প্রসেনজিৎ দাশগুপ্ত, নয়াদিল্লি: ২০২৪-এর আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে মোদির বিরুদ্ধে একজোট হতে গেলে সর্বাগ্রে যাবতীয় ‘ইগো’, আত্মাভিমান বর্জন করতে হবে। দলগত রাজনীতিতে পারস্পরিক মতবিরোধ ভুলে তবেই সর্বাত্মক মোদি বিরোধিতায় নামা উচিত বিরোধী রাজনৈতিক শিবিরের। শুক্রবার ২৩ জুন পাটনার গান্ধি ময়দান সংলগ্ন জ্ঞান ভবনে আয়োজিত হতে চলে সমমনোভাবাপন্ন বিরোধী শিবিরের বৈঠকে এই মর্মেই সুস্পষ্ট বার্তা দিতে চলেছেন তৃণমূল সুপ্রিমো তথা বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, দাবি দলীয় সূত্রের।
আগামী ২৩ জুন ‘হাই ভোল্টেজ’ বিরোধী দলীয় বৈঠককে কেন্দ্র করে সাজো সাজো রব পাটনায়। সেজে উঠেছে গান্ধি ময়দান সংলগ্ন বিলাসবহুল জ্ঞান ভবনও। জেডিইউ সুপ্রিমো তথা বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতিশ কুমার স্বয়ং জ্ঞান ভবনে হাজির হয়ে করছেন আসন্ন অনুষ্ঠানের প্রস্তুতির সমস্ত তদারকি। এরই মধ্যে সংশ্লিষ্ট বৈঠকে আমন্ত্রিত বিভিন্ন বিরোধী শাসিত রাজ্যগুলির মুখ্যমন্ত্রী, কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়গে, কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধি, তাবড় বিরোধী দলের নেতৃত্বের সামনে তৃণমূল সুপ্রিমো কি বার্তা দেন, সেদিকেই লক্ষ্য রাখছে রাজনৈতিক মহল। দলীয় সূত্রের দাবি, পাটনায় সাম্প্রতিক কালের সব থেকে বড় বিরোধী সমাবেশে আরও একবার বিজেপির বিরুদ্ধে একজোট লড়াইয়ে নেমে সার্বিক ঐক্য এবং দলগত সংহতির উপরেই জোর দেবেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
সূত্রের দাবি, এই প্রসঙ্গেই তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর বক্তৃতায় রাহুল গান্ধি, খাড়গে, সীতারাম ইয়েচুরি, কেজরিওয়াল, ডি রাজাদের উপস্থিতিতে বিরোধী দলগুলির পারস্পরিক মতবিরোধ ও ‘ইগো’র লড়াই ভুলে দেশহিতে ও বৃহত্তর স্বার্থে যুক্তরাষ্ট্রীয় পরিকাঠামোর সুরক্ষা, সংসদীয় ঐক্য, মোদি বিরোধিতায় একসুরে কথা বলা, ধর্মীয় অসহিষ্ণুতার বাতাবরণ তৈরির যাবতীয় প্রচেষ্টার বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়া এবং সর্বোপরি সাংবিধানিক মূল্যবোধ রক্ষার উপরে জোর দেবেন। সোমবার নয়াদিল্লিতে বিরোধী শিবির সূত্রে দাবি করা হয়েছে, সব কিছু ঠিক থাকলে তৃণমূল সুপ্রিমোর দেখানো পথেই পাটনায় বসে আগামী দিনের বৃহত্তর রূপরেখা তৈরি করবে মোদি বিরোধিতায় একজোট হতে আগ্রহী দেশের ২০টি-র বেশি রাজনৈতিক দল। পটনার বৈঠকের শেষেই বিরোধী শিবিরের পরবর্তী বৈঠকের দিন ও স্থান জানানো হবে। সূত্রের দাবি, দক্ষিণ ভারতের কোনও জায়গায় হতে পারে বিরোধী শিবিরের পরবর্তী বৈঠক। তাত্পর্যপূর্ণ হল, পটনায় মমতার সফরসঙ্গী হয়ে যাচ্ছেন তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্যসভা দলনেতা ডেরেক ও’ব্রায়েন তথা রাজ্যের শাসক দলীয় প্রভাবশালী এক সংখ্যালঘু নেতা। হিন্দু, মুসলিম, খ্রিস্টান-এই ‘ত্রিধারার’ সমন্বয়ে বিরোধী শিবিরকে সৌহার্দ্য ও ভ্রাতৃত্বেরও বার্তা দিতে আগ্রহী তৃণমূলনেত্রী। ২৩ তারিখ বিরোধী বৈঠকের শেষেই তিনি কলকাতা ফিরে আসবেন, দাবি দলীয় সূত্রের।
সাম্প্রতিক কালের বৃহত্তম বিরোধী সমাবেশে যোগদান করার আগে বিরোধী শিবিরের ভেতরে একে অপরের সঙ্গে সমন্বয় স্থাপনকারীরা লাগাতার চেষ্টা করছেন পারস্পরিক মতপার্থক্য দূর করে বিজেপি বিরোধিতাকেই পাখির চোখ করতে। কাজটা নিঃসন্দেহে কঠিন, কিন্তু অসাধ্য নয় জেনেই করা হচ্ছে এই প্রচেষ্টা, দাবি বিরোধী শিবিরের এক নেতার। সূত্রের দাবি, বিনা বিবাদে এই কাজ করার লক্ষ্যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে পাটনার বৈঠকে সবার আগে চেষ্টা করা হবে বিরোধী শিবিরের সদস্য প্রতিটি দলগুলির মধ্যে ঐক্যমত্য প্রচেষ্টা করা যায় এমন সাধারণ বিন্দু বা ‘কমন ইস্যু’গুলি বেছে নেওয়া। এই মর্মেই প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠতে পারে কেন্দ্রীয় এজেন্সির সক্রিয়তা, যুক্তরাষ্ট্রীয় পরিকাঠামো এবং সাংবিধানিক মূল্যবোধের সুরক্ষা, সংসদীয় ঐক্য, ধর্মীয় অসহিষ্ণুতার বিরুদ্ধে গর্জে ওঠার মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলি। এই ইস্যুগুলিকে হাতিয়ার করে যদি দেশের তাবড় বিরোধী দল একসুরে কথা বলে তাহলেই বিজেপি তথা মোদি সরকারের উপরে প্রভূত চাপ বাড়বে, এমনই দাবি বিশেষজ্ঞ মহলের একাংশের।