জ্যোতি সরকার, জলপাইগুড়ি: উত্তরবঙ্গের তরাই, ডুয়ার্স সহ দার্জিলিংয়ের তিন শতাধিক চা বাগানে (Tea garden) ন্যূনতম মজুরি চুক্তি বলবৎ করার জন্য বুধবার কলকাতা হাইকোর্টের জলপাইগুড়ি সার্কিট বেঞ্চ নির্দেশ দিয়েছে। ছয় সপ্তাহের মধ্যে এ ব্যাপারে রিপোর্ট দাখিল করতে হবে। তার দু’সপ্তাহের মধ্যে রাজ্য সরকারকে অবশ্যই সদর্থক পদক্ষেপ করতে হবে।
উত্তরবঙ্গের চা বাগানগুলিতে দীর্ঘদিন ধরে ন্যূনতম মজুরি চুক্তি চালু না হওয়ায় কলকাতা হাইকোর্টের জলপাইগুড়ি সার্কিট বেঞ্চে মামলা দায়ের করেছিল পশ্চিমবঙ্গ চা মজদুর সমিতি। এ প্রসঙ্গে রাজ্য সরকারের আইনজীবী অতিরিক্ত অ্যাডভোকেট জেনারেল জয়জিৎ চৌধুরী জানান, ন্যূনতম মজুরি চুক্তির বিষয়ে রাজ্য সরকার ইতিমধ্যেই প্রয়োজনীয় প্রক্রিয়া শুরু করেছে। আগের এক আদেশে বলা হয়েছিল ছ’মাসের মধ্যে মজুরি চুক্তি কার্যকর করতে হবে। তখন থেকেই চা শ্রমিক সংগঠনগুলি দ্রুত মজুরি চুক্তি বলবতের দাবি জানাতে থাকে।
উল্লেখ্য, ভারতীয় ন্যায় সংহিতায় ন্যূনতম মজুরি-১৯৪৮ (মিনিমাম ওয়েজেস অ্যাক্ট-1948) নামে নির্দিষ্ট আইন রয়েছে। মামলাকারীদের পক্ষে আইনজীবী ডঃ এস মুরলীধর অভিযোগ করেন, ন্যূনতম মজুরির বিষয়ে রাজ্য সরকার পদক্ষেপ করছে না। মামলাটি জলপাইগুড়ি সার্কিট বেঞ্চের বিচারপতি অনিরুদ্ধ রায়ের সিঙ্গল বেঞ্চে দায়ের করা হয়েছে। আদালত জানিয়েছে, ন্যূনতম মজুরি পাওয়া শ্রমিকদের আইনগত অধিকার। যদি কোনও শ্রমিক মনে করেন তিনি ন্যূনতম মজুরি থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন তবে সংশ্লিষ্ট শ্রমিক আদালতে মামলা দায়েরের অধিকারী। বিচারপতি অনিরুদ্ধ রায় তাঁর আদেশে সুনির্দিষ্টভাবে একথা উল্লেখ করেছেন। আবেদনকারীদের পক্ষে আইনজীবী হিসাবে এদিন উপস্থিত ছিলেন ডঃ এস মুরলীধর সহ পূর্বায়ন চক্রবর্তী, দীপ্তাংশু কর, এমএ কার্তিক, মৈত্রয় সুব্রহ্মণিয়ন, পলক ভগৎ ও হিল্লোল সাহা পোদ্দার। রাজ্য সরকারের পক্ষে ছিলেন জয়জিৎ চৌধুরী, হীরক বর্মন ও কুমার শান্তনু।
এদিনের নির্দেশ সম্পর্কে পশ্চিমবঙ্গ চা মজদুর সমিতির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্যা অনুরাধা তলোয়ার জানান, কলকাতা হাইকোর্টের জলপাইগুড়ি সার্কিট বেঞ্চের রায়ে তাঁরা খুবই খুশি।
ন্যাশনাল ইউনিয়ন অফ প্ল্যান্টেশন ওয়ার্কার্সের সাধারণ সম্পদক মণিকুমার দার্নাল বলেন, ‘ন্যূনতম মজুরি বিষয়ে ২০১৫ সালে কমিটি তৈরি হয়েছিল। দীর্ঘদিন ধরে মজুরি চুক্তি রূপায়িত হয়নি। হাইকোর্টের রায়কে স্বাগত জানাচ্ছি।’ পশ্চিমবঙ্গ তৃণমূল চা শ্রমিক ইউনিয়নের সম্পাদক রবিন রাইয়ের কথায়, ‘চা শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি বৃদ্ধির বিষয়ে দু’বার বৈঠক হয়েছে। উভয় বৈঠকেই রাজ্যের শ্রমমন্ত্রী মলয় ঘটক হাজির ছিলেন। দ্রুত পদক্ষেপ করার বিষয়ে আমরাও আশাবাদী। সার্কিট বেঞ্চের রায়কে স্বাগত।’
ডুয়ার্স চা বাগান ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক গোপাল প্রধান, নর্থ বেঙ্গল টি প্ল্যান্টেশন এমপ্লয়িজ ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক অভিজিৎ রায়, আইটিপিএ’র শ্রম উপদেষ্টা অমিতাংশু চক্রবর্তী, টি অ্যাসোসিয়েশন অফ ইন্ডিয়ার সচিব প্রবীর ভট্টাচার্য এদিন এই রায়কে স্বাগত জানান।