘বিরোধীরা ভিত্তিহীন অভিযোগ করছেন। তবে গোরুপাচার রুখতে কঠোর পদক্ষেপ করার জন্য পুলিশকে অনুরোধ জানাবো।’
এসডিপিও জ্যাম ইয়ং জিম্বা বলেন, ‘ধৃতদের সাতদিনের পুলিশি হেপাজত চেয়ে তুফানগঞ্জ মহকুমা দায়রা আদালতে আবেদন করা হয়েছে। পুলিশ গোটা ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে।’