মনজুর আলম, চোপড়া: অবশেষে নামল বহু প্রতীক্ষিত বৃষ্টি। ভিজল চোপড়ার চা বলয় (Chopra tea gardens)। খুশি ক্ষুদ্র চা চাষি মহল। গত পুজোর পর থেকে চোপড়ায় তেমন খুব একটা বৃষ্টি হয়নি। মাঝে মার্চ পর্যন্ত মাত্র দু’বার কার্যত নামে বৃষ্টি হয়েছে। তীব্র তাপপ্রবাহে পাট, তিল ও নানা গ্রীষ্মকালীন সবজি চাষে ব্যাপক ক্ষতির সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিল। সব থেকে বেশি ক্ষতির মুখে পড়েছিল ক্ষুদ্র চা চাষ। কৃষিপ্রধান চোপড়া ব্লকে বৃষ্টির অভাবে কার্যত হাহাকার শুরু হয়েছে। দিতে হচ্ছিল সেচ। বৃহস্পতিবারের মাঝারি বৃষ্টিতে খুশি ফিরেছে। এই বৃষ্টিতে চায়ের ফলন অনেকটা বাড়বে বলে আশাবাদী ক্ষুদ্র চা চাষি মহল।
উত্তর দিনাজপুর (Uttar Dinajpur) কৃষিবিজ্ঞান কেন্দ্রের বিশেষজ্ঞ দেবাশিস মাহাতো এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘চোপড়া ব্লকের বিস্তীর্ণ এলাকায় এদিন বিকাল চারটা পর্যন্ত ৪১.৩ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। আগামী ১০-১১ মে পর্যন্ত মাঝারি বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। এই বৃষ্টি তিল, পাট, বিভিন্ন সবজি ও চা চাষের পাশাপাশি আম, লিচুর উপকারে লাগবে।’
উত্তর দিনাজপুরের চোপড়া ব্লকে প্রায় ১২ হাজার ক্ষুদ্র চা চাষি রয়েছেন। বিভিন্ন গ্রাম পঞ্চায়েতের ক্ষুদ্র চা চাষিদের দাবি, এদিনের বৃষ্টিতে একদিকে ফলনের পক্ষে যেমন ভালো হল তেমনই রোগপোকার আক্রমণ থেকেও রেহাই মিলবে। এবার টি বোর্ড ১২ ফেব্রুয়ারি থেকে কারখানা খোলার পাশাপাশি চা পাতা তোলার নির্দেশ দিয়েছিল। কিন্তু প্রথম ফ্লাশিং বৃষ্টির কারণে মার খেয়েছে। অনেক বাগান রোদের তাপে ঝলসে গিয়েছে। অধিকাংশ কারখানা পর্যাপ্ত কাঁচা চা পাতার অভাবে বন্ধ রয়েছে। অনেকেই গাছ বাঁচাতে বাধ্য হয়ে বাড়তি পয়সা খরচ করে সেচ দিচ্ছেন।
ঝরবাড়ির বাসিন্দা ক্ষুদ্র চা চাষি সফিক আলম বলেন, ‘টানা কয়েক মাস বৃষ্টি না হওয়ায় রোগপোকার উপদ্রব, সেচের খরচ বেড়েছে। এদিনের বৃষ্টিতে অন্তত আগামী ১৫-২০ দিন সেচের দরকার হবে না।’ আর এক ক্ষুদ্র চা চাষি রতন সাহার কথায়, ‘টানা কয়েক মাস তেমন বৃষ্টি না হওয়ায় বাগানগুলিতে রোগপোকা বাড়ছিল। এদিন বেশ ভালো বৃষ্টি হয়েছে। ক্ষুদ্র চা চাষি থেকে বাগান মালিক সবার স্বস্তি ফিরেছে।’ চোপড়া ক্ষুদ্র চা চাষি সমিতির সম্পাদক পার্থ ভৌমিক বলেন, ‘হিসাবমতো এখন থার্ড ফ্লাশিং চলার কথা। কিন্তু বৃষ্টির অভাবে এখন সেকেন্ড ফ্লাশিং চলছে। এদিনের বৃষ্টি যে কত উপকারে আসবে তা কোনও অঙ্কে হিসাবে মেলানো যাবে না। প্রথমত, এতে যেমন রোগপোকা দমনে সহযোগিতা মিলবে তেমনই ফলন একলাফে অনেকটা বেড়ে যাবে।’
স্থানীয় কৃষক মহম্মদ ইসমাইল, ইয়াসিন আলিরা জানান, তীব্র গরমে পাট, তিলের গাছ ঝলসে যাওয়ার উপক্রম হয়েছিল। অনেক পাটখেতে সেচ দিতে হয়েছে।