কোচবিহার: ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত চ্যাংরাবান্ধায় অনুপ্রবেশের জন্য বাংলাদেশি গ্রেপ্তার হওয়া যেন নিত্যদিনের ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তার উপর আবার সীমানা পেরিয়ে অবৈধ উপায়ে কোচবিহার শহরের বুকে ঢুকে পড়েছে ইরানের বাসিন্দারা। তৈরি করে ফেলেছে ভারতীয় জাল কাগজপত্রও। সাধারণ মানুষ প্রশ্ন তুলছেন, কোচবিহার কি তাহলে বিদেশি অনুপ্রবেশকারীদের কাছে সেফ জোন হয়ে উঠেছে? অনুপ্রবেশকারীরা কোনও নাশকতামূলক কাজকর্ম করলে তার দায় কে নেবে? তার উপর হোটেলগুলি বা ভাড়াবাড়িতেও পুলিশের নিয়মিত নজরদারি থাকে না বলেই অভিযোগ। ফলে সেখানে কারা থাকছে তা অজানাই থেকে যাচ্ছে। স্বাভাবিকভাবেই লোকসভা নির্বাচনের আগে এই ঘটনাগুলি নিয়ে সাধারণ মানুষের উদ্বেগ বেড়েই চলেছে। তবে পুলিশের এক আধিকারিকের যুক্তি, নিয়মিত নজরদারি থাকে বলেই অনুপ্রবেশকারীরা ধরা পড়ছে।
ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের কোচবিহার জেলায় বহু জায়গাতেই কাঁটাতারের বেড়া নেই। নজর এড়িয়ে সেদিক দিয়ে পণ্য পাচার তো চলেই। বহু অনুপ্রবেশকারীই সেদিক দিকে ঢুকে পড়ে বলে অভিযোগ। শনিবারই চ্যাংরাবান্ধা সীমান্তে পাঁচজন বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীকে পাকড়াও করেছেন বিএসএফের ৯৮ নম্বর ব্যাটালিয়নের জওয়ানরা। তার আগেও একাধিকবার ধরপাকড় চলেছে। সূত্রের খবর, অনুপ্রবেশের জন্য কোচবিহারে দালালচক্র সক্রিয় রয়েছে। তাদের সহযোগিতাতেই পাচার চলে। শুধু অনুপ্রবেশই নয়। ভুয়ো আধার কার্ড তৈরি করে দেওয়ার মতো ঘটনাও প্রকাশ্যে এসেছে। ধৃত চার ইরানের বাসিন্দার মধ্যে দুজনের কাছ থেকে জাল আধার কার্ড পাওয়া গিয়েছে। পেশায় আইনজীবী কথা কোচবিহার শহরের বাসিন্দা শিবেন রায়ের কথায়, ‘অনুপ্রবেশে সহযোগিতা করা বা ভুয়ো কাগজপত্র তৈরি করে দেওয়ার চক্রটিকে দ্রুত ধরতে হবে। নাহলে এই সমস্যা কখনও মিটবে না। প্রশাসনকে আরও কঠোর হতে হবে। হোটেল বা ভাড়াবাড়িতে কারা থাকছেন সেখানেও নিয়মিত নজরদারি রাখা প্রয়োজন।’
অনুপ্রবেশকারীদের কাছে ভুয়ো কাগজপত্র থাকার ঘটনা প্রকাশ্যে আসতেই চিন্তা বাড়ছে হোটেল ব্যবসায়ীদের। কোচবিহার হোটেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন সূত্রেই জানা গিয়েছে, জেলাতে ৬০টিরও বেশি হোটেল রয়েছে। সাধারণত ভারতীয় যে কোনও বাসিন্দা সচিত্র কাগজপত্র দেখিয়ে হোটেলে থাকার সুযোগ পান। বিদেশি কোনও নাগরিকের ক্ষেত্রে পার্সপোর্ট, ভিসা সহ আনুষঙ্গিক তথ্য প্রয়োজন। সংশ্লিষ্ট অ্যাসোসিয়েশনের সহ সভাপতি তথা হোটেল ব্যবসায়ী রাজু ঘোষ বললেন, ‘নিয়ম অনুযায়ী বিদেশি কোনও নাগরিক হোটেলে এলে আমরা তৎক্ষণাৎ ডিআইবি-কে জানাই। শুনতে পেলাম বিদেশিদের কাছে নাকি ভারতীয় জাল আধার কার্ড পাওয়া গিয়েছে। ফলে কেউ যদি জাল আধার কার্ড নিয়ে হোটেলে চলে আসে আমাদের ক্ষেত্রে বোঝা সম্ভব হবে না সে সত্যিই ভারতীয় নাকি বিদেশি।’