বর্ধমানঃ রাজ্যজুড়ে চোখ রাঙাচ্ছে ডেঙ্গি। আর তারই মধ্যে ফের হানা দিয়েছে ‘করোনা’। সেই করোনার হানাতেই পর পর তিনদিনে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যু হল তিনজনের। মৃত তিনজনের ডেথ সার্টিফিকেটেই উল্লেখ রয়েছে ‘করোনা’ আক্রান্ত হওয়ার কথা। যদিও করোনা আক্রান্ত হওয়ার কারণেই যে তিনজনের মৃত্যু হয়েছে এমনটা মানতে নারাজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। তাদের দাবি তিন জনই বিভিন্ন রোগে দীর্ঘদিন ধরে ভুগছিলেন। এ সব দেখে বিরোধীরা বলছে, করোনায় মৃত্যুর ঘটনা ধামাচাপা দিতেই স্বাস্থ্য দপ্তরের নির্দেশে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ভিন্ন কথা বলছেন।
বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে সূত্রে জানা গেছে, রবিবার সন্ধ্যায় ভাতারের ৬০ বছরের এক বৃদ্ধ বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মারা যান। তিনি দীর্ঘদিন কিডনির সমস্যায় ভুগছিলেন। হাসপাতালে করোনা পরীক্ষার পর তার রিপোর্ট ‘পজিটিভ আসে’। রবিবার সন্ধ্যায় তিনি মারা যান।
এই মৃত্যুর ঘটনার ২৪ ঘন্টা কাটতে না কাটতেই সোমবার সকালে হাসপাতালে মৃত্যু হয় ৬১ বছর বয়সী এক প্রবীনের। তাঁর বাড়ি বর্ধমানের দেওয়ানদিঘী থানা এলাকায়। কয়েকদিন আগে তিনি বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। চিকিৎসা চলাকালীন তাঁর করোনা রিপোর্ট ‘পজিটিভ’ আসে। এর পর মঙ্গলবার সকালে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মারা যান আরও ব্যক্তি। যার রক্তে করোনা সংক্রমণ ধরা পড়ে। ২৫ বছর বয়সী এই মৃত যুবকের বাড়ি বীরভূমের কীর্ণাহারে। পড়ে গিয়ে তিনি গুরুতর চোট পেয়েছিলেন। চিকিৎসার জন্য তিনি বোলপুর মহকুমা হাসপাতাল ভর্তি হয়েছিলেন। সেখান থেকে রেফার হয়ে ২৪ জুলাই তিনি বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হন। ২৮ জুলাই বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে তাঁর করোনা সংক্রমন ধরা পড়ে। মঙ্গলবার সকালে তাঁর মৃত্যু হয়।
করোনা আক্রান্ত হওয়ার কারণেই যে এই তিনজনের মৃত্যু হয়েছে এমনটা অবশ্য মানতে চান না বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ কৌস্তভ নায়েক। তিনি দাবি করেন, ভাতার ও দেওয়ান দিঘীর যে দু’জন বাসিন্দা বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন তাঁদের দুজনেরই বয়স ষাটের উপর। দু’জনেরই কিডনিতে সমস্যার কারণে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। তার উপর জ্বর আসছিল। তাই অ্যান্টিজেন টেস্টে করোনা রিপোর্ট ‘পজিটিভ’ আসে। আর দেওয়ানদিঘীর বাসিন্দা ‘এনকেফেলাইটিস’ নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। তাঁর শারীরিক অবস্থা অত্যন্ত খারাপ ছিল। জ্বরও আসছিল। তাঁর অ্যান্টিজেন টেস্টে করানো হলে রিপোর্ট ’পজিটিভ’ আসে। একই ভাবে বীরভূমের কীর্ণাহারে রোগীরও অ্যান্টিজেন টেস্টের রিপোর্ট ’পজিটিভ’ আসে।
অধ্যক্ষ কৌস্তভ নায়েকের বক্ত্যব্য, ‘অ্যান্টিজেন টেস্টে করোনা পজিটিভ হয়েছে। এটা হতেই পারে। এরকম করোনা আক্রান্ত রুগী হাসপাতালে আরও বেশ কয়েকজন ভর্তি আছে। আরটিপিসিআর পরীক্ষা করলে এদের রিপোর্ট করোনা পজিটিভ নাও আসতে পারত। তাই করোনা আক্রান্ত হয়েই তিনজনের মৃত্যু হয়েছে একথা বলা যাবে না’।
অধ্যক্ষ এমনটা জানালেও তিন মৃতর ডেথ সার্টিফিকেটে উল্লেখ রয়েছে করোনা আক্রান্তের কথা। বিরোধীদের দাবি, করোনার বিষয়টিই কোন কারণে মেডিক্যাল কলেজ অধ্যক্ষ কৌস্তভ নায়েক ধামাচাপা দিতে চাইছেন। কিন্তু ’ডেথ সার্টিফিকেটই’ বলে দিচ্ছে যে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে করোনা সক্রিয় আছে। যে তিন জন মারা গেলেন তাঁরা প্রত্যেকেই হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর করোনা আক্রান্ত হয়েছেন।
জেলা বিজেপি নেতা মৃত্যুঞ্জয় চন্দ্র এই প্রসঙ্গে বলেন, “রাজ্যে এখনও পর্যন্ত কতজন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছে, কতজনই বা মারা গিয়েছেন, সেই তথ্য সরকার আড়াল করছে। স্বাস্থ্য দপ্তরও পরিষ্কার করে কিছু জানাচ্ছে না। একই ভাবে রাজ্য স্বাস্থ্য দপ্তরের নির্দেশেই হয়ত ডেথ সার্টিফিকেটে উল্লেখ থাকা সত্ত্বেও বর্ধমান হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ করোনায় মৃত্যুর কথা ধামাচাপা দিতে চাইছে“।