রাজগঞ্জ: রাজগঞ্জের কালীনগরের করতোয়া নদীর সেতুর পাশেই অবস্থিত শ্মশানঘাট। রাজগঞ্জ পোস্ট অফিস মোড় হয়ে কালীনগর যেতেই করতোয়া নদীর সেতু পড়ে। আর সেই সেতুর ডান পাশেই রয়েছে শ্মশানঘাট। রাস্তা থেকেই দেখা যায় শ্মশানঘাটের জঙ্গলের পাশেই ঘেরা একটি তাবু। তাবুটি প্রথমবার দেখলে যে কারও মনে হতে পারে দাহকার্যের সময় শবদাহের প্রয়োজনীয় সামগ্রী রাখতে অস্থায়ীভাবে কেউ বানিয়েছে। প্রয়োজন শেষে তাবুটি ফেলে রেখে চলে গিয়েছে। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় এই তাবুতে নিয়মিত বসবাস করেন এক ব্যক্তি। তাঁর নাম মোহন দাস। ডিসকভারি চ্যানেলের জনপ্রিয় টিভি শো ‘ম্যান ভারসেস ওয়াইল্ড’-এর অ্যাংকার বেয়ার গ্রিলসের সঙ্গে তুলনা করে তাঁকে ‘রাজগঞ্জের মোহন গ্রিলস’ বলেই ডাকেন রাজগঞ্জের ছেলে ছোকরারা।
করতোয়া সেতুর পাশ দিয়ে একটু হেঁটে নীচে পৌঁছালেই জীর্ণ শত ছেঁড়া প্লাস্টিক ও ত্রিপল দিয়ে বানানো তাবুটি দেখা যায়। এই তাবুর অধিবাসীর বিছানাটি বাঁশের কঞ্চি ও ডালপালার তৈরি। তার উপর থার্মোকলের তোষক। সেখানেই খুশি মনে বসে আছেন একজন মানুষ, মোহন গ্রিলস। নীচে হয়তো ছোট্ট একটা হাড়িতে ফুটছে ভাত বা নিজের হাতে ধরা নদীর মাছ ঝলসানো হচ্ছে আগুনে। চারিদিকে প্রকৃতি থেকেই সংগ্রহ করা তাঁর সামগ্রী। সে নিজেও ব্যস্ত কিছু বানাতে খুটখাট করে কুড়িয়ে পাওয়া কোনও জিনিস দিয়ে। ঠিক যেভাবে বেয়ার গ্রিলস কোনও অস্ত্র, নৌকা বা জীবন বাঁচানো সামগ্রী তৈরি করে তাঁর জনপ্রিয় সারভাইভাল প্রোগ্রামটিতে। তাঁর আগে একটা হ্যামকও ছিল, সেখানে বসেই হয়তো তিনি শৈশবের স্মৃতি রোমন্থন করতেন। কিন্তু বর্তমানে সেখানে নতুন টিনের ঘরে এক সাধুর আস্তানা গড়ে উঠেছে। কিন্তু মোহন রয়ে গিয়েছে সেই আদিম সত্তায়। সত্যি কী করে পারে একটা মানুষ দিনের পর দিন এভাবে থাকতে তা ভেবেই গা শিউরে ওঠে। মানুষের চাহিদা কম থাকলে জীবনধারণের জন্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী প্রকৃতির সাহচর্যই পাওয়া যেতে পারে আর সেই সামান্যতেই মানুষ যে আনন্দে বাঁচতেও পারে তার অন্যতম দৃষ্টান্ত মোহন গ্রিলস।
অনেক কষ্টে, মন ভালো থাকায় কিছু কথা জানা গিয়েছে এই মানুষটার কাছ থেকে। মোহন জানান, রাজগঞ্জ বাজার থেকে চেয়েচিন্তে যা পাই তাতেই জুটে যায় খাবারটা, আর বাকিটা নদীতে মাছ ধরে বা যেখান-সেখান থেকে পাতা, শাক সংগ্রহ করে।
গত বর্ষাতেই ভেসে গিয়েছিল তাঁর পুরানো বাসস্থানটি। কেউ তাঁর পাশে এসে দাঁড়াননি। তাঁকে একটা ত্রিপলও পর্যন্ত কেউ দেননি। কিন্তু তিনি ছেড়ে যাননি তাঁর প্রিয় আস্তানা। তিনি নতুন উদ্যোমে নদীর বাঁশ, ডালপালা, ছেঁড়া ত্রিপল ইত্যাদি দিয়ে পুনরায় তৈরি করেছেন নতুন আস্তানা। তবে তিনি এবার বর্ষার জল থেকে বাঁচতে, মাটি থেকে অনেকটা উপরে দোতালার ধাঁচে তৈরি করেন তাবুটি। লোকসভা ভোট দিয়েছেন কি না? রেশন কার্ড আছে কি না? ইত্যাদি প্রশ্নের উত্তর পাওয়া না গেলেও মোহন জানিয়েছেন, একসময় তাঁর সবাই ছিল এখন কেউ তাঁর পাশে নেই।