রায়গঞ্জ: নবান্নের মদতে জলাভূমি ভরাটের অভিযোগ উঠল। বিরোধী রাজনৈতিক দলের অভিযোগ, সরাসরি নবান্ন থেকে জলাজমিকে বাস্তুতে কনভার্ট করে নেওয়া হচ্ছে। আর তৃণমূলের প্রত্যক্ষ মদতে শহরজুড়ে জলাজমি ভরাট হচ্ছে। আবার শহরের বাসিন্দাদের অনেকেই জলাজমি ভরাট নিয়ে ক্ষুব্ধ হলেও সংবাদমাধ্যমের সামনে কিছু বলতে চান না। তাদের সাফ কথা, জলাজমি ভরাট মেনে নেওয়া যায় না। কিন্তু এর বিরুদ্ধে বলে নিজেকে ‘টার্গেট’ বানানো, নৈব নৈব চ।
সম্প্রতি শহর সংলগ্ন সুভাষগঞ্জ এলাকার এক জলাভূমি ভরাটের অভিযোগ ওঠে। উত্তরবঙ্গ সংবাদে সেই খবর প্রকাশিত হয়। এরপর রায়গঞ্জ শহরের পুরোনো জাতীয় সড়কের পার্শ্ববর্তী ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের জলাভূমি ভরাটের দৃশ্য সামনে আসে। যা নিয়ে তৃণমূল ও রাজ্য সরকারকে বিঁধেছেন বিরোধীরা। যদিও ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের কো-অর্ডিনেটর পায়েল সাহা মণ্ডল বলেন, ‘ওখানে জলাজমি ভরাটের বিষয়ে জানার পরেই সেই কাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। পরবর্তীতে জমির মালিক সমস্ত কাগজপত্র দেখিয়েছেন যে সেটা সম্পূর্ণরূপে বাস্তুজমি। তবে সেখানের ক্যানেল যাতে বন্ধ না হয় সেই বিষয়ে বলা হয়েছিল। সেখানে ঢালাই ড্রেন তিনিই করে দেবেন।’
বিজেপির জেলা সভাপতি বাসুদেব সরকারের কটাক্ষ, ‘তৃণমূল জমানায় শুধু রায়গঞ্জ শহরই নয়, জেলার বিভিন্ন প্রান্তে জলাজমি ভরাট হচ্ছে দীর্ঘদিন ধরে। এমন অনেক জায়গা আছে যেখানে জলাজমি ভরাট বা মাটি পাচারের খবর করতে সংবাদমাধ্যম ঢুকতে পারে না। কারণ অধিকাংশ ক্ষেত্রেই জলাজমি ভরাট বা মাটি কাটার ক্ষেত্রে আগ্নেয়াস্ত্রধারী দুষ্কৃতীরা সেখানে উপস্থিত থাকেন। সেখানে উত্তরবঙ্গ সংবাদ প্রতিনিয়ত এই বিষয়ে খবর করছেন তা সত্যিই কুর্নিশযোগ্য। তৃণমূলের নেতারাই এই সমস্ত ক্ষেত্রে জড়িত থাকেন। সরাসরি কালিঘাট পর্যন্ত এর ভাগ যায়।’
আবার জেলা কংগ্রেস সভাপতি মোহিত সেনগুপ্ত জানান, ‘শহরের সমস্ত পুকুর ও জলাশয় ভরাট হচ্ছে প্রশাসনের নাকের ডগায়। শহরের পশ্চিম বীরনগরের বিলবাড়িও ভরাট হয়েছে। এলাকাবাসী অভিযোগ করেও কিছুই হয়নি। সেটা নাকি নবান্ন থেকে জলাজমিকে বাস্তুতে কনভার্ট করে আনা হয়েছে। প্রশাসন ও পুরসভা উদাসীন বলেই রায়গঞ্জে দিনের পর দিন এমনটা হচ্ছে।’
অন্যদিকে তৃণমূলের জেলা সহ-সভাপতি তথা রায়গঞ্জ পুরসভার উপ-প্রশাসক অরিন্দম সরকার বলেন, ‘যেকোনও রাজনৈতিক দল যেকোনও বিষয়ে অভিযোগ করতেই পারেন। কিন্তু তার ভিত্তি কতটা সেটা একটা বিষয়। তবে কোথাও এরকম কোনও ঘটনা ঘটে থাকলে কেউ নির্দিষ্ট দপ্তরের কাছে অভিযোগ করতেই পারেন। ভূমি দপ্তর বা পুরসভায় অভিযোগ জানালে নিশ্চয়ই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’ যদিও রায়গঞ্জ মহকুমা ভূমি ও ভূমি সংস্কার আধিকারিক শিবপ্রসাদ দাস বলেন, ‘কোনও জায়গায় যদি জলাজমি ভরাটের ঘটনা ঘটে, তাহলে কেউ সামনে এসে অভিযোগ করুন। অভিযোগ করলে পুরোটাই তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’