প্রসেনজিৎ দাশগুপ্ত, নয়াদিল্লি: কেন্দ্রীয় সরকার গঠিত ‘এক দেশ, এক নির্বাচন’ সংক্রান্ত কমিটি থেকে সরে দাঁড়ালেন অধীর চৌধুরী। শনিবার রাতে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত শাহকে চিঠি লিখে সংশ্লিষ্ট কমিটি থেকে সরে দাঁড়ানোর ইচ্ছে প্রকাশ করেন অধীর। অমিত শাহকে পাঠানো চিঠিতে অধীর জানিয়েছেন, এদিন সংবাদমাধ্যম সূত্রে এ-ই সরকারি কমিটির গঠন এবং সেই সংক্রান্ত গেজেট নোটিফিকেশনের বিষয়ে জানতে পেরেছেন তিনি। সাধারণ নির্বাচনের আর কয়েক মাস যখন বাকি, ঠিক সেই মুহূর্তে এমন একটি সংবেদনশীল বিষয় নিয়ে কমিটি গঠন এবং সর্বভারতীয় স্তরে পর্যালোচনা মূলত বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় থেকে দেশবাসীর নজর ঘোরানোর একটি প্রচেষ্টা বলেই মনে হচ্ছে।
এই প্রসঙ্গে অধীরের সংযোজন, ‘এমন একটি শীর্ষ স্তরীয় কেন্দ্রীয় কমিটিতে রাজ্যসভার বিরোধী দলনেতাকেই (মল্লিকার্জুন খাড়গে) যেখানে বাদ দেওয়া হয়েছে, সেখানে কমিটির সংসদীয় গণতন্ত্রকে অগ্রাহ্য করার ইঙ্গিত স্পষ্ট। তাই এই কমিটিতে থাকার জন্য আপনার আমন্ত্রণ প্রত্যাখ্যান করতে বাধ্য হলাম।’
‘এক দেশ-এক নির্বাচন’ বিষয়ক শীর্ষ স্তরীয় ৮ সদস্যের নীতি কমিটির নেতৃত্বে প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দের নাম ঘোষণা করার পর থেকেই সোচ্চার হয়েছে গোটা বিরোধী শিবির। শনিবার রাতে এই কমিটি গঠন নিয়ে সরকারি স্তরে গেজেট নোটিফিকেশন প্রকাশ্যে আনার পর, রীতিমত বারুদে অগ্নিসংযোগ হয়। দেখা যায় কমিটির অন্যতম সদস্য হিসেবে স্থান পেয়েছেন কংগ্রেস এর লোকসভা দলনেতা অধীররঞ্জন চৌধুরী। তালিকায় রাজ্যসভার বিরোধী দলনেতা মল্লিকার্জুন খাড়গের নাম উহ্য রেখে অপ্রত্যাশিত ভাবে দলত্যাগি কংগ্রেস নেতা তথা রাজ্যসভার প্রাক্তন বিরোধী দলনেতা গুলাম নবি আজাদের নাম সংযুক্ত করা হয়েছে। বিশেষ করে, অধীরের নাম ঘোষণা নিয়ে এর পর বিরোধী শিবিরে তীব্র ক্ষোভ ও সমালোচনার সঞ্চার হয়।
প্রথমদিকে এই বিতর্কে বর্ষীয়ান কংগ্রেস সাংসদ অধীর চৌধুরী মৌন থাকাই শ্রেয় মনে করেছেন। অধীরের তরফে দীর্ঘক্ষণ কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া না গেলেও কমিটির সদস্যদের মনোনয়নকে তীব্র ভাবে নিশানা করেছেন কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) কে সি বেণুগোপাল। গোটা দেশের নির্বাচনী পদ্ধতির খোল নলচে বদলে দেওয়ার উদ্দেশ্যে কেন্দ্রীয় সরকারের উদ্যোগে গঠিত সংশ্লিষ্ট কমিটিতে কংগ্রেস সভাপতি তথা রাজ্যসভার বিরোধী দলনেতা মল্লিকার্জুুন খাড়গের নাম নেই কেন, সরাসরি প্রশ্ন তুলেছেন কে সি বেণুগোপাল। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে অধীর চৌধুরীর নাম কমিটিতে সংযুক্ত করা নিয়ে কোনও উচ্চবাচ্য করেননি বেণুগোপাল।
এদিন বেনুগোপাল তোপ দেগেছেন কেন্দ্রীয় সরকারের অভিপ্রায়কে নিশানা করে৷ তাঁর কথায়, ‘আমরা বিশ্বাস করি একযোগে নির্বাচন সংক্রান্ত উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠন সংসদীয় গণতন্ত্রকে ধ্বংস করার একটি প্রচেষ্টা ছাড়া আর কিছুই নয়৷ সংসদীয় গণতন্ত্রকে অপমান করে রাজ্যসভার বিরোধী দলনেতা মল্লিকার্জুন খড়গেকে কমিটিতে না রেখে প্রাক্তন বিরোধী দলনেতা (গুলাম নবি আজাদ)কে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে৷ খড়গেজির বাদ পড়ার কারণ কী?’
এই মর্মে বেণুগোপালের সংযোজন, ‘সরকার আদানি মেগা কেলেঙ্কারি, বেকারত্ব, মূল্যবৃদ্ধি এবং জনগণের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা গুলি থেকে নজর সরানোর জন্যই এই কৌশলটি নিয়ে এসেছে৷ এর পরে বিষয়টিকে আরও খারাপ করার উদ্দেশে কমিটির ভারসাম্য নষ্ট করার জন্য আক্রমণাত্মক বিরোধীদের বাদ রাখা হয়েছে৷’ বেণুগোপালের এই বয়ান প্রকাশ্যে আসার কিছুক্ষণের মধ্যেই সরাসরি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত শাহকে পত্র লিখে কমিটি থেকে নিজের নাম প্রত্যাহার করে নেন অধীর।
এদিন ‘এক দেশ-এক নির্বাচন’ বিষয়ক নীতি রূপায়ণ সম্ভাবনা খতিয়ে দেখার উদ্দেশে গঠিত প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দের নেতৃত্বাধীন কমিটির সদস্যদের নাম ঘোষণা করে কেন্দ্রীয় সরকার। আট সদস্যের এই কমিটিতে প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি কোবিন্দ ছাড়াও আছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত শাহ, লোকসভায় কংগ্রেসের নেতা অধীর চৌধুরী, জম্মু-কাশ্মীরের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ও প্রাক্তন সাংসদ গুলাম নবি আজাদ, পঞ্চদশ অর্থ কমিশনের প্রাক্তন চেয়ারম্যান এন কে সিং, বিশিষ্ট আইনজীবী হরিশ সালভে, সংবিধান বিশেষজ্ঞ সুভাষ কাশ্যপ এবং প্রাক্তন চিফ ভিজিল্যান্স কমিশনার সঞ্জয় কোঠারি। বিশেষ আমন্ত্রিত সদস্য হবেন কেন্দ্রীয় আইন মন্ত্রী অর্জুন রাম মেঘওয়াল৷ ‘এক দেশ-এক নির্বাচন’ ইস্যুতে সব রাজ্য, নাগরিক সমাজ সহ সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে রিপোর্ট পেশ করবে এই কমিটি। কিন্তু তার আগেই শনিবার রাতে বেনজির রাজনৈতিক সমীকরণের হিসেব কষে যাবতীয় বিতর্ক উস্কে কমিটি থেকে সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নিলেন কংগ্রেসের লোকসভা দলনেতা অধীররঞ্জন চৌধুরী।