নয়াদিল্লি: প্রথাগত বিধিনিয়মের ঘেরাটোপে আবদ্ধ না থেকে মনরেগায় বাংলার গ্রামীণ অঞ্চলের গরীব মানুষের দাবিদারি অনুযায়ী ১০০ দিনের কাজের বকেয়া নিয়ে কেন্দ্রীয়স্তরে সম্ভাব্য সমস্ত পরিসরে জরুরি ভিত্তিতে সরব হওয়ার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে তৃণমূল কংগ্রেস। তারই প্রতিফলন এদিন চোখে পড়ল যখন নয়াদিল্লিতে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমনের নেতৃত্বাধীন ৫২তম জিএসটি কাউন্সিলের বৈঠকে যোগ দিতে এসে বিভাগীয় প্রোটোকল উড়িয়ে দিয়ে ১০০ দিনের বকেয়া নিয়ে রাজ্যবাসীর দাবিদাওয়া কমিটির সামনে তুলে ধরলেন রাজ্যমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য। সীতারমনের সামনেই রাজ্যের এক তৃতীয়াংশ মহিলা জব কার্ড হোল্ডারদের দুই বছরের বেশি সময় ধরে বকেয়া নিয়ে চন্দ্রিমা জানিয়েছেন অভিযোগ, দাবি কেন্দ্রীয় সূত্রে।
শনিবার দিল্লিতে জিএসটি কাউন্সিলরের বৈঠকে বক্তব্য রাখতে উঠে বক্তৃতার একাংশে রাজ্যমন্ত্রী চন্দ্রিমা সরাসরি কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী সীতারমনকে সম্বোধন করে বলেন, ‘আমি জানি এটা জিএসটি কাউন্সিলের বৈঠকের নির্ধারিত আলোচ্য বিষয় নয়, কিন্তু পরিস্থিতি ব্যতিরেকে তা নিয়ে বক্তব্য রাখতে বাধ্য হচ্ছি।’ চন্দ্রিমার স্পষ্ট দাবি, দেশের সার্বিক বিকাশ এবং উন্নয়নের স্বার্থে অন্যান্য রাজ্যের মতো বাংলার মানুষরাও সমান উদ্যোগী এবং করদান তথা কর বৃদ্ধিতে তাদের অবদান অনস্বীকার্য। দেশের আর্থিক ব্যবস্থা যেন কোনো ভাবেই দেশের গরীব, অনুন্নত ও খেটে খাওয়া মানুষের সঙ্কটের কারণ না হয়ে দাঁড়ায়, সেদিকে নজর রেখেই কাউন্সিল গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে। কিন্তু বাংলায় যা হচ্ছে তা সম্পূর্ণ অসহায় ও দরিদ্রদের স্বার্থের পরিপন্থী। চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য বলেন, ‘বাংলার মানুষের হয়ে বলতে চাই আমরা জনগণের জীবনযাত্রার মানবিকাশে প্রতিশ্রুতি বদ্ধ। কিন্তু মনরেগা ও প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় তাদের বঞ্চিত করা হচ্ছে।’
চন্দ্রিমা বলেন, ‘আমরা জানি, মনরেগা ও পিএম আবাস যোজনার খাতে আপনি (নির্মলা সীতারমন) যথাসাধ্য বরাদ্দ করেছেন। রাজ্যের এক তৃতীয়াংশ মহিলা এই মনরেগায় জব কার্ড হোল্ডার, তারা গত দুবছর ধরে এই প্রকল্পে কাজ করেছেন, তাদের যা যা সাধ্য তারা সব করেছেন, কিন্তু দূর্ভাগ্যবশতঃ আজও তারা তাদের প্রাপ্য টাকা পাননি। তাদের বঞ্চিত করা হচ্ছে৷ ভীষণ কষ্টে দিন কাটাচ্ছেন তারা। কিন্তু তাদের অবস্থা বোঝার মতো সময় সরকারের নেই।’ সূত্রের দাবি, অবিলম্বে রাজ্যের লক্ষাধিক মানুষের ন্যায্য দাবি মিটিয়ে দিতে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীকে ব্যক্তিগতভাবে পরিস্থিতি খতিয়ে দেখার জন্য অনুরোধ করেন চন্দ্রিমা। নির্মলা সীতারমন এ নিয়ে সরাসরি কিছু না বললেও বিষয়টি সচিবস্তরে পর্যালোচনার জন্য চালান করেছেন বলে জানা গিয়েছে কেন্দ্রীয় সূত্রে।
উল্লেখ্য, কেন্দ্রের বিরুদ্ধে ১০০ দিনের কাজে বঞ্চনার অভিযোগ তুলে সম্প্রতি ৫০ লক্ষ চিঠি নিয়ে দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে দিল্লির বুকে আন্দোলনে নেমেছিল তৃণমূল কংগ্রেস। কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন প্রতিমন্ত্রী তাঁদের সঙ্গে দেখা না করায়, চিঠি ফিরেছে কলকাতায়। সেই সব দিস্তে দিস্তে চিঠি নিয়ে রাজভবন অভিযানের সিদ্ধান্ত নেয় তৃণমূল, পাঠানো হয় খোদ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বাসভবনেও। রাজ্যপাল স্বয়ং কলকাতায় না থাকায় রাজভবনের সামনেই অবস্থান করেন অভিষেক সহ অন্যান্য তৃণমূলী নেতা নেত্রীরা। ঠিক তখনই কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন প্রতিমন্ত্রী সাধ্বী নিরঞ্জনা জ্যোতি নিজে কলকাতায় এসে শনিবার তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে মিথ্যাচারের অভিযোগ তুলে ধরেন বেলাগাম দুর্নীতি প্রসঙ্গ। নিরাঞ্জনা যখন সল্টলেকে দলীয় কার্যালয় থেকে তৃণমূল নেতৃত্বের বিরুদ্ধে ছুড়ে দিচ্ছেন তোপ, সে মুহূর্তে দিল্লিতে জিএসটি কাউন্সিলের বৈঠকে সরাসরি অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমনের উপস্থিতিতে সংশ্লিষ্ট প্রসঙ্গে পালটা সরব হয়েছেন রাজ্যমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য।