সপ্তর্ষি সরকার, ধূপগুড়ি : কলেজের অধ্যাপক ভোটে প্রার্থী হয়েছেন। তাই ছাত্রীদের তাঁর নামে জয়গান গাইতে হবে। অভিযোগ, এমনই হুইপ জারি করে ধূপগুড়ি গার্লস কলেজের পড়ুয়াদের দিয়ে ভিডিও করা হয়েছে। ঘটনাটি প্রকাশ্যে আসতেই সমালোচনার ঝড়। কীভাবে বহিরাগতরা কলেজে ঢুকে এই ভিডিও করার অনুমতি পেল তা নিয়ে প্রশ্ন। গোটা ঘটনায় তৃণমূল কংগ্রেস ও তাদের পরামর্শদাতা সংস্থার দিকে অভিযোগের তির। কলেজ কর্তৃপক্ষ ঘটনার দায় ঝেড়ে ফেলতে তত্পর। তৃণমূলও ঘটনার দায় নিতে নারাজ। বরং তাদের দাবি, বিরোধীরা এই কাজে যুক্ত কি না তা খতিয়ে দেখা প্রয়োজন।
ধূপগুড়ি উপনির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর হয়ে ভোটের দায়িত্ব সামলানো দলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক তথা ফালাকাটার বিজেপি বিধায়ক দীপক বর্মন বলেন, ‘তৃণমূল প্রার্থীর মতো আমি নিজেও একজন শিক্ষক। পড়ুয়াদের ব্যবহার করে তাঁদের ওপর চাপ দিয়ে ভোট প্রচারের ভিডিওর শুটিং তৃণমূলের নৈতিক অধঃপতনের সাক্ষী। আমরা এনিয়ে নির্বাচন কমিশনের দ্বারস্থ হয়ে তৃণমূলের প্রার্থীপদ খারিজ করার আবেদন জানাব।’ ধূপগুড়িতে প্রচারে এসে দলীয় প্রার্থীর সমর্থনে পদযাত্রায় শামিল সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী বলেন, ‘তৃণমূল এই বিপজ্জনক কাজ বন্ধ করুক। টাকার বিনিময়ে ভাড়াটে সংস্থাকে দিয়ে এভাবে পড়ুয়াদের কাজে লাগিয়ে ভোট প্রচারের নোংরা কাজের সমস্ত তথ্য সহ আমরা কমিশনের দ্বারস্থ হচ্ছি। ভাড়াটে বহিরাগতদের দিয়ে সংগঠিত এসব কাজের তীব্র ধিক্কার জানাই।’
তৃণমূলের জলপাইগুড়ির সাধারণ সম্পাদক রাজেশকুমার সিং বলেন, ‘কে কোথায় কী করে বেড়াচ্ছে তার সঙ্গে তৃণমূলকে কেন যুক্ত করা হবে? কলেজের ভিতরে যা হবে তার সবই কর্তৃপক্ষের আওতায়। এর সঙ্গে তৃণমূলকে যুক্ত করা ঠিক নয়। এছাড়া, ঘটনাস্থলে তৃণমূলের ব্যানার, পতাকা জাতীয় কিছু ছিল কি না তা দেখা প্রয়োজন। পাশাপাশি, বিজেপি বা সিপিএমের মতো কেই এই কাজ করছে কি না তাও দেখা দরকার।’ কলেজের ক্লাসরুম বা চত্বরে এমন কোনও শুটিং করার অনুমতি দেওয়া হয়নি বলেই কর্তৃপক্ষের দাবি। ধূপগুড়ি গার্লস কলেজের অধ্যক্ষ ডঃ বিজয় দেবনাথ বলেন, ‘এদিন আমি ছুটিতে ছিলাম। তবে এমন কিছু হওয়ার কথা নয়। সোমবার কলেজে গিয়ে বিস্তারিত জেনে এবিষয়ে বলতে পারব।’
অভিযোগ, এদিন সকালে ক্যামেরা, মাইক্রোফোন নিয়ে একদল বহিরাগত যুবক-যুবতী ধূপগুড়ি গার্লস কলেজে ঢুকে ছাত্রীদের নিয়ে রীতিমতো ক্লাস করে কলেজের ইতিহাসের অধ্যাপক তথা তৃণমূল প্রার্থী ডঃ নির্মলচন্দ্র রায়ের সমর্থনে ভিডিও করার চেষ্টা চালায়। কীভাবে অধ্যাপক তথা তৃণমূল প্রার্থীর নামে প্রশংসাসূচক কথা বলে ভিডিওতে তাঁকে ভোটে জেতানোর আহ্বান জানাতে হবে তা ছাত্রীদের শেখানো হয়। অভিযোগ, এ কাজে কলেজ কর্তৃপক্ষেরও প্রচ্ছন্ন মদত ছিল। তবে ছাত্রীদের স্ক্রিপ্ট বোঝানো বা ভিডিও শুটিংয়ের সময় কলেজের কোনও শিক্ষক বা কর্মীকে সেখানে দেখা যায়নি।
কিন্তু বহিরাগতরা কী করে কলেজে ঢুকে ছাত্রীদের নিয়ে এসব কাণ্ড চালাল আর কর্তৃপক্ষও কেনই বা চুপ থাকল সেই প্রশ্ন জোরালো হয়েছে। আরও অভিযোগ, ঘটনার খবর ছড়ানোয় সমালোচনা শুরু হয়েছে বলে জানাজানি হওয়ায় ছাত্রীদের মুখ বন্ধ করে থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়। নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক ভীত এক ছাত্রীর কথায়, ‘ওঁরা শিখিয়েছিলেন স্যরকে পেয়ে কলেজ নানাভাবে উপকৃত হয়েছে আর তাই তাকে ভোট দিলে ধূপগুড়ির অনেক উপকার হবে, ভিডিওতে আমাদের এমনটাই বলতে হবে। এজন্যে আমাদের জামায় মাইক্রোফোন লাগিয়ে দেওয়া হয়। কলেজ ভবন ও চত্বরের একাধিক জায়গায় শুটিং করা হয়।’
ছাত্রীদের নিয়ে প্রচার ভিডিও শুটে তৃণমূলের সর্বক্ষণের সক্রিয় কর্মীদের দেখা গেলেও পরামর্শদাতা সংস্থার অতি সক্রিয়তায় তৃণমূলের অন্দরে ক্ষোভ ছড়িয়েছে বলে খবর। ওই সংস্থার এমন কাজের জন্য যদি ভোটে বিরূপ প্রতিক্রিয়া হয় তবে তা যেন তাঁদের ঘাড়ে না চাপানো হয় সেকথা স্থানীয় নেতারা দলের সর্বোচ্চ নেতাদের জানাতে চাইছেন। যাঁকে জেতাতে এই ভিডিও, তৃণমূলের সেই প্রার্থীর সঙ্গে যোগাযোগ সম্ভব না হওয়ায় তাঁর প্রতিক্রিয়া মেলেনি।