শিলিগুড়ি: প্রায়দিনই বিভিন্ন গোষ্ঠীর মধ্যে ঝামেলা বাধে। আর সেই ঝামেলার জেরে সন্ধ্যার পর থেকেই এলাকায় উত্তেজনা ছড়ায়। পুরনিগমের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের কাছে এমন ঘটনা নিত্যনৈমিত্তিক হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু প্রতিদিন এভাবে ঝামেলা বাধার কারণ কী? স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, এলাকায় সিন্ডিকেট কার হাতে থাকবে, কে হবে পাড়ার দাদা, এসব নিয়ে ঝামেলা বাধছে।
রবিবার রাতে দুই গোষ্ঠীর ঝামেলায় এলাকায় তৃণমূল যুব নেতা হিসেবে পরিচিত বিজয় সাহানির পিঠে ছুরি দিয়ে আঘাত করা হয়েছে বলে অভিযোগ। এঘটনায় শহরে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। বিজয় বর্তমানে উত্তরবঙ্গ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। বিজয়ের অভিযোগ, তাঁর বন্ধু প্রশান্ত সিংয়ের সঙ্গে হরিহর মাহাতোর কথা কাটাকাটি হয় শনিবার। এরপর হরিহর রবিবার রাতে আকাশ মাহাতো ও তার দলবল দিয়ে প্রশান্তের বাড়ি ঘিরে ফেলে।
এদিকে, দুইপক্ষের মারপিটের জেরে তিনিও আক্রান্ত হয়েছেন বলে দাবি হরিহরের। ঘটনার পর হরিহরও শিলিগুড়ি জেলা হাসপাতালে ভর্তি হন। এদিন দুপুরে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘শনিবার রাতে হঠাৎ করেই বিজয়ের দলবল আমাকে মারধর করে। রবিবার আমি দুই-একজনকে নিয়ে ওঁদের সঙ্গে কথা বলতে গেলে আমাকে ফের মারধর করা হয়।’ তবে এই অভিযোগ তোলার পরেও শেষরক্ষা হয়নি। হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়ে বাড়ি যাওয়ার পরেই বিজয়ের লিখিত অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে হরিহরকে গ্রেপ্তার করেছে খালপাড়া ফাঁড়ির পুলিশ।
ঝামেলার পেছনে এলাকায় ঘুরে অবশ্য অন্য গল্পও সামনে এসেছে। জানা গিয়েছে, হরি বিয়েতে ব্যবহার হওয়া বাসনপত্র ভাড়া দেওয়ার কাজ করেন। শনিবার রাতে তিনি রাস্তায় গাড়ি দাঁড় করিয়ে বাসনপত্র নামাচ্ছিলেন। সেসময়ই বিজয়ের সঙ্গী প্রশান্ত সিং ও তার দলবল দাদাগিরি করে। এর পালটা হিসেবেই রবিবার হরি, আকাশের দলবল নিয়ে হামলা চালানোর চেষ্টা করে। তবে কেবল এই দুই গোষ্ঠী নয়, ৫ নম্বর ওয়ার্ডে এরকম একাধিক গোষ্ঠী তৈরি হয়েছে। যার পেছনে রয়েছে এলাকার রাজনৈতিক নেতারাই। তবে এই গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে বর্তমানে বিজয়ের দলবলই সবচেয়ে বেশি প্রভাবশালী, বলছেন এলাকাবাসী।
ওয়ার্ডের প্রভাবশালী নেতাদের হাত মাথায় থাকায় একাধিক অবৈধ কাজের সঙ্গে তাঁর নাম জড়িয়েছে। এরমধ্যে যেমন অবৈধ নির্মাণ রয়েছে, তেমনই রয়েছে জমি দখলের কারবারও। পাশাপাশি ওই ওয়ার্ডে নির্মীয়মাণ মলগুলো থেকেও মাসোহারা বিজয়দের হাত দিয়ে ওয়ার্ডের ‘বড়’ নেতাদের কাছে চলে যায় বলে অভিযোগ। তবে রবিবারের ঘটনার পর থেকে সবকিছু প্রকাশ্যে আসতে শুরু করায় বিজয়ের সঙ্গে দূরত্ব বাড়ানোটাই শ্রেয় বলে মনে করেছেন ওই নেতারা।
ওয়ার্ডের তৃণমূল সভাপতি মনোজ মিশ্রার কথায়, ‘এটা ওদের ব্যক্তিগত ব্যাপার। আমরা কোনও পক্ষের সঙ্গে নেই।’ একই সুর ওয়ার্ড কাউন্সিলার বিজেপির অনীতা মাহাতোরও। তাঁর কথায়, ‘এলাকা শান্তিপূর্ণই রয়েছে। সিন্ডিকেটের কোনও ব্যাপার নেই।’ এদিকে জনপ্রতিনিধিরা মানতে না চাইলেও এলাকাবাসীদের কথায়, ওয়ার্ডে নেতার অভাব নেই। গোষ্ঠীরও অভাব নেই। সবই আসলে এলাকার তৈরি করা সিন্ডিকেট নিজেদের হাতে করার লড়াই।