নকশালবাড়িঃ ছয় বছর ধরে রাস্তার উপর পড়ে রয়েছে শুধু বালি ও পাথর। কথা ছিল পাকা করার। কিন্তু হয়নি। বরাদ্দ ছিল দুই কোটি ৯১ লক্ষ টাকা। সেই টাকা দিয়ে চার কিলোমিটার রাস্তায় শুধু বালি ও পাথর ফেলে রাখা হয়েছে। ভাঙা রাস্তায় হড়কাচ্ছে বাইক, সাইকেল। রাস্তার মাঝে তৈরি হয়েছে বিশাল গর্ত। বৃষ্টি হলেই জল জমে থাকছে সেই গর্তে। বর্ষার আগেই রাস্তা পাকা করার দাবি জানিয়েছেন বেলগাছি চা বাগানের বাসিন্দারা।
এলাকাটি নকশালবাড়ি ব্লকের আওতায় পড়লেও পরে জিটিএ’র অন্তর্ভুক্ত হয়। কিন্তু বেলগাছি চা বাগানের অধিকাংশ বাসিন্দা এখনও নকশালবাড়ি ব্লকের অন্তর্ভুক্ত। চার কিলোমিটার বেহাল রাস্তাটি ব্যবহার করেন নকশালবাড়ির বাসিন্দারাও। সালে জিটিএ মিরিক ইঞ্জিনিয়ারিং ডিভিশন বেলগাছি চা বাগান থেকে চেঙ্গা বস্তি পর্যন্ত চার কিলোমিটার রাস্তাটি মেরামত করে। কিন্তু স্থানীয়দের অভিযোগ, রাস্তা মেরামতের নামে শুধু রাস্তায় পাথর ও বালি ফেলে রাখা হয়েছে। রাস্তার কাজ সম্পূর্ণ না করেই এজেন্সি পালিয়ে যায়। কোটি টাকার রাস্তায় দুর্নীতি হয়েছে।
এলাকার স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্যা বারাইতি নাগাসিয়ার কথায়, ‘ছয় বছর আগে এই রাস্তা তৈরিতে কোটি কোটি টাকার দুর্নীতি হয়েছে। যার ফলে রাস্তার কাজটি সম্পূর্ণ হয়নি। এর ফল ভুগতে হচ্ছে এখানকার মানুষকে। এবিষয়ে মিরিকের বিডিও শ্রেয়সী মাইতির বক্তব্য, জিটিএ রাস্তার কাজ শুরু করেছিল। কাজ কেন সম্পূর্ণ করতে পারেনি সেটা তারাই বলতে পারবে। জিটিএ মুখপাত্র এসপি শর্মা বলেন, ‘রাস্তাটি নিয়ে এখনও কোনও অভিযোগ আমার কাছে আসেনি। তবে সেখানে রাস্তার কাজ কেন সম্পূর্ণ হয়নি, তা খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেব।’
জিটিএ থেকে বেলগাছি চা বাগানের লিচি লাইনে রাস্তার কাজের একটি বোর্ডও লাগানো রয়েছে। গত ছয় বছর ধরে রাস্তার এমন বেহাল দশা হয়ে থাকলেও কেউ রাস্তা পাকা করার বিষয়ে কর্ণপাত করেনি। চা বাগানেরবাসিন্দাদের পাশাপাশি নকশালবাড়ি, মিরিকের অধিকাংশ বাসিন্দাই ব্যবসার তাগিদে রাস্তাটি ব্যবহার করেন।
পর্যটনের ক্ষেত্রেও এই রাস্তাটির গুরুত্ব রয়েছে। এই রাস্তা ধরে পর্যটকদের একাংশ লোহাগড়, পুটুং, টিংলিং যান। নকশালবাড়ি থেকে প্রতি সপ্তাহে ব্যবসায়ীরা এই রাস্তা ধরেই মালপত্র নিয়ে যাতায়াত করেন। এদের সংখ্যা প্রায় দুশো। তাঁরাও রাস্তাটির বেহাল দশা নিয়ে ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন। সুকুমার সিংহ নামক নকশালবাড়ির এক সবজি বিক্রেতা বলেন, ‘এই রাস্তা ধরেই গাড়ি করে সবজি নিয়ে লোহাগড়ের হাটে যাই। রাস্তার যা পরিস্থিতি তাতে যে কোনও সময় বড় বিপদ ঘটে যেতে পারে।’ একই বক্তব্য চেঙ্গাবস্তির বাসিন্দা। কৃষ্ণা লোহারেরও। আরেক বাসিন্দা রোহিত নাগাসিয়া বলেন, ছয় বছর ধরে এমন অবস্থা। আমাদের দিকে দেখার কেউ নেই। নকশালবাড়ি পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি আনন্দ ঘোষ বলেন, রাস্তাটির জিটিএ এলাকায় পড়লেও নকশালবাড়ির অধিকাংশ বাসিন্দা এই রাস্তাটি ব্যবহার করেন। রাস্তাটি দ্রুত পাকা করতে সভাধিপতির মাধ্যমে জিটিএকে আবেদন জানানো হবে।