গৌরহরি দাস ও দেবদর্শন চন্দ, কোচবিহার: কোচবিহারের (Cooch Behar) ঐতিহ্যবাহী আনন্দময়ী ধর্মশালা কার্যত বিজেপির ফ্লেক্স তৈরির কারখানা হয়ে উঠেছে। বুধবার সেখানে গিয়ে দেখা গেল, ধর্মশালার ভেতরে মাঠে বসে কয়েকজন কাগজের ফ্লেক্স তৈরি করছেন। রোল থেকে কাটা বড় বড় সেই কাগজের ফ্লেক্সগুলিকে ধর্মশালার ভেতরে গোটা মাঠে বিছিয়ে দেওয়া হয়েছে। এরপর সেই ফ্লেক্স-পোস্টারগুলিকে আলাদা আলাদা করে ফের রোল করে ধর্মশালার ভেতরে দাঁড়ানো টোটোতে তোলা হচ্ছে।
প্রশ্ন উঠেছে, যে আনন্দময়ী ধর্মশালার সঙ্গে কোচবিহারবাসীর আবেগ ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে রয়েছে, সেই ধর্মশালায় নির্বাচনি আচরণবিধি চলাকালীন কীভাবে একটি রাজনৈতিক দলের কর্মকাণ্ড চলতে পারে? প্রশাসনই বা কীভাবে ধর্মশালার ভেতরে এমন রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড হওয়ার অনুমতি দিল?
কোচবিহারের জেলা শাসক অরবিন্দকুমার মিনা তো এব্যাপারে কোনও খবরই রাখেন না। তবে খোঁজ নিয়ে দেখার আশ্বাস দিয়েছেন।
জেলা শাসকের দপ্তরের এক আধিকারিকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, গত ১০ এপ্রিল একটি অ্যাড এজেন্সির ৮ জন আনন্দময়ী ধর্মশালায় থাকার জন্য ডর্মিটরি ভাড়া নিয়েছেন। সেই অ্যাড এজেন্সির লোকজন ফ্লেক্সগুলি ওখানে বানাচ্ছেন। পরে তাঁদের সেই কাজ করতে নিষেধ করা হয়েছে। আরও জানা গিয়েছে, ১২ এপ্রিল পর্যন্ত ধর্মশালায় তাঁদের বুকিং রয়েছে। শুক্রবার রাতে তাঁরা চলে গিয়েছেন। তবে এভাবে ধর্মশালায় নির্দিষ্ট একটি দলের কাজ চলায় জেলা প্রশাসন ক্ষুব্ধ। ধর্মশালার দায়িত্বে যাঁরা ছিলেন তাঁদের শোকজ করা হবে। উত্তর সন্তোষজনক না হলে তাঁদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বিতর্ক যেন পিছু ছাড়ছে না আনন্দময়ী ধর্মশালার। সম্প্রতি সেখানে গোটা দুয়েক বিয়েবাড়ির অনুষ্ঠান সহ বেশ কয়েকটি সামাজিক অনুষ্ঠান হয়। যাকে কেন্দ্র করে কোচবিহারের বিভিন্ন সংগঠন ক্ষোভে ফেটে পড়েছিল। বিষয়টি নিয়ে জেলা শাসকের কাছেও বিভিন্ন সংগঠনের তরফে একাধিক লিখিত অভিযোগ জমা পড়েছিল। এই অবস্থায় গত ১০ এপ্রিল ধর্মশালায় গিয়ে দেখা যায়, একটি এজেন্সির লোকজন ধর্মশালার মাঠে বসে বিজেপি প্রার্থীর ফেস্টুন-ব্যানার বানানোর কাজ করছেন। একটি ধর্মশালায় এধরনের কার্যকলাপ হতে দেখে বিভিন্ন সংগঠন ক্ষোভে ফেটে পড়েছে। কোচবিহার রয়্যাল ফ্যামিলি সাকসেসর্স ওয়েলফেয়ার ট্রাস্টের মুখপাত্র কুমার মৃদুলনারায়ণ বলেন, ‘ঐতিহ্যবাহী এই ধর্মশালাটিকে রাজনৈতিক কার্যকলাপের বাইরে রাখা উচিত।’
মহারাজা নৃপেন্দ্রনারায়ণের অকাল প্রয়াত ভগিনী পাঙ্গার রানি আনন্দময়ীর স্মৃতিতে ১৮৮৯ সালের ৮ জুলাই এই ধর্মশালাটি শিলান্যাস হয়। প্রতিষ্ঠা হয় ১৮৯০ সালের ৪ মে। আগে এখানে বিনাব্যয়ে একদিন থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা ছিল। বিশেষ প্রয়োজনে অতিরিক্ত সময় থাকার অনুমতিও পাওয়া যেত। সাধুসন্ত এবং অভাবগ্রস্তদের সিধা দেওয়ার প্রথাও ছিল। তবে এখন আর এখানে বিনা পয়সায় থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা নেই।