সৌরভ দেব, জলপাইগুড়ি: বছর পাঁচেক আগে সরকারি টাকায় বাড়ি তৈরির কাজ শুরুর সময় কেউ ভাবতেই পারেননি যে একসময় টাকার অভাবে থমকে থাকবে স্বপ্নের বাড়ি তৈরির কাজ। হাউজিং ফর অল প্রকল্পের প্রথম কিস্তির টাকা পাওয়ার পরই বাড়ি তৈরির কাজ শুরু হলেও এখনও সমস্ত টাকা না মেলায় জলপাইগুড়ি পুরসভা এলাকায় অর্ধসমাপ্ত হয়ে রয়েছে একাধিক উপভোক্তার বাড়ি। অনেকেই দ্রুত বাড়ি তৈরির কাজ শেষ করার জন্য ঋণও নিয়ে কাজ করিয়েছেন। ভেবেছিলেন কিস্তির টাকা পেলে ঋণ পরিশোধ করে দেবেন। কিন্তু বাস্তবে তা হয়নি। এখন প্রতি মাসে ঋণের কিস্তির টাকা মেটাতে হিমসিম খেতে হচ্ছে তাঁদের। উপভোক্তাদের দাবি, এতদিনে তাঁদের সবক’টি কিস্তির টাকা পাওয়ার কথা থাকলেও বাস্তবে কেউ এক কিস্তির, আবার কেউ দুই বা তিন কিস্তিরই টাকা পেয়েছেন। অবিলম্বে ওই প্রকল্পের বাকি কিস্তির টাকা মিটিয়ে দেওয়ার দাবিতে সরব হয়েছেন উপভোক্তারা।
সমস্যার কথা কার্যত স্বীকার করে নিয়েছে জলপাইগুড়ি পুরসভা কর্তৃপক্ষ। পুরসভার হাউজিং ফর অল প্রকল্পের দায়িত্বে থাকা চেয়ারম্যান পারিষদ স্বরূপ মণ্ডল বলেন, ‘নতুন যাঁরা আবেদন করেছেন, তাঁদের প্রথম কিস্তির ৪০ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে। পুরোনোদের কয়েকটি কিস্তির টাকা বাকি রয়েছে। আমাদের কাছে পর্যাপ্ত টাকা এলেই তা মিটিয়ে দেওয়া হবে।’
এ বিষয়ে কংগ্রেস কাউন্সিলার অম্লান মুন্সি বলেন, ‘আমি বিষয়টি নিয়ে পুর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলতে গেলে আমাকে কেন্দ্রীয় বঞ্চনার কথা জানানো হয়। যদি কেন্দ্রের বঞ্চনার কারণেই পুরোনো উপভোক্তাদের টাকা পেতে সমস্যা হয়ে থাকে, তাহলে আমরা উপভোক্তাদের সঙ্গে নিয়ে জনপ্রতিনিধিরা কেন্দ্রের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামছি না কেন। এক্ষেত্রে পুরসভার সমস্যা কোথায়, তা পরিষ্কার করে বলতে হবে।’ শহরের ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা সুজয় বণিক নামে এক উপভোক্তা জানান, তিনি পরপর তিনটি কিস্তির টাকা পেয়েছিলেন। নিজের যাবতীয় সঞ্চয় লাগিয়ে বাড়ির বাকি কাজ শেষ করার চেষ্টা করলেও এখনও কিছু কাজ বাকি রয়েছে। শেষ পর্যায়ের কাজের বিল প্রায় এক বছর আগে জমা করলেও আর কোন টাকা তাঁর অ্যাকাউন্টে ঢোকেনি। তিনি বলেন, ‘আমার ছোট একটি ব্যবসা রয়েছে। নিজের যা ছিল, বাড়ি তৈরিতে সবই লাগিয়েছি। এখন শেষ দুই কিস্তির এক লক্ষ টাকা পেলে তবেই বাড়ির কাজ শেষ করতে পারব।’
একই পরিস্থিতি ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা শুভঙ্কর ঘোষেরও। তিনিও শেষ দুটি কিস্তির টাকা পাননি। গোপাল চন্দ নামে এক উপভোক্তা জানান, ‘ঋণ নিয়ে তাড়াতাড়ি বাড়ি তৈরির কাজ করেছি। ভেবেছিলাম কিস্তির টাকাটা পেলে ঋণ শোধ করব। কিন্তু তা হল কোথায়। উলটে ঋণের কিস্তি দিতে হিমসিম খেতে হচ্ছে। এখন মনে হচ্ছে সরকারি ঘরের আশা না করে পুরোনো ঘরে থাকলে শান্তিতে থাকতে পারতাম।’