সানি সরকার, শিলিগুড়ি: শনিবার সন্ধ্যায় শিরশিরানি হাওয়া দিতেই সূর্যনগরের একদল ছেলে শরীরটাকে সেঁকে নিতে আগুনের পাশে আশ্রয় নিলেন। শুধু সূর্যনগর নয়, অনেক পাড়াতেই এই ছবি দেখা গিয়েছে। হাওয়ার দাপটে স্পষ্ট হয়েছে পারদ পতন। এদিন যে মরশুমের সবচেয়ে শীতলতম দিন ছিল শিলিগুড়ি সহ উত্তরবঙ্গের চার শহরে তা পরিষ্কার আবহাওয়া দপ্তরের তথ্যে। পৌষ সংক্রান্তিকে কেন্দ্র করে যে পারদ আরও নামবে সেই পূর্বাভাসও পাওয়া গিয়েছে। টানা এক মাসের ওপর বৃষ্টিহীন উত্তরে যে নতুন করে মাটি ভিজবে পশ্চিমী ঝঞ্ঝা এবং জলীয় বাষ্পের জোগানে, তাও স্পষ্ট।
আবহাওয়া দপ্তরের সিকিমের কেন্দ্রীয় অধিকর্তা গোপীনাথ রাহার বক্তব্য, ‘উত্তুরে হাওয়ার দাপটে তাপমাত্রা আরও কিছুটা কমতে পারে। তবে একটি শক্তিশালী ঝঞ্ঝা মঙ্গলবারের মধ্যেই ঢুকে পড়বে এই অঞ্চলে। এখন পর্যন্ত যা পরিস্থিতি তাতে বঙ্গোপসাগর থেকে জলীয় বাষ্পের জোগানও কিছুটা ঘটবে। ফলে উত্তরবঙ্গের সর্বত্রই কমবেশি বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।’
বৃষ্টিহীন উত্তরে শুষ্ক আবহাওয়া থাকলেও শীতের কামড় থেকে রেহাই মিলছে না কিছুতেই। বরং দিন যত এগোচ্ছে, ততই ঠান্ডার প্রকোপ বাড়ছে। জুবুথবু অবস্থা আম-নাগরিকের। প্রায় প্রতিদিনই রাতের তাপমাত্রা কমছে। আর এই পারদ পতনে এদিন সর্বনিম্ন তাপমাত্রার নিরিখে উত্তরবঙ্গের চার শহরে ছিল মরশুমে শীতলতম দিন। আবহাওয়া দপ্তরের তথ্য অনুসারে, জলপাইগুড়ি ৯.২, বালুরঘাট ১০.০, মালদা ১০.৩ এবং শিলিগুড়ির সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১১.২ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড। কোচবিহারে এদিন সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১১.১। বাকি শহরগুলিও ছিল ধারেকাছে। আবহবিদদের বক্তব্য, আগামী দু’তিনদিনের মধ্যে উত্তরবঙ্গে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা পৌঁছে যেতে পারে ১০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডে। ফলে কাঁপনটা যে আরও বাড়বে, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। আকাশ যত পরিষ্কার হবে, ততই বাধাহীন উত্তুরে হাওয়ার দাপট বাড়বে বলে বক্তব্য আবহবিদদের। যেমন, অনেকদিন পর এদিন শিলিগুড়িতে সূর্যের দেখা মিলেছে। রোদ পেয়ে অনেকেই স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছেন ঠিকই, কিন্তু সন্ধে হতে না হতেই তাঁরা টের পেয়েছেন শীতের কাঁপনটা।
আবহাওয়ার যা পূর্বাভাস, তাতে আকাশ অবশ্য বেশিদিন পরিষ্কার থাকবে না। মঙ্গলবার থেকেই উত্তরবঙ্গের আকাশ দখল করবে কালো মেঘ। আর সেই মেঘের থেকেই বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। আবহাওয়ার মতিগতি অনুসারে, মঙ্গলবার রাতে পাহাড়ে বৃষ্টি হলেও সমতল ভিজবে বুধবার থেকে। কিন্তু কতদিন থাকবে এই বৃষ্টি? হিমালয় সংলগ্ন উত্তরবঙ্গে অন্তত তিনদিন হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টি হতে পারে। দার্জিলিং পাহাড়ের উঁচু এলাকাতে তুষারপাতের সম্ভাবনাও রয়েছে। গৌড়বঙ্গের তিন জেলাতেও বৃষ্টি হবে, তবে তা হবে হালকা এবং বিক্ষিপ্তভাবে। অর্থাৎ কাঁপুনি এখনই শেষ হচ্ছে না।