প্রসেনজিৎ দাশগুপ্ত, নয়াদিল্লি: ছত্তিসগড় ‘মডেলে’ই রাজস্থানের বিতর্কিত গেহলত-পাইলট জট কাটাতে চায় কংগ্রেস। বুধবার নয়াদিল্লিতে কংগ্রেস সদর দপ্তরে একটানা চার ঘণ্টা আলোচনার পর বিধানসভা ভোটমুখী রাজ্য ছত্তিসগড়ের দুই প্রভাবশালী এবং চির প্রতিদ্বন্দ্বী কংগ্রেস নেতা মুখ্যমন্ত্রী ভূপেশ বাঘেল এবং রাজ্যের প্রবীণ মন্ত্রী টি এস সিংদেও-র মধ্যে ‘সন্ধি’ করিয়েছেন কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়গে এবং রাহুল গান্ধি। এই পদক্ষেপ অত্যন্ত ইতিবাচক বলে দাবি করা হচ্ছে কংগ্রেস সূত্রে৷ রাহুল গান্ধির কথাতেই বিদ্রোহের রাস্তা থেকে সরে এসে টি এস সিংদেও ছত্তিসগড়ের উপ-মুখ্যমন্ত্রী পদ গ্রহণ করতেও সম্মত হয়েছেন বলে দলীয় সূত্রের দাবি৷ অতীতে একইভাবে কর্ণাটক রাজ্যের দুই যুযুধান নেতা মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়া এবং ডিকে শিবকুমারের মধ্যে ‘দূরত্ব’ ঘোচাতে সচেষ্ট হয়েছিলেন খড়গে ও রাহুল। এই প্রসঙ্গেই ফের উঠে এসেছে রাজস্থান প্রসঙ্গ। কংগ্রেসের প্রথমসারির নেতাদের একটা বড় অংশ মনে করছেন ছত্তিসগড়ের ফর্মুলাতেই এবার রাজস্থানে মুখ্যমন্ত্রী অশোক গেহলত ও সচিন পাইলটের ‘অহি-নকুল’ সম্পর্ক মেটানোর চেষ্টা করবে কংগ্রেস হাইকমান্ড।
তবে বিষয়টি এতটাও সহজ নয়। ছত্তিসগড়ের ফর্মুলায় রাজস্থানে সন্ধির ক্ষেত্রে সব থেকে বড় অন্তরায় হতে পারেন মুখ্যমন্ত্রী পদের দাবিদার, বিদ্রোহী কংগ্রেস নেতা সচিন পাইলট নিজে৷ মরু রাজ্যে গত বারের বিধানসভা ভোটে জয়ের পরে পাইলট ভেবেছিলেন তাকেই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী পদে বসানো হবে৷ কিন্তু বাস্তবে তা হয়নি৷ গান্ধি পরিবারের আস্থাভাজন প্রবীণ নেতা অশোক গেহলত-ই মুখ্যমন্ত্রীর কুর্সিতে বসেন। মন্ত্রিসভায় উপ মুখ্যমন্ত্রীর পদে আসীন ছিলেন পাইলট৷ উপ মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে তাঁর করণীয় কিছুই ছিল না বলে প্রকাশ্যে ক্ষোভ জানিয়ে দেড় বছর উপ মুখ্যমন্ত্রী থাকার পরে পদত্যাগ করেন সচিন পাইলট৷ এর পর বিগত তিন বছর ধরে সচিন পাইলটের লাগাতার দাবি ছিল, গেহলতকে সরিয়ে তাকে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী পদে বসানো হোক৷ এই দাবিপূরণের লক্ষ্যে বেশ কয়েকবার কংগ্রেস হাইকমান্ডের উপরে চাপ তৈরির চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছেন সচিন পাইলট৷ গেহলতকে সরিয়ে তাকে মুখ্যমন্ত্রীর আসনে বসানোর জন্য সচিন পাইলটের দাবিকে এতদিনেও মান্যতা দেয়নি কংগ্রেস হাইকমান্ড৷ এই আবহে চলতি বছরের শেষ দিকে মরু রাজ্যের বিধানসভা ভোটকে পাখির চোখ করে এগোতে চাইছে কংগ্রেস হাইকমান্ড৷
উল্লেখ্য, গতবারের বিধানসভায় রাজস্থানের প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি হিসেবে সচিন পাইলট যেভাবে দলের হাল ধরেছিলেন সেই লড়াইয়ের কথা মাথায় রেখেই চলতি বছরের ভোটের আগে ঘুঁটি সাজাতে মরিয়া কংগ্রেস হাইকমান্ড৷ এই লক্ষ্যেই দলের শীর্ষ স্তর চাইছে গেহলত-পাইলট দ্বন্দ্বের দ্রুত অবসান হোক৷ ছত্তিসগড়ে দুই বিবাদমান নেতা ভূপেশ বাঘেল এবং টি এস সিং দেও-র মধ্যে ‘আপোষ’ করা সম্ভব হলে মরু রাজ্য রাজস্থানেও সম্ভব হবে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব মেটানো, বুধবারের পরে বিশ্বাস করতে শুরু করেছেন প্রথম সারির কংগ্রেস নেতাদের অনেকেই৷ কিন্তু এক্ষেত্রে মনে রাখা জরুরি, সন্ধির বিষয়টি অতি স্পর্শকাতর এবং খুব বুঝেশুনে পা ফেলা উচিত। কংগ্রেস শীর্ষ নেতৃত্বের মধ্যস্থতায় উপ মুখ্যমন্ত্রীর পদে বহাল হলে যিনি কেন্দ্রীয় ও রাজ্য কমিটি দলীয় নীতি নির্ধারণী পালন করে চলবেন ও উপ মুখ্যমন্ত্রীর প্রতি সমান সদ্ভাব রাখবেন। অন্যথায় বিক্ষোভের অগ্নিকুণ্ডে ঘৃতাহুতি পড়তে বেশিক্ষণ সময় লাগবে না, ভবিষ্যতে যার ফল হতে পারে মারাত্মক। এই আবহে শেষ পর্যন্ত কী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন মল্লিকার্জুন খড়গে-রাহুল গান্ধিরা সেদিকেই এখন তাকিয়ে গোটা কংগ্রেস শিবির।