কোচবিহার ও দিনহাটা: বিপরীতমুখী দুই ছবিকে কেন্দ্র করে বিভ্রান্তি বাড়ছে। কোনওভাবেই জবরদখল বরদাস্ত করা হবে না বলে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একদিকে কড়া বার্তা দিচ্ছেন। অন্যদিকে, ফুটপাথ ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে নিয়মিতভাবে টাকা তুলে কোচবিহার ও দিনহাটা পুরসভা কাঠগড়ায়। টাকার বিনিময়ে দুই পুরসভা জবরদখলকে স্বীকৃতি দিচ্ছে কিনা বলে প্রশ্ন জোরালো হয়েছে।
দিনহাটা পুরসভার ক্ষেত্রে ফুটপাথ ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে প্রতিদিন পাঁচ থেকে দশ টাকা পর্যন্ত নেওয়া হচ্ছে। কোচবিহার পুরসভার ক্ষেত্রে টাকার অঙ্কটা পাঁচ টাকা থেকে শুরু হলেও ১০০ টাকা পর্যন্ত পৌঁছে যাচ্ছে। এভাবে টাকা তোলা হলেও পুরসভার তরফে ব্যবসায়ীদের অনেককেই কোনও রসিদ দেওয়া হয় না বলেও অভিযোগ রয়েছে। মিনতি বর্মন কোচবিহার রাসমেলার মাঠের কোনে চা–রুটি বিক্রি করেন। তাঁর কথায়, ‘পুরসভা প্রতিদিন আমার কাছে ২০ টাকা করে নেয়। কখনও রসিদ দেওয়া হয়, কখনও বা দেওয়াই হয় না।’
এভাবে টাকা তোলা হলেও দুই পুর কর্তৃপক্ষেরই দাবি, এতে অন্যায়ের কিছু নেই। কোচবিহার পুরসভার চেয়ারম্যান রবীন্দ্রনাথ ঘোষের দাবি, ‘ফুটপাথে বসলে টোল দিতে হবে। এভাবে এখানে বসা ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে কনজারভেন্সি চার্জ নেওয়া হচ্ছে। এলাকায় জলের পরিষেবা, সাফাইকাজ, এসব তো পুরসভাকেই করতে হয়। এই টাকায় সেই সমস্ত কাজ করা হয়।’ এভাবে টাকা তুলে কোথায় জমা করা হয় বলে প্রশ্ন থাকলেও সমস্ত টাকাই ব্যাংকে জমা করা হয় বলে চেয়ারম্যান জানিয়েছেন। দিনহাটা পুরসভার চেয়ারম্যান গৌরীশংকর মাহেশ্বরী বললেন, ‘সার্ভিস চার্জ হিসেবে খাবার দোকানগুলি থেকে এই টাকা তোলা হয়। এই টাকায় সংশ্লিষ্ট দোকানগুলির আবর্জনা সাফাই করা হয়।’
কোচবিহার শহরে পুরসভা ভবানীগঞ্জ বাজার, দেশবন্ধু মার্কেট থেকে শুরু করে নতুন বাজার, সর্বত্র ফুটপাথের ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে টাকা আদায় করে। রাস্তার ধারে যাঁরা আখের রস, ফুচকা, প্রভৃতি বিক্রি করেন, তাঁদের কাছ থেকেও টাকা নেওয়া হয়। গত এক বছরে পুরসভা এই টাকার পরিমাণ বাড়িয়েছে। ফুটপাথ দখলমুক্ত করতে পুলিশ একদিকে অভিযান চালাচ্ছে, অন্যদিকে, পুরসভা ফুটপাথ ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে এভাবে টাকা তোলায় বিভ্রান্তি বাড়ছে। সূত্রে খবর, দিনে গড়ে ১০ হাজার টাকা আদায় হয়। মাসের হিসেবে তিন লক্ষ টাকা। রসিদ দিয়ে এই টাকা আদায়ের লক্ষ্যে পুরসভা ৪৫ জন কর্মীকে অস্থায়ীভাবে নিয়োগ করেছে।
দিনহাটা মহকুমা শাসকের বাসভবনের বিপরীতে অর্থাৎ দিনহাটা মহকুমা হাসপাতালের আউটডোরের বাইরের ফুটপাথে গজিয়ে উঠা একাধিক দোকানের পাশাপাশি মহকুমা শাসকের অফিস থেকে ঢিলছোড়া দূরে সংহতি ময়দানের সামনের ফুটপাথে থাকা দোকান থেকেও পুরসভা প্রতিদিন টাকা তুলছে। চেয়ারম্যানের দাবি, সার্ভিস চার্জ বাবদ প্রতিদিন ৫০–৬০টি দোকান থেকে এই টাকা তোলা হয়। বাস্তবে কিন্তু শহরজুড়ে ৩০০-রও বেশি দোকান থেকে টাকা তোলা হচ্ছে। সংহতি ময়দান চত্বরে চায়ের দোকান চালানো এক ব্যবসায়ী বললেন, ‘আগে টেবিল পেতে যখন চায়ের দোকান চালাতাম তখন পাঁচ টাকা করে নেওয়া হত। বর্তমানে একটি ঠ্যালাগাড়ি নিয়ে ব্যবসা করি। পুরসভা এখন আমার কাছ থেকে ১০ টাকা করে আদায় করছে।’ সূত্রের খবর, ফুটপাথে বসা লটারির দোকান, কাপড়ের দোকানের মতো দোকানগুলি থেকেও টাকা আদায় করা হচ্ছে। আদায় করা এই টাকা কীভাবে খরচ করা হচ্ছে সে বিষয়ে পুর কর্তৃপক্ষ স্পষ্টভাবে কিছু জানায়নি।
সিপিএমের জেলা কমিটির সদস্য শুভ্রালোক দাসের দাবি, ‘সার্ভিস চার্জের নামে আসলে কাটমানি আদায় করা হচ্ছে।’ কোচবিহার ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক সুরজকুমার ঘোষের বক্তব্য, ‘সংগঠন ফুটপাথ তো বটেই, কোনওরকম জবরদখলকে সমর্থন করে না। তবে এই ব্যবসায়ীরা যাতে কোনও সমস্যায় না পড়েন সেজন্য মানবিক দৃষ্টিভঙ্গিতে এই বিষয়টি দেখা উচিত।’