গৌতম দাস, তুফানগঞ্জ: ৫জি ইন্টারনেটের যুগেও যেন তুলনামূলকভাবে ঠিক ততটাই পিছিয়ে থাকার এক নজির।
কোচবিহারের (Cooch Behar) তুফানগঞ্জ-১ (Tufanganj) ব্লকের ধলপল-১ গ্রাম পঞ্চায়েতের শালবাড়ি মোড় এলাকায় তুফানগঞ্জ-ভাটিবাড়ি রাজ্য সড়কের ধারে পূর্ত দপ্তরের জমিতে মাছের কার্টন কেটে তা বাঁশের কামি দিয়ে বেঁধে ‘ঘর’ তৈরি হয়েছে। সেই কার্টনের উপর কালো ত্রিপল, দড়ি দিয়ে বাঁধা ঘরের চাল। সামনে গিয়ে জিজ্ঞেস করতেই সেই ঘরে থাকা কিশোরী বলে উঠল, ‘এটিই আমাদের একমাত্র ঠিকানা।’ আরও কিছু জানতে চাওয়ায় তার চোখে জল ছলছল। নাম সুপ্রিয়া বর্মন। ধলপল হাইস্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্রী।
তার দাদা সুব্রতরাজ বর্মন এ বছর উচ্চমাধ্যমিক পাশ করে আইটিআই-তে পড়ছে। ইচ্ছা রেলে চাকরি করার। বাবা বেণু বর্মন সাইকেল নিয়ে অল্প কিছু মাছ গ্রামে গ্রামে বিক্রি করেন। ১৫-১৬ বছর আগে বেণু এখানে ত্রিপলের ঘর বানিয়ে থাকা শুরু করেন। আগে স্বামী-স্ত্রী দুজনে শিশুদের কোলে নিয়ে ভিক্ষে করে সংসার চালাতেন। স্ত্রী হঠাৎ একদিন নিখোঁজ হয়ে যান। যা জোটে তা দিয়েই রান্না করে দিনে দু’বার, কোনওদিন একবার খেয়েই পরিবারটি দিন কাটায়। শৌচালয় ও পানীয় জলের ঠিকঠাক ব্যবস্থা নেই। শোওয়ার জন্য বাঁশের মাচা রয়েছে। মোমবাতির আলোয় কখনও বা পাশের গ্যাস অফিসের আলোয় ভাইবোনের পড়াশোনা চলে। মোম কেনার টাকা জোগাড় না হলে সেদিন বই বন্ধ থাকে বলেই সুপ্রিয়া জানায়। তবুও ভাইবোন পড়াশোনার কাছে হার মানেনি। সুব্রত জানাল, প্রতিনিয়ত তাদের জীবন সংগ্রাম চলছে। মাঝেমধ্যে বিভিন্ন কাজ করে সে সংসারের হাল ধরার চেষ্টা করে। বর্ষাকালে ঘরে জল জমে থাকায় উনুনে আগুন ধরে না। সেই সময় একদিন অন্তর হোটেলে একবেলা খেয়ে থাকতে হয়। প্রতিবেশীরা মাঝেমধ্যে অবশ্য খাবার ইত্যাদি দিয়ে সহযোগিতা করেন।
বিজেপির তুফানগঞ্জ-১ মণ্ডল সভাপতি যুগলকিশোর দাসের বক্তব্য, ‘তৃণমূল কংগ্রেস বহু উন্নয়ন করেছে। অথচ এতবছর ধরে রাস্তার ধারে থাকা একটি পরিবারের পুনর্বাসন করতে পারেনি।’ জমির ব্যবস্থা হলে তাঁদের তরফে প্রধানমন্ত্রীর আবাস যোজনার ব্যবস্থা করে দেওয়া হবে বলে যুগল জানান। তৃণমূলের ধলপল-১ অঞ্চল সভাপতি পরিমল দাস বলেন, ‘খোঁজ নিয়ে দেখে আমরা ওই পরিবারটিকে সহযোগিতা করব।’ পরিবারটিকে সহযোগিতার বিষয়ে ধলপল-১ গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান সবিতা সরকারও আশ্বাস দিয়েছেন।