রাকেশ শা ও দেবাশিস দত্ত, ঘোকসাডাঙ্গা ও পারডুবি: প্রথাগত প্রক্রিয়ার বাইরে চাষাবাদে নয়া প্রযুক্তির ব্যবহারে লাভের মুখ দেখছেন কৃষকরা। তাঁদের দেখাদেখি এখন অনেকেই নয়া পদ্ধতিতে চাষ করে অন্যদের দিশা দেখাচ্ছেন। কোচবিহারের (Cooch Behar) মাথাভাঙ্গা ২ নম্বর ব্লকের কয়েকজন কৃষক অসময়ে নানা শাকসবজি, ফুল ফলিয়ে লাভ পেয়েছেন। ওই ব্লকের লতাপাতা, পারডুবি, বড় শৌলমারি, ফুলবাড়ি সহ বেশ কিছু গ্রামে গ্রিনহাউসে বহু কৃষক চাষাবাদ করছেন।
উত্তরবঙ্গের প্রতিকূল আবহাওয়া ও জলবায়ু চাষাবাদের ক্ষেত্রে ঝুঁকিবহুল। তাই, কৃষকরা কৃত্রিমভাবে গ্রিনহাউস বানিয়ে অসময়ে নানা প্রজাতির ফুল, শাকসবজির চাষ শুরু করেছেন। ব্লকের মাটিয়ারকুঠিতে গ্রিনহাউস তৈরি করে সাগর পান্ডে জারবেরা, অর্কিড সহ নানা প্রজাতির ফুলের চাষ করে লাভের মুখ দেখেছেন। তিনি জানান, সৌদি আরব, ইজরায়েলের পদ্ধতিতে লোহার পাইপের খুঁটির উপরে ও চারদিকে ১৮০ থেকে ২০০ মাইক্রনের পলিথিন শিট দিয়ে গ্রিনহাউস তৈরি এই চাষের বিশেষত্ব। সেখানেই আধুনিক পদ্ধতিতে ফুল চাষ করে তিনি স্বনির্ভর হয়েছেন। ঘোকসাডাঙ্গা, উনিশবিশা, পারডুবি, বড় শৌলমারি, ফুলবাড়ি সহ মাথাভাঙ্গা ২ নম্বর ব্লক কোচবিহার জেলা তথা রাজ্যে কৃষিনির্ভর এলাকা হিসেবে পরিচিত। এখানে কলকারখানা না থাকায় কৃষিই প্রধান জীবিকা।
ধান, পাট, আলু প্রধান ফসল হলেও এখন গ্রিনহাউসে শাকসবজিরও চাষ হচ্ছে। কোচবিহার জেলা উদ্যান পালন বিভাগের সহায়তায় বাঁশের তৈরি গ্রিনহাউস ও শেডে অসময়ের সবজির প্রদর্শনীক্ষেত্র তৈরি হয়েছে মাথাভাঙ্গা ২ নম্বর ব্লকের নানা এলাকায়। সাগর পান্ডে জানান, বাবা শখে ফুলের চাষ করেছিলেন। ফুল চাষ অত্যন্ত আনন্দদায়ক। আর্থিক ঝুঁকিপূর্ণ সবজিতে নয়, ফুলেই মানসিক আনন্দ। গত প্রায় চার বছর ধরে জারবেরা, অর্কিড, ইনকা, গাঁদা ইত্যাদি ফুলের চাষে তিনি ব্যাপক সাফল্য পেয়েছেন বলে জানান। তাঁর চাষ করা ফুল শিলিগুড়ি, অসম সহ প্রতিবেশী কয়েকটি জেলা ও রাজ্যে রপ্তানি হচ্ছে। ব্লক কৃষি দপ্তর সূত্রে দাবি, অনেকেই স্বনির্ভরতার লক্ষ্যে আধুনিক পদ্ধতিতে ফুল চাষকে বেছে নিচ্ছেন।
মাথাভাঙ্গা সুফল ফার্মার প্রোডিউসার কোম্পানি লিমিটেডের চিফ এগজিকিউটিভ অফিসার (সিইও) দীপঙ্কর সরকার জানান, এখন চাষ জমি কমেছে। তাই, কৃষকরা গ্রিনহাউস ও শেড বানিয়ে অসময়ের ফুল সহ শাকসবজি চাষ করছেন। শুভঙ্কর সরকার, অনিমেষ সরকাররা জানান, কোচবিহার জেলা উদ্যান পালন বিভাগের সহায়তায় বাঁশের গ্রিনহাউস বর্ষায় টমেটো, ধনেপাতা, কপি ও নানা সবজির চারা উৎপাদনে উপযোগী। এখনও অসময়ের সবজির বেশিটাই ভিনরাজ্য থেকে আসে। গ্রিনহাউসে সবজি চাষে বেশি লাভ মেলে বলে তাঁদের দাবি।
ব্লকের সহকারী কৃষি অধিকর্তা ডঃ মলয়কুমার মণ্ডল বলেন, ‘গ্রিনহাউস ও শেডে উৎপাদিত ফসল বহুক্ষণ সতেজ থাকে। কারণ, অসময়ে বাঁধাকপি, স্কোয়াশ, মুলো ইত্যাদি পাহাড় সহ নানা এলাকা থেকে বাজারে আসতে আসতে সতেজতা হারায়। আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারে স্বল্প খরচে বেশি ফলন পেয়ে চাষিরা উপকৃত হচ্ছেন।’ গ্রিন শেড, গ্রিনহাউস, পলিহাউস পদ্ধতিতে চাষে সূর্যের তাপ সরাসরি গাছ বা ফসলে লাগে না। ফলে, শীতের ফুল গরমেও চাষ সম্ভব। এতে জলের অপচয় রোধ, নিয়ন্ত্রিত সার ব্যবহার ও দুর্যোগের প্রকোপ ঠেকানো সম্ভব। যার জেরে এখন জেলার নানা হাটে মিলছে অসময়ে শাকসবজি।